Daffodil International University
Health Tips => Protect your Health/ your Doctor => Children => Topic started by: Jannatul Ferdous on August 31, 2016, 10:09:59 AM
-
শামীম সাহেব থাকেন উত্তরবঙ্গের একটি জেলায়। তাঁর বড় ছেলে নাদিম। বছর দুয়েক হলো পড়ছে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলেটি নিয়মিত বাসায় যোগাযোগ করে, ফোনে কথা হয়। ছুটিতে বাড়ি যায়। পড়ালেখা নাকি ভালোই চলছে। সব ঠিক ছিল। কিন্তু একদিন একটি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে শামীম সাহেব একটি চিঠি পান। প্রেরকের ঘরে নাদিমের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা। চিঠি পড়ে নাদিমের বাবা হতবাক—চিঠির বক্তব্য হচ্ছে বিগত এক বছর ধরে শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, উপরন্তু এক বছর আগের শেষ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল। গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টাকা জমা দেয়নি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অভিভাবকের জ্ঞাতার্থে জানাল মাত্র। শামীম সাহেব তো নিয়মিত ছেলেকে সেমিস্টার ফি পাঠাচ্ছেন। মাসে মাসে অন্যান্য খরচ পাঠাচ্ছেন। কখনো চাহিদামতো বাড়তি টাকাও পাঠিয়েছেন। তিনি ভাবনায় পড়ে গেলেন, ‘কী করে আমার ছেলে?’
এ রকম ভাবনায় পড়তে পারেন অনেক অভিভাবকই। সন্তানেরা উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে নিজ জেলার বাইরে দূরে পড়তে যায়। কখনো দেশের মধ্যেই, বিশেষত রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় জেলায়, আবার কখনোবা বিদেশে। সন্তানকে অনেক আশা নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন, ঠিকমতো যোগাযোগও রাখছেন তিনি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী করছে তা সব সময় বাবা-মায়ের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। সন্তান সে ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক, বাড়ির বাইরে পড়তে গেলে বাবা-মায়ের মনে একটা বাড়তি উদ্বেগ থাকে। নানা বিষয় নিয়ে এই উদ্বেগ। সে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে কি না, শরীরের যত্ন নিচ্ছে কি না, পড়ালেখা কেমন করছে, অসৎ সঙ্গে মিশে উচ্ছন্নে যাচ্ছে কি না, ‘প্রেম’ করছে কি না, নেশা করছে কি না, কোনো অপরাধ চক্রের সঙ্গে মিশে রাষ্ট্রদ্রোহ কাজে জড়িয়ে পড়ছে কি না ইত্যাদি নানান চিন্তা। বাবা-মায়েরা একটা বিশ্বাস আর আস্থা নিয়েই সন্তানকে দূরের শহরে পড়তে পাঠান। কিন্তু সব সন্তান সব সময় এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারে না। কেউ কেউ অকৃতকার্য হয়, সমস্যায় পড়ে আর কেউ কেউ অকৃতকার্য হয়ে সমস্যায় পড়েও বাবা-মাকে সেটি বলতে পারে না।
.সংকোচ আর ভয়ের কারণে তারা সমস্যাটি গোপন করতে থাকে। একপর্যায়ে গোপন করতে করতে তারা মিথ্যার পাহাড় বানিয়ে ফেলে, তখন বাবা-মায়ের কাছে সাহায্য চাওয়াটা তাদের কাছে অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। যেকোনো বাবা-মা এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। কিন্তু তাই ভেবে সন্তানকে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বা বড় শহরে পাঠানো থেকে বিরত থাকা যাবে না। তার উচ্চশিক্ষার পথে এই ভাবনা যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এ জন্য বাবা-মা আর সন্তান সবাইকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি যে সন্তান দূরে পড়তে যাচ্ছে, তাকে নিয়মিত দেখভালের ব্যবস্থা করতে হবে আর বিপদে পড়ে গেলে দেরি না করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
source: goo.gl/Jkn55q (http://goo.gl/Jkn55q)
-
প্রস্তুতিপর্ব
সন্তানের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক তৈরি করাটা শিখতে হবে। সে যেন ভয় পেয়ে তার অপরাধ গোপন না করে সে জন্য ছোটবেলা থেকেই তাকে এই শিক্ষাটা দিতে হবে। এর জন্য সন্তানের ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা বন্ধ করতে হবে। অপরের সঙ্গে তাকে তুলনা করা বন্ধ করতে হবে। বিপদে পড়লে যেন সবার আগে আপনার শরণাপন্ন হয় এমন সম্পর্ক তৈরি করুন।
