Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: Md. Nazmul Hasan on October 27, 2016, 07:58:10 PM
-
ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেই ঋতুবৈচিত্র্য ক্রমেই অচেনা হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের কাছে। আবহাওয়ার উল্টাপাল্টা আচরণের কারণে প্রকৃতিও বিরূপ আচরণ করছে। যখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ার কথা, তখন দেখা যায় রোদের তীব্রতা। আবার যখন প্রচণ্ড রোদ থাকার কথা, তখন দেখা যায় বৃষ্টি। অসময়ে বৃষ্টি এবং অসময়ে খরার কারণে কখন বর্ষাকাল আর কখন গ্রীষ্মকাল তা বোঝাও দায় হয়ে পড়েছে। শীতকালের স্থায়িত্ব ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। গরমের পরিধি আর ব্যাপকতা দুটিই বাড়ছে। এসব কথার প্রমাণ মিলল আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত দুই মাসের তাপমাত্রার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে।
সংস্থাটি বলছে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর (২৩ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য) এই দুই মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বেশি বিরাজ করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রার স্বাভাবিকতা-অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করা হয় গত ৩০ বছরের তথ্য-উপাত্তের আলোকে। সেই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের সব বিভাগীয় শহরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
গত ২৩ অক্টোবরের উদাহরণ দিয়ে আবহাওয়া কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই দিন রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ওই দিন চট্টগ্রাম বিভাগের তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এ ছাড়া সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগেও অস্বাভাবিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ২৩ অক্টোবর চাঁদপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল; যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি ছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে আবহাওয়ার অস্বাভাবিকতার বিষয়টি। গত শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। গত ১৩৬ বছরের মধ্যে যেকোনো সেপ্টেম্বরের তুলনায় গেল সেপ্টেম্বরে গরম ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম। এ বছর সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা ওই বছরের একই সময়ের তুলনায় ছিল ০.০০৪ ডিগ্রি বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া উল্টাপাল্টা আচরণ করছে। এতে গ্রীষ্মকালে বেশি গরম আবার শীতকালে কম শীত অনুভূত হচ্ছে। বর্ষাকালে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ফল। এর সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, শিল্প-কারখানা ও ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে বলে মনে করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের আন্তরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (আইপিসিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি এ অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়ার পেছনে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়াকে দায়ী
করা হয়েছে। তারা এটিকে ‘মনুষ্যজনিত’ কারণে উষ্ণতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেছে। এই গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয়বাষ্প, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ও ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন। আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর চারপাশে কম্বলের মতো একটা আবরণ তৈরি করে, যা ভেদ করে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারলেও বের হতে পারে না। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বেড়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক তাঁর এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে তাপমাত্রা বাড়ছে। ১৮৯১ সাল থেকে ২০১৫—এই দীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে তিনি দেখিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর ফলে পানিতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণও বাড়ছে। আর জলীয়বাষ্প বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পৃক্ত। আর্দ্র বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা বেড়ে যায়, এটাই নিয়ম। ফলে গরমও বেশি অনুভূত হবে, যা মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠবে, যেটি এখন ঘটছে।
দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার পেছনে গবেষণায় আরো কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন আবুল কালাম মল্লিক, তাতে তিনি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইটভাটা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকেও দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ব্যক্তিগত গাড়ি, বাসাবাড়ি অফিসে এসি, কলকারখানা ও ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মাধ্যমে ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) গ্যাসেরও আধিক্য দেখা দিয়েছে। সিএফসি গ্যাস ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে দেওয়ার পাশাপাশি বাতাস উত্তপ্ত করে তোলে। এ কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়া পোশাক কারখানাগুলো থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হওয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে। তাঁর মতে, রাজধানী ঢাকায় এখন আর আদর্শ বায়ুমণ্ডল নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তার গবেষণার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে। গত ১৭ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, চীনে ২০ বছর আগেও শহরের মানুষ এসি সম্পর্কে তেমন অবগত ছিল না। এখন প্রায় প্রতিটি বাসায় একটি করে এসি রয়েছে। আর ভারতে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে এসির ব্যবহার বাড়ছে। এতে করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হলেও উদ্বেগের খবর হলো, এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের কারণে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশি করে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। এর পাশাপাশি সিএফসি গ্যাসও বেশি নির্গত হচ্ছে। এ কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ১৯৯৭ সালে মন্ট্রিয়ল প্রটোকলে সিএফসি গ্যাস কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি করেছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি।
সংস্থাটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক জন রুম বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে আনতে বিকল্প প্রযুক্তি তৈরিতে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। এতে কারিগরি সহযোগিতাও দেওয়া হবে। তার পরও সিএফসি গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে।
এদিকে সেপ্টেম্বর মাসকে উষ্ণতম মাস উল্লেখ করে নাসা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে ১৯৫১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সেপ্টেম্বর মাসগুলোর গড় তাপমাত্রার চেয়ে এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের তাপমাত্রা ছিল শূন্য দশমিক ৯১ ডিগ্রি বেশি। গত ১৯ সেপ্টেম্বরের উদাহরণ দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই দিন সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি ছিল। পুরো মাস ধরে একই চিত্র ধরা পড়েছে তাঁদের তথ্যে। ১৯ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি বেশি। এ ছাড়া ওই দিন যশোরে ৩৬ ডিগ্রি, ঢাকায় ৩৪ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৩৪ ডিগ্রি, চাঁদপুরে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
:o
-
Humidity is also so high...........
-
Thanks a lot for the informative post.