Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: Md. Nazmul Hasan on October 03, 2016, 08:04:11 PM
-
পরিত্যক্ত কলাগাছ নাকি হাতির খাবার হওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না! সম্প্রতি এর নতুন একটা ব্যবহার খুঁজে পেয়েছেন ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের এক দল তরুণ গবেষক। ফেলে দেওয়া কলাগাছের আঁশ থেকে ঢেউটিন, বিকল্প হার্ডবোর্ড ও ফলস সিলিং তৈরি করেছেন তাঁরা। শুধু তা-ই না, তাঁদের দাবি, এই আঁশ ব্যবহার করে আসবাবও তৈরি করা সম্ভব। গবেষক দলের সদস্যরা হলেন সাগর দাস, মো. রাকিবুল ইসলাম, আশিস সরকার, আবু সাঈদ, মো. দিদার হোসেন ও মো. বেলাল হোসেন। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম।
২১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শুক্রাবাদ ক্যাম্পাসে ‘টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ ল্যাবে বসে কথা হচ্ছিল এই তরুণ গবেষকদের সঙ্গে। কলাগাছের আঁশ কাজে লাগানোর ভাবনাটা মাথায় এল কী করে? প্রশ্নের জবাবে মজার একটা গল্প শোনালেন মো. রাকিবুল ইসলাম।
কলার কীর্তি!
বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র হিসেবে অনেক সময় বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে যেতে হয় রাকিবুলদের। ২০১৪ সালের শেষের দিকের কথা। এই ইনস্টিটিউটের সামনে বন্ধুরা বসে কলা খাচ্ছিলেন। কী নিয়ে গবেষণা করা যায়, সে বিষয়েই কথা হচ্ছিল। হঠাৎ তাঁদের মাথায় এল, পাটের আঁশ দিয়ে যদি এত কিছু বানানো যায়, তবে কলাগাছের আঁশ দিয়ে নয় কেন? বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই হেসেছিল সেদিন। কিন্তু রাকিবুল আর সাগর দাশের মাথায় ঠিকই ঢুকে গিয়েছিল ভাবনাটা। তখন থেকেই চেষ্টার শুরু।
কলাগাছের আঁশ ব্যবহারের উপকারিতা সম্বন্ধে বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন গবেষক দলের প্রধান সাগর দাশ। বলছিলেন, ‘প্রোমুসা ডট ওআরজি নামে কলা গবেষণা-বিষয়ক একটা ওয়েবসাইট আছে। এই ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলাগাছ চাষ হয়। আর বাড়ির আনাচকানাচ, পুকুর পাড় বা রাস্তার ধারে চাষ হওয়া গাছও সমপরিমাণ। অর্থাৎ আমাদের দেশে সর্বমোট প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়।’ চাষযোগ্য জমির বর্ণনাতেই তিনি থামলেন না। সঙ্গে আরও যোগ করলেন, ‘প্রতি বিঘায় গড়ে ৪০০ গাছের হিসাবে প্রতিবছর চাষের পরিমাণ প্রায় ২৯ কোটি ৫০ লাখের বেশি। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে এক কেজি পরিমাণ আঁশ পাওয়া যায়। সে হিসাবে বছরে প্রাপ্ত আঁশের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার টন। কেজিপ্রতি আঁশের দাম আনুমানিক ২০ টাকা হলেও শুধু আঁশের মূল্য দাঁড়ায় ৫৯০ কোটি টাকার বেশি!’
