Daffodil International University

Entrepreneurship => Successful Entrepreneur => Topic started by: Lazminur Alam on July 02, 2016, 05:27:26 PM

Title: The Mystery of Success of one of the Rich Men of the World.
Post by: Lazminur Alam on July 02, 2016, 05:27:26 PM
ওয়ারেন বাফেটের বাবা হাওয়ার্ড বাফেট ছিলেন শেয়ারবাজারের একজন বিনিয়োগকারী। ছোটবেলায় দেখতেন বাবা ওয়ালস্ট্রিট থেকে একগাদা কাগজপত্র নিয়ে রাতে বাসায় ফিরছেন। একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর বাবা আসলে কী করেন? মায়ের উত্তর ছিল, ‘ইনভেস্টর’।
ওয়ারেন বাফেটের জন্ম ১৯৩০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার ওমাহায়। ছেলেবেলায় সব শিশুরই নায়ক তার বাবা। বাফেটেরও তাই। তখনই ঠিক করে ফেললেন তাঁকেও ইনভেস্টর হতে হবে। যখন ছয়-সাত বছর বয়স, স্কুলের খাতায় নিজের নাম লিখে রেখেছিলেন ‘ওয়ারেন বাফেট: ফিউচার ইনভেস্টর’। বাফেট সেটাই হয়েছেন। তাঁর বয়সের অন্য শিশু-কিশোরেরা যখন ব্যস্ত ছিল খেলার মাঠে, তিনি তখন ব্যস্ত থেকেছেন অর্থ উপার্জনে।
দাদার ছিল গ্রোসারি বা মুদির দোকান। বাফেট সেই বয়সেই নিজের সম্পদমূল্য বাড়াতে সপ্তাহে ৫ ডলার বেতনে দাদার দোকানে কাজ নেন। মাত্র ছয় বছর বয়সেই দাদার দোকান থেকে ২৪ সেন্টে ৬ প্যাকেট কোকাকোলা কিনে একটু দূরে গিয়ে বিক্রি করে ৫ সেন্ট মুনাফা করেছিলেন। এরপর কিছু অর্থ জমিয়ে ১১ বছর বয়সে ৩৮ ডলার করে সিটিজ সার্ভিসের ছয়টি শেয়ার কেনেন তিনি। এর তিনটি দিয়ে দেন বোনকে। তবে জীবনের প্রথম শেয়ার ব্যবসা শুরুতে হতাশ করেছিল তাঁকে। কিছুদিনের মধ্যেই শেয়ারের দাম কমে ২৭ ডলার হয়ে যায়। কিন্তু তিনি অপেক্ষা করেছেন। শেয়ারের দর বেড়ে ৪০ ডলার হতেই বিক্রি করে দেন। তিনি এখনো মানেন, সেটি ছিল তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, কিছুদিনের মধ্যেই ওই শেয়ারের দাম আরও বেড়ে ২০০ ডলার হয়ে যায়। সেই ঘটনা থেকে তিনি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা পেয়েছিলেন। আর তা হলো অধ্যবসায়, যার প্রতিফলন পুরো জীবন জুড়েই ছিল।
কিন্তু তিনটি শেয়ার কিনে সামান্য লাভে সন্তুষ্ট ছিলেন না বাফেট। লক্ষ্য ছিল আরও বড়। পুঁজি বাড়াতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুইংগাম, পত্রিকা ও কোকাকোলা বিক্রি করা শুরু করেন। স্থানীয় এক সেলুনে পোকার খেলার যন্ত্রও বসান তিনি। এতে কিছু আয় বাড়লে বাবা ব্যাংকে একটি হিসাব খুলে দেন। একসময় ব্যাংক থেকে নোটিশ এল যে ওয়ারেন বাফেটের নামে কিছু ডলার জমা পড়েছে। ফলে এখন আয়কর দিতে হবে। সেই সময়ে ওয়ারেন বাফেটের বাবা ছিলেন একজন কংগ্রেসম্যান। শেয়ার ব্যবসা ছেড়ে নির্বাচন করে জিতেছেন। ছেলেকে বললেন আয়কর দিতে। কারণ, তখন থেকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখতে হবে। বাফেটের বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর। বয়স কম হওয়ায় স্থানীয় আয়কর বিভাগ ৩৫ ডলার ফেরত দিলে বাফেট তা দিয়ে একটি বাইসাইকেল কিনেছিলেন। সেই বাইসাইকেল তিনি চালাতেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও।

