Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: Saujanna Jafreen on March 08, 2017, 12:29:00 PM
-
বাবা কী করেন? ভাই নেই? বোনের স্বামীরা কী করেন?
স্কুলজীবন থেকে আজ অবধি অজস্রবার এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি নারীপ্রধান পরিবারে বেড়ে উঠেছি। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বলে, একটা পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া থেকে শুরু করে হেন কোনো কাজ নেই, যেটা একজন নারীর পক্ষে করা সম্ভব না। তবু অধিকাংশ মানুষ আমার পরিচয় জানতে চান পরিবারের পুরুষ সদস্যদের যোগ্যতা দিয়ে। পরিবারের নারী সদস্যরা কী করেন, তা জানতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা গুটি কয়েক। এটি ধরেই নেওয়া হয় যে নারীর কাজ গৃহস্থালি আর পুরুষের কাজ পরিবারে অর্থের জোগান দেওয়া।
তথ্য-উপাত্ত বলে, বর্তমানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে পরিবারের প্রধান হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়নি।
একজন নারী একটি পরিবারের হাল ধরেছেন—এটি গৌরবের, লজ্জার নয়।
শারমীন জামান তাঁর দুই সন্তানকে মানুষ করেছেন একাই। যে বয়সে কিশোরী শারমীন জামানের বেণি দুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তাঁর সম্মতি ছাড়াই পরিবার তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেয় দ্বিগুণ বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে। স্বামীর কাছ থেকে কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য পাননি বললেই চলে। কঠোর সংগ্রাম করে নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। এখন তিনি আর তাঁর মেয়ে, দুজন নারী মিলেই তাঁদের পরিবারের হাল ধরেছেন।
তবে আজ অবধি তাঁদের যে কথাটি সব থেকে বেশি শুনতে হয়, তা হলো, ‘আপনাদের কষ্ট বুঝি। ব্যাটা মানুষের কাজ করা তো সহজ না।’
শারমীন জামানের মেয়ে জেসিকা বলছিলেন, ‘মানুষ ধরেই নেয় আমরা দুজন মেয়ে সংসার চালাই বলে আমরা অসুখী পরিবার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আয়েশা বানুর মতে, মানুষের ভেতরে বস্তুগত পরিবর্তন যত দ্রুত হয়, মনন কাঠামোগত পরিবর্তন তত দ্রুত আসে না। গত তিন দশকে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। তবে একজন নারী একটি পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস এবং পরিবারের সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী—এটা মেনে নিতে পারেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম।
সমাজে ‘ভালো মেয়ের’ একটি বাঁধাধরা সংজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসতে চান না অনেক মেয়েও। ভালো মেয়ে মানেই ধরে নেওয়া হয়, সমাজের প্রচলিত নারীর ভূমিকার বাইরে তিনি যাবেন না। অনেক পুরুষও ভাবেন, মেয়েরা সংসার চালানো মানে সমাজে তাঁদের জায়গা মেয়েরা নিয়ে নিচ্ছেন।
অধ্যাপক আয়েশা বানু জোর দিলেন লিঙ্গসমতাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ওপর। তবে নারী-পুরুষের সমতার শিক্ষা কেবল পরিবার আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিতে পারে—এ ধারণা ঠিক নয়। একজন শিশু তার পরিবার থেকে লিঙ্গসমতার শিক্ষা পেলেও টেলিভিশন, সিনেমা, উপন্যাস থেকে লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা পেতে পারে।
লেখক ভার্জিনিয়া উলফ বলেছিলেন, নারীদের সাহিত্যচর্চার জন্য প্রয়োজন নিজস্ব একটা ঘর। ঘর এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত। আসলে প্রতিটি নারীরই নিজস্ব একটা ঘর প্রয়োজন। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পরিচয় ছাপিয়ে নিজের একটা পরিচয় প্রয়োজন।
কিছুদিন আগে এক ভদ্রলোক পরিচিত হতে এসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার বাবা কী করেন?’
আমি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘বাবা নেই, আমার মা পরিবারের প্রধান। উনি এত বছর আমাদের সংসার চালিয়েছেন। আমাদের তিন বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। এখন আমাদের পরিবারের চারজন নারীই উপার্জন করেন এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।’
ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘আপনার মা তো তাহলে একজন সফল নারী।’
-
Wonderful write-up.