শেষ বিকেলের আলোয় উদ্ভাসিত আমির
(http://www.telegraph.co.uk/content/dam/cricket/2016/07/04/102404019-mohammad-amir-sport-large_trans++qVzuuqpFlyLIwiB6NTmJwfSVWeZ_vEN7c6bHu2jJnT8.jpg)
নতুন একটা জীবন শুরু করলেন আমির লর্ডস টেস্ট দিয়ে। ছবি: এএফপি
লর্ডস টেস্টকে বলা হচ্ছিল মোহাম্মদ আমিরের শাপমোচনের মঞ্চ। একই মাঠে ছয় বছর আগে স্পট ফিক্সিং–কাণ্ডে জড়িয়ে তিনি যে অন্যায়টা করেছিলেন, সেই পাপ থেকে মুক্তির ক্ষেত্র।
আমিরকে ‘হোম অব ক্রিকেটে’ কীভাবে অভ্যর্থনা করা হবে, এসব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল বিস্তর। তবে মাঠে খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমির মূল চরিত্র থেকে পার্শ্বচরিত্রে বদলে গেলেন। কিন্তু আবার তিনিই লর্ডস টেস্টে পাকিস্তানের স্মরণীয় জয়ের শেষ অঙ্কের নায়ক। শেষ বিকেলে দুটি উইকেট নিয়েছেন, দুটিই বোল্ড করে। আমিরের জীবনের উত্থান-পতনের গল্পটার প্রতীকও যেন হয়ে থাকল এই লর্ডস টেস্ট!
২০১০ সালের লর্ডস টেস্টে সেদিন ৮৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিজের নাম ‘অনার্স বোর্ডে’ তুলেছিলেন সে সময়ের ১৮ বছর বয়সী আমির। কিন্তু এমন কীর্তি ঢাকা পড়ে গেল স্পট ফিক্সিংয়ের কালো ছায়ায়। জানা গেল এমন বোলিং-কীর্তির মধ্যেও জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমির ইচ্ছাকৃত নো বল করেছেন কয়েকবার। নাটকটা যদিও সে সময়ের অধিনায়ক সালমান বাটের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়েছিল, কিন্তু তাতে যোগসাজশের কারণে বাটের সঙ্গে ফেঁসেছিলেন আমির ও মোহাম্মদ আসিফ।
খুব সম্ভবত সেই সময়টার কথা মনে করলে আজও আতঙ্কে নীল হয়ে যান আমির। নায়ক থেকে হঠাৎই খলনায়ক। নির্বাসিত জীবন। কী যন্ত্রণা, খুব অল্প বয়সেই আমির সেটা বুঝে গিয়েছিলেন। ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য কেবল নিষিদ্ধই হলেন না, ইংল্যান্ডের তরুণ অপরাধীদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি ইনস্টিটিউটে তিন মাস বন্দিজীবনও কাটালেন। লোভের ফাঁদে পড়ে অন্ধকার জীবনের তলানিতেই যেন পৌঁছে যাচ্ছিলেন ধীরে ধীরে। সেখান থেকে হঠাৎই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠা। রঙিন পোশাকে রং ঝলমলে ফেরার পর অনেকটা কাকতালীয়ভাবে সেই লর্ডসেই আবারও ফিরেছে টেস্ট ক্রিকেটে। যে ম্যাচ শুরুর আগে আলোচনায় শুধুই তিনি।
অথচ প্রথম ইনিংসে বাজে বোলিং করলেন। ‘নার্ভাস’ যে ছিলেন, বোঝা গেছে স্পষ্ট। পেলেনও মাত্র একটি উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও একেবারে ধারহীন। কিন্তু আমির কি একেবারেই আড়ালে থাকবেন! না, ঠিক সময়ে আলোটা টেনে নিলেন নটেগাছটি মুড়িয়ে দিয়ে। ২০ বছর পর লর্ডসে স্মরণীয় এক জয় পেল পাকিস্তান। আমিরকে লর্ডস-দুঃস্বপ্ন ভোলাতে এ রকমই একটা জয় তো দরকার ছিল!
ছয় বছর আগে এক অধিনায়ক সালমান তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন। ছয় বছর পর আরেক অধিনায়ক মিসবাহ পিতার স্নেহে যেন প্রতিটা মুহূর্ত আগলে রাখলেন। কাল জ্যাক বলকে যখন বোল্ড করে আমির যখন নিশ্চিত করলেন পাকিস্তানের জয়, অধিনায়ক মিসবাহ তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। মিসবাহ নিজেই বলেছেন, লর্ডসের মধ্য দিয়ে নতুন জীবন শুরু হলো আমিরের। শুরু হলো নতুন এক পথচলা। বলকে আউট করার ওই মুহূর্তটি মিসবাহর ভাষায়, ‘আমিরের জন্য বিশেষ এক মুহূর্ত।’
লর্ডস টেস্টে আমিরকে যথেষ্টই ‘মানসিক প্রতিবন্ধকতা’ সামলাতে হয়েছে। তবে মিসবাহ মনে করেন টেস্ট সিরিজের সামনের দিনগুলোতে আমির নিজেকে ফিরে পেতে থাকবে দারুণ করেই, ‘সে অবশ্যই নিজের পারফরম্যান্সের উন্নতি ঘটাতে থাকবে। মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে লর্ডসের মাঠেই তার জীবনে যা ঘটে গেছে, সেটা মনে করলে তো অবশ্যই। আমার মনে হয় ব্যাপারটা এখন কেটে গেছে, সে অবশ্যই পাকিস্তান দলের আরও কার্যকর অস্ত্র হয়ে উঠবে সামনের দিনগুলোতে।’
আমির প্রতি ব্যক্তিগত শুভকামনাও জানিয়েছেন অধিনায়ক মিসবাহ, ‘সে অনেক ভাগ্যবান। দ্বিতীয় একটা সুযোগ সে পেয়েছে। এখন আমি আশা করি, সে নিজেকে একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ, একজন মানবিক ব্যক্তিত্ব ও ভালো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলবে।’ সূত্র: এএফপি।