আঁশে আশা
কলাগাছের আঁশ দিয়ে তৈরি তাঁদের ঢেউটিন, হার্ডবোর্ডের সঙ্গে নিত্যব্যবহার্য ঢেউটিন ও হার্ডবোর্ডের পার্থক্য কোথায়? শেষ বর্ষের ছাত্র আবু সাঈদ বুঝিয়ে বলেন, ‘সাধারণ টিনের তুলনায় আমাদের তৈরি টিন পুরোপুরি বিদ্যুৎ অপরিবাহী, তাপ পরিবহন ক্ষমতাও বেশ কম। বিদ্যুতায়িত হওয়ার ভয় থাকবে না, সহজে বহন করা যাবে। এই হার্ডবোর্ড পানিতে টিকে থাকবে, ঘুণে ধরার ভয়ও নেই।’
আর দাম? এই প্রসঙ্গে বললেন আশিস। ‘প্রচলিত হার্ডবোর্ডগুলোর মূল্য প্রতি বর্গফুট ৯০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। সেখানে ল্যাবে তৈরি আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ ৪৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।’ সুতরাং দামের দিক থেকেও সম্ভাবনা জাগানিয়া কলাগাছের আঁশ।
এই পণ্যের অন্যান্য ব্যবহার সম্পর্কে বলতে গিয়ে দলের বাকি সদস্যরা জানান, টাইলস, বাথটাব, বেসিন, দরজা-জানালা, ফটোফ্রেম, আলমারি, কেবিন, চেয়ার, টেবিল, পার্টিশনসহ এ ধরনের সব জায়গার এই হার্ডবোর্ড উৎপাদনের বিধি ব্যবহার করা যাবে। জিওটেক্সটাইলের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে বাড়ানো যাবে রাস্তাঘাট, বিভিন্ন বেড়িবাঁধের স্থায়িত্ব। চীন, জাপান, কোস্টারিকা, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন এবং পার্শ্ববর্তী ভারত কলাগাছের আঁশের গবেষণায় সফলতা পেয়েছে। এই আঁশ থেকে তৈরি হয়েছে পোশাক, জানালার পর্দা, টেবিল বা ঘর সাজানোর দ্রব্যাদিসহ আরও নানা কিছু।
সেসব তো বোঝা গেল। কিন্তু যথেষ্ট টেকসই হবে তো? গবেষণা দলের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম বললেন ‘এই আঁশের শক্তি প্রায় পাটের মতো। পরীক্ষা করে দেখা গেছে এর সহন ক্ষমতা প্রায় ৩৬ সেন্টিনিউটন পার টেক্স, যেখানে জাতভেদে পাটের সহন ক্ষমতা ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিনিউটন পার টেক্স হয়ে থাকে।’ ইতিমধ্যে তাঁদের এই আবিষ্কার ক্যাম্পাসে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বলছিলেন সে কথাও। ‘শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আমরা সবাই এই আবিষ্কার নিয়ে রোমাঞ্চিত। এখনো অনেক গবেষণা বাকি। আমরা সেসব নিয়ে কাজ করছি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান এ ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। শুধু তা-ই নয়, আমাদের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে তিনি কলাগাছের আঁশের তৈরি হার্ডবোর্ড ব্যবহার করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে কথা হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক, জিওটেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ আব্দুল জব্বার খান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের দেশগুলোতে গ্লাস ফাইবার কম্পোজিট, কার্বন ফাইবার কম্পোজিটসহ বিভিন্ন কম্পোজিট শিট প্রস্তুত হচ্ছে। বাংলাদেশে এই গবেষণা যদি সঠিক পথে এগোয়, আমার বিশ্বাস আমরা ভালো ফল পাব। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন সঠিক ‘স্ট্রেন্থ’ নিতে পারবে কি না, স্থায়িত্ব কতটুকু, বাজারসাপেক্ষে এই আঁশ দিয়ে তৈরি দ্রব্যাদির মূল্য কেমন হবে এবং সাপ্লাই চেইন তৈরি করা সম্ভব কি না। পাশাপাশি গবেষণালব্ধ তথ্য বিএসটিআইয়ের (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট) অনুমোদিত তথ্যের সঙ্গে কতটুকু মেলে, তা-ও লক্ষ রাখতে হবে।’
-
Good........... :)
-
We are proud of our students for their new invention.