২.
ওয়ারেন বাফেটের এখন অনেকগুলো পরিচয়। তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৬৬৪ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৫ লাখ ২৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। একটু মনে করিয়ে দিই আমাদের নতুন বাজেটটি হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার।
ওয়ারেন বাফেট এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনহিতৈষীর একজন। তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশই দানের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি দান করেছেন ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার।
যারা শেয়ারবাজারে আজ বিনিয়োগ করে কালই লাখপতি হতে চান তাঁদের অবশ্যই ওয়ারেন বাফেটের জীবনীটা পড়ে নেওয়া উচিত। কারণ, কেবল শেয়ার ব্যবসা করেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী হয়েছেন।
ওয়ারেন বাফেট নিয়ে একটা মধুর বিতর্ক আছে। তিনি বিনিয়োগকারী হিসেবে বেশি ভালো নাকি ব্যবস্থাপক হিসেবে। বেশির ভাগই মনে করেন, বাফেট যত ভালো বিনিয়োগকারী, তার চেয়েও ভালো ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক। ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তা ওয়ারেন বাফেটের চেয়ে ভালো কে আর জানে। তারপরও যাদের মনে সন্দেহ আছে তাদের জন্য বলছি, বিল গেটসও ওয়ারেন বাফেটের কাছ থেকেই ব্যবসা পরিচালনা পরামর্শ নেন।
ইউএসএ টুডে ২০০৮ সালে হিসাব দিয়ে বলেছিল ওয়ারেন বাফেটকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা ৪৭। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে এর চেয়ে বেশি বই রয়েছে কেবল দালাই লামাকে নিয়ে। এর পরের আট বছরে নিঃসন্দেহে বইয়ের সংখ্যা আরও অনেক বেড়েছে। ২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিন ওয়ারেন বাফেটকে সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষদের একজন বলেছিল। সেই প্রভাব একটুও কমেনি।
ওয়ারেন বাফেট এখন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। ১৯৬৫ সালে ডুবতে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি কিনেছিলেন। আর এখন প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ ৫৫ হাজার ২২৫ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে নিট আয় ছিল ২ হাজার ৪০৮ কোটি ডলার। এখানে কাজ করেন ৩ লাখ ৩১ হাজার মানুষ। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম তালিকাভুক্ত হোল্ডিং কোম্পানি।

