বাংলাদেশকে ইসিবির ধন্যবাদ
(http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/643x0x1/uploads/media/2016/11/03/c22c8705438e6be2552ecc82295f9c76-22.jpg)
স্বপ্নের ইংল্যান্ড সিরিজ শেষে দুই দিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেখানে ভেসেছেন মানুষের ভালোবাসায়। কিন্তু খুব দ্রুত সেসব ভুলে আবারও তাঁকে ফিরতে হচ্ছে খেলার মাঠে। আগামীকাল রাজশাহী কিংস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চতুর্থ সংস্করণ। এ ম্যাচে রাজশাহীর মূল অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন মিরাজ। কোচ সরওয়ার ইমরান ও ‘আইকন’ সাব্বির রহমান হয়তো সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন নায়ককে l শামসুল হক
কালই বাংলাদেশ ছেড়ে গেছে ইংল্যান্ড দল। এক মাস লম্বা সফরে দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়ে ভারতে গেল ইংলিশ দল। অথচ এ সফরটা তো বাতিলই হতে বসেছিল। গত জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার জেরে বাংলাদেশ সফরে নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সব শঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে সর্বাঙ্গ সুন্দর এক সফর শেষ করল তারা। নিরাপত্তাব্যবস্থায় তৃপ্ত ইংলিশ দল তাই বিদায়বেলায় ধন্যবাদ জানিয়ে গেল বাংলাদেশকে।
অথচ আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও অক্টোবরের এই সফর ঘিরে ফিরে ফিরে আসছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরের স্মৃতি। নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা বাতিল করে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার পথে হাঁটেনি। এ জন্য বাংলাদেশ একজন অস্ট্রেলিয়ানকেই ধন্যবাদ দিতে পারে। ইসিবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রেগ ডিকাসনের দেওয়া ইতিবাচক প্রতিবেদনেই সফরটি দেখে আলোর মুখ। ডিকাসন কিন্তু একজন অস্ট্রেলিয়ান।
সফরটি সফলভাবে শেষ করতে পেরে উল্টো বাংলাদেশই পেল ডিকাসনের ধন্যবাদ। ইসিবির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশকে প্রশস্তিতে ভাসিয়েছেন ডিকাসন। এ সফরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে তাঁর কর্মজীবনের সেরা বলেছেন তিনি, ‘আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে ২০ বছর ধরে কাজ করছি আমি। এখানে যা দেখেছি, বাংলাদেশ সরকার যা করেছে, নিরাপত্তার ব্যাপারে সেটা আমার দেখা সেরা। এ মুহূর্তে এটাকেই মানদণ্ড ধরা উচিত।’
সফর নিয়ে বাংলাদেশের দেওয়া আশ্বাসবাণীতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে সফরে আসেননি ওয়ানডে অধিনায়ক এউইন মরগান ও ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। কিন্তু দলের বাকি সদস্যরা নিশ্চিন্তেই বাংলাদেশে এসেছেন। কারণ বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে ডিকাসনের মনোভাব। দলের বেশ কিছু সদস্য প্রকাশ্যেই ডিকাসনের ওপর তাঁদের আস্থার কথা জানিয়েছেন। মাইকেল ভনও সফরের আগে মরগানদের আশ্বস্ত করেছেন, ডিকাসনের প্রতিবেদনের ওপর আস্থা রাখার জন্য। কাল ডিকাসনই বলেছেন খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাছে, ‘আমি অবশ্যই চিন্তিত ছিলাম। আমি মানসিকভাবে এমনিতেই একটু রক্ষণশীল। আর মানুষের নিরাপত্তা তো হালকা বিষয় নয়। আমরা সব সময় দলের একটু আগে বের হয়েছি এবং ক্রিকেট বোর্ডের সহযোগিতায় নিশ্চিত করেছি, তারা যে প্রতিজ্ঞা করেছে সে অনুযায়ীই কাজ করছে। আমাদের যে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
নিরাপত্তার ব্যাপারে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ উপলক্ষে আগে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও বিবেচনায় নিয়েছেন ডিকাসন, ‘আমি জন কার (ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান) ও ডেভিড ল্যাথারডেলকে (খেলোয়াড়দের সংগঠনের প্রধান নির্বাহী) নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছি। সংশ্লিষ্ট সবার (বোর্ড, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই বসেছি। আমাদের যা বলা হয়েছে এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সফরটি হওয়া উচিত।
ইংল্যান্ড দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই নিয়েছিল বাংলাদেশ। ইংলিশদের জন্য দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। অনেকটা সময় রাস্তায় অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে মানুষজনকে। ডিকাসন সেটিও উল্লেখ করেছেন তাঁর ধন্যবাদ বার্তায়, ‘এটি বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগ ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা ওদের অনেক বিড়ম্বনায় ফেলেছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা, পুরো দলই সেটা জানত। সে জন্যই আমরা সব জায়গায় সময়মতো গিয়েছি। কারণ আমরা যদি ১ মিনিটও দেরি করতাম, তাহলে সেটা আরও ১ লাখ লোককে বিপদে ফেলে দিত। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দারুণ সহযোগিতা করেছে।’
কাল দুপুরে হোটেল ত্যাগের সময় ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, ‘আমরা এ সফরটি দারুণ উপভোগ করেছি। সবাইকে ধন্যবাদ, অসাধারণ আতিথেয়তার জন্য! সফরে সবকিছু ঠিক ছিল, দারুণ সময় কাটিয়েছি।’ সূত্র: ইসিবি ওয়েবসাইট।