বাবা-মাকে আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যে একটা সময়ের পর তাঁদের সন্তান নিজ জেলার বাইরে বড় শহরে পড়তে যাবে। সেখানে সে সহপাঠীদের সঙ্গে হলে থাকবে। বিষয়টা যেন হুট করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত না হয়।
* সন্তানকেও এই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাকে বেশ আগে থেকেই ধারণা দিতে হবে যে সে বাবা-মাকে ছেড়ে দূরের শহরে একা একা জীবন যাপন করতে পারে।
* নিজের কাজগুলো নিজে নিজে করার শিক্ষা দিতে হবে।
* সামাজিক দক্ষতা শেখাতে হবে সন্তানকে। যাতে হোস্টেল বা হল জীবনে সে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
* পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা থাকতে হবে। তাহলে সে হোস্টেল/হল জীবনে একাকিত্বে ভুগবে না, হতাশাগ্রস্ত হবে না এবং বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
* বাবা-মাকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করে তবেই বড় শহরে পড়তে পাঠাতে হবে সন্তানকে। আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সন্তানকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।
* বড় শহরে কোথায় থাকবে, হোস্টেলে না মেসে, সেখানে তার স্থানীয় অভিভাবক কে হবেন এবং যোগাযোগের মাধ্যম কী হবে তার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে হবে।
* কেবল সন্তানের কথায় নয়। অভিভাবকেরা নিজে যাচাই করবেন কোন প্রতিষ্ঠানে কোন বিষয়ে পড়তে যাচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবকেরা বিষয়টি বুঝতে সক্ষম না হলে সন্তানের স্থানীয় শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
* নিজস্ব বিবেচনাবোধ প্রয়োগ করে দেখবেন যে আপনার সন্তানের মধ্যে দূরের শহরে থাকার সামর্থ্য তৈরি হয়েছে কি না। তার অতীত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি এমন হয় যে আপনার সন্তান আপনার পরিবারে থেকেই বিপথে যাচ্ছে, তখন তাকে দূরের শহরে পাঠানোটা আত্মঘাতী হতে পারে।
-
সন্তানকে দূরে পাঠানোর পর
সন্তান তার পড়ালেখা আর জীবনযাপন সম্পর্কে যা বলছে তা বিশ্বাস করবেন। কিন্তু অবশ্যই তা স্থানীয় অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্য কোনো মাধ্যম থেকে যাচাই করে নেবেন। তবে আপনার আচরণে যেন কখনো এমনটা মনে না হয় যে আপনি সন্তানকে অবিশ্বাস করছেন বা তাকে সন্দেহ করছেন। প্রতিটা ক্ষেত্রে যাচাই না করে মাঝে মাঝে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে যাচাই করবেন।
* কেবল সন্তান কবে বাড়িতে আসবে সেটার অপেক্ষা না করে মাঝে মাঝে বাবা-মা নিজেরাই সন্তানের হোস্টেলে চলে যেতে পারেন। তবে কখনোই এমন কোনো কথা বলা বা আচরণ করা উচিত হবে না যাতে সে তার বন্ধুদের সামনে হীন বোধ করে।
* তার নির্ধারিত খরচের বাইরে সে বাড়তি টাকা চাচ্ছে কি না সেটার দিকে নজর দিন। কখনো খুব বেশি বাড়তি টাকা তাকে দেবেন না।
* তার বন্ধুদের সম্পর্কে জানুন। তাদের সঙ্গে পরিচিত হোন, প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান।
* সন্তান বাড়িতে এলে তার আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন। তার পড়ালেখা, ধর্মচর্চা, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, প্রেম নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলুন। তার মধ্যে রাতজাগা, অস্বাভাবিক মুঠোফোন ব্যবহার, কিছু গোপন করার চেষ্টা দেখলে সতর্ক হোন। নেশার কোনো লক্ষণ আছে কি না যাচাই করুন।
* সন্তানের প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য নিন। তার ফলাফল জানতে চান।
* স্থানীয় একজন অভিভাবক ঠিক করে দিতে পারেন। যার মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজ নিতে পারবেন।
* টেলিফোনে নিয়মিত তার সঙ্গে কথা বলুন, যোগাযোগহীনতা যেন না হয়।
* তার কোনো আচরণে যদি আপনার মনে হয় সে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশছে, তবে অন্যান্য স্বজন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিয়ে প্রকৃত তথ্য যাচাই করুন। এটি তার ভবিষ্যতের জন্যই মঙ্গল।
* অন্ধবিশ্বাস নয়। সন্তানকে ভালোবাসুন তবে অন্ধভাবে তাকে বিশ্বাস করবেন না।
* সন্তান যদি বিপদে পড়েই যায় তবে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। তাকে আইনি পথে নৈতিকতার সঙ্গে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন দিন শেষে সে-ই আপনার আদরের সন্তান।