৩.
ওয়ারেন বাফেটের সাফল্যের রহস্য কী? বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫টি। কোনো প্রতিষ্ঠানেই নাক গলান না তিনি। তাঁর কাজ কেবল বার্ষিক সভায় যোগ দেওয়া। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা সিইও নিয়োগ দেওয়া আছে। তাদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন সব।
বাফেটের নীতি হলো, প্রতিষ্ঠানকে প্রধান নির্বাহী-ম্যানেজারের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। সুতরাং মূল কাজ হচ্ছে একজন যোগ্য সিইও বা ম্যানেজার খুঁজে বের করা। বিশেষ মানবিক গুণ থাকলেও বুদ্ধিহীন লোকের পক্ষে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আরামপ্রিয়দের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েন তাঁরা। আন্তরিকতা কম থাকা ব্যক্তিদের আবার উন্নতির চেষ্টা থাকে না খুব একটা। একধরনের মানুষ আছেন, যাঁদের পেশা শুধু উপার্জনের মাধ্যম নয়, ব্যক্তিগত গর্বও বটে। পেশাগত সমস্যা-জটিলতায় আক্রান্ত হলে এঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসার, অনুকূল সময়ে তাঁদের চেষ্টা থাকে উন্নতির। এ ধরনের ব্যক্তিকেই খুঁজে বের করেন তিনি।
ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, সর্বোচ্চ সুফল পেতে চাইলে ওই রকম ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। এ ধরনের ব্যক্তিরা কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনচেতা হন। মানুষ কোনো ক্ষেত্রকে আপন ভাবতে শুরু করলে সেখানে স্বাধীনতা চায়ই। ঠিক এই স্বাধীনতাটাই তিনি দেন।
বছরে একবার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সভা হয়। সেখানে ওয়ারেন বাফেট প্রতিষ্ঠানের সবাই এবং সব শেয়ারধারীর উদ্দেশে একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সবকিছু উল্লেখ থাকে। ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি প্রতিবছর একটি করে চিঠি লিখে আসছেন। বলা হয়, সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ পরামর্শ লুকিয়ে থাকে ওয়ারেন বাফেটের ওই বার্ষিক চিঠিতেই। বিল গেটসও এই চিঠির অপেক্ষায় থাকেন প্রতিবছরই।
প্রতিবছর নিয়ম করে চিঠি লিখলেও ২০১৪ সালের চিঠিটিকে বলা হয় বিশেষ কিছু। ওই চিঠির দ্বিতীয় অংশের শিরোনাম ছিল ‘বার্কশায়ার-অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস বলার পাশাপাশি আগামী ৫০ বছরে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কীভাবে চলবে তার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন তিনি। বিল গেটস লিখেছেন, তিন বাফেটের ৫০টি চিঠিই পড়েছেন। কিন্তু এই চিঠিটি সেরা।
চিঠিটির শুরুতেই তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা শূন্য।
একসময় তিনি থাকবেন না। তাঁর উত্তরসূরির জন্য সবচেয়ে বড় পরামর্শ হচ্ছে, তাঁকে অবশ্যই ব্যবসা-বাণিজ্যের তিনটি খারাপ দিক থেকে দূরে থাকতে হবে। যাকে তিনি বলেছেন, ‘এবিসি অব বিজনেস ডিকেই’। যেমন: অ্যারোগেন্স (ঔদ্ধত্য), ব্যুরোক্রেসি (আমলাতন্ত্র) এবং কমপ্লাসেন্সি (আত্মতুষ্টি)।
বাফেটের উত্তরসূরি কীভাবে সিইও বাছাই করবেন তাও চিঠিতে লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় বসাতে হবে। আর সিইও হতে হবে তুলনামূলকভাবে তরুণ, যাতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারেন, ৬৫ বছরে অবসর নেওয়ার ভাবনায় আচ্ছন্ন না থাকেন।

৪.
ওয়ারেন বাফেটের লেখা চিঠি বিশ্লেষণ করে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে। এর মধ্যে বিখ্যাত হয়ে আছে ‘ম্যানেজমেন্ট সিক্রেটস’। সেখান থেকে কিছু কথা বলা যেতে পারে।
ক. ওয়ারেন বাফেট প্রতিবছর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইওর কাছে একটি চিঠি দেন। সেখানে লেখা থাকে, আজ মারা গেলে কাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানে আপনার পদে কে যোগ দিতে পারবে লিখে পাঠান। বাফেটের মতে, কোম্পানির ভেতর থেকেই উত্তরসূরি খুঁজে নেওয়া ভালো
খ. বাফেট মনে করেন, যে জিনিস আমি নিজের জন্য কিনব না, তা অন্যকে কেনার উপদেশ দেব না
গ. বাফেটের নীতি হলো, ভুল যত ক্ষুদ্র বা অগুরুত্বপূর্ণই হোক, বোঝামাত্র সেটি অকপটে স্বীকার করে নেওয়া এবং শোধরানোর চেষ্টা চালানো প্রয়োজন। ব্যবসার জন্য এটা জরুরি।
ঘ. বাফেটের পরামর্শ হচ্ছে, সুসময়ে কৃচ্ছ্র সাধন ও দুঃসময়ে সঞ্চিত অর্থ ব্যয়।
ঙ. বাফেট বলতেন, একজন ভালো ম্যানেজার বড় ফুটবল কোচের মতো। তাঁরা নিজে মাঠে না নেমেও দলকে খেলান ও জিতিয়ে আনেন। আবার জয়ী হওয়ার উপাদান রেখে যান টিমের মধ্যে, যাতে তিনি না থাকলেও জিততে পারে দলটি।
তথ্যসূত্র: বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ওয়েবসাইট, ব্লুমবার্গ, দি বাফেট রিপোর্ট-অধ্যাপক জন প্রাইস, দি ওয়ারেন বাফেট ওয়ে-রবাট জি হাগস্ট্রর্ম, ম্যানেজমেন্ট সিক্রেটস-বণিক বার্তা।