Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: khyrul on June 20, 2016, 02:13:36 PM
-
বাংলাকে রাষ্টভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এই কমিটির আহবায়ক ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং এম এ আজিজ।
৫২’র ২১শে ফেব্রুয়ারীতে চট্টগ্রামের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হরতাল পালিত হয়। ঢাকায় ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষনের খবর আসে চট্টগ্রামে অবস্থানরত কেন্দ্রীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সাংবাদিক-সাহিত্যিক খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসের কাছে। জ্বর ও জলবসন্তে আক্রান্ত ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। শ্রমিক নেতা চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা এম এ আজিজ তাই আহবায়ক হিসাবে কাজ করছিলেন। গুলিবর্ষনের খবরটা শোনার পর তিনি রচনা করেন “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” নামের কবিতা।
অসুস্থতার জন্য মাহবুব উল আলম চৌধুরীর হাতে লেখার ক্ষমতা ছিলো না তখন। তিনি বলে যাচ্ছিলেন কবিতার পংক্তিগুলো আর সহকর্মী ননী ধর তা লিখে নিলেন। এটি হলো একুশের প্রথম কবিতা। আন্দরকিল্লায় কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসে কবিতাটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশের দায়িত্ব নিলেন খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস। উদ্দেশ্য ছিলো সারারাত প্রেসে কাজ করে পরদিন সকালে গোপনে পুস্তিকাটি প্রকাশ করা। এক ফর্মার এই পুস্তিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছিলো শিরোনাম “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” এবং নিচে কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নাম। প্রকাশক হিসাবে নাম ছিলো কামালউদ্দিন খানের এবং মুদ্রাকর হিসাবে প্রেসের ম্যানেজার দবিরউদ্দিন আহমদের।
শীতের রাতে যখন কম্পোজ ও প্রুফের কাজ প্রায় শেষের দিকে তখন পুলিশ সুপার আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ প্রেসে হানা দেয়। প্রেসে উপস্থিত কর্মচারীদের বুদ্ধিতে লুকিয়ে যান খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং রক্ষা পায় সম্পুর্ণ কম্পোজ ম্যাটার। পুলিশ তন্ন তন্ন করে খোঁজ করে ও কিছুই পেল না। কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের কর্মচারীরা গোপনে পুস্তিকাটির প্রায় ১৫ হাজার কপি বিক্রয় ও বিতরনের জন্য মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের কাজ শেষ করে। ঢাকায় গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র চট্টগ্রামে সাধারন ধর্মঘট পালিত হয়। লালদিঘি ময়দানে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার জনসমুদ্রে “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। কবিতা শুনে বিক্ষুব্ধ জনতা শ্লোগান দেয় “চল চল ঢাকা চল, খুনি লীগশাহীর পতন চাই”, “লীগ নেতাদের ফাঁসি চাই, নুরুল আমিনের কল্লা চাই”। এর কয়েকদিন পরেই সেসময়কার মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে।
১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকায় ছাপা হয় কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।চৌধুরী জহুরুল হকের মতে কবিতাটি দীর্ঘ সতেরো পৃষ্ঠার নয়—১/৮ ডিমাই সাইজের মলাট সহ (২+৬) আট পৃষ্ঠার। কবিতাটি সতেরো পৃষ্ঠা বলে বারবার উচ্চারিত হওয়ার কারণ বোধ হয় এই যে, হাতের লেখা পাণ্ডুলিপিটি হয়তো সতেরো পৃষ্ঠার ছিল। বইটির দাম রাখা হয় দুই আনা।
দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ থাকার কারণে এক সময় কবিতাটি হারিয়ে যায়। এই কবিতা নিয়ে নানা সময় লিখেছেন ড. আনিসুজ্জামান, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (কবিতার প্রথম দুই শ্রোতার একজন), ড. রফিকুল ইসলাম, ড. হায়াৎ মামুদ, বশীর আল হেলাল সহ অনেকে। দীর্ঘদিন পরে ১৯৯১ সালে অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হকের গবেষণার মাধ্যমে তার বই প্রসঙ্গ : একুশের প্রথম কবিতা রচনা করেন। উল্লেখ্য, চৌধুরী জহুরুল হক এই কবিতার দুর্লভ কপি উদ্ধার করেন প্যারামাউন্ট প্রসেস এন্ড প্রিন্টিং ওয়র্কসের স্বত্বাধিকারী আবু মোহাম্মদ তবিবুল আলমের কাছ থেকে। তবিবুল আলম সংগ্রহ করেছিলেন কম্পোজিটার নুরুজ্জামান পাটোয়ারীর কাছ থেকে।
ড. আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘একুশের প্রথম কবিতা যে মাহবুব উল আলম চৌধুরী লিখলেন, তা হয়তো এক আকস্মিক ঐতিহাসিক ঘটনা। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কবিতা তাঁকে লিখতেই হতো–তাঁর সমগ্র জীবনাচরণ ও সাহিত্যচর্চার ধারায় তা ছিল অনিবার্য।’
(তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে)
-
It's a memorable poem of the prominent history of Bangladesh
-
Thanks a lot for the informative post.