Daffodil International University

Faculty of Science and Information Technology => Science and Information => Topic started by: Md. Rasel Hossen on March 08, 2017, 08:58:29 PM

Title: একটি নো বলের হতাশা
Post by: Md. Rasel Hossen on March 08, 2017, 08:58:29 PM
সংলগ্ন ভারত মহাসাগর থেকে ভেসে আসা হাওয়াও তখন ধীর হয়ে এসেছে। সারা দিনের ওড়াউড়ি শেষে ডাচ্ দুর্গের পতাকাগুলোও একটু অবসর নিতে চাইছে। ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। বাংলাদেশের বোলারদের ওভাররেট কম থাকায় ২ ওভার আগেই থেমে গেল দিনের খেলা।

এই ক্লান্ত কিংবা শ্রান্ত গোধূলিতে শ্রীলঙ্কার দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানই ড্রেসিংরুমে ফিরলেন হাসিমুখে। কুশল মেন্ডিস তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ৩৪ রান দূরে। নিরোশান ডিকভেলা অপরাজিত ১৪ রানের ইনিংসটিতেই বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন খুব অল্পে তিনিও তুষ্ট থাকতে চান না। ৮৮ ওভারে ৪ উইকেটে ৩২১ রান। ছোটখাটো একটা পাহাড় হয়েছে, দ্বিতীয় দিনে একটা বড় রানপাহাড় গড়ে তোলার দিকেই এগোচ্ছে শ্রীলঙ্কা দল।
এঁদের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় মুশফিকদের কি একটু নুয়ে পড়া মনে হলো না? আর নুয়ে পড়া শরীরগুলোতে একটু হতাশার চিহ্ন থাকাও স্বাভাবিক। হতাশার অনেক কারণ আছে, প্রথম সেশনে প্রতিপক্ষকে যেমন চাপে ফেলা গিয়েছিল সেটি পরের দুই সেশনে আর ধরে রাখা যায়নি। ধরে রাখা যায়নি দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অনমনীয় দৃঢ়তার কাছে। একজন ওই মেন্ডিস, আরেকজন আসেলা গুনারত্নে। এই দুজনের কাছেই বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং শেষ পর্যন্ত নতজানু হয়ে পড়েছে। চতুর্থ উইকেটে গড়েছেন ১৯৬ রানের জুটি। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেল, চতুর্থ উইকেটে এটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় জুটি। এ হলো সামগ্রিক হতাশার চিত্র। তবে এর মধ্যে দিন শেষে বড় হয়ে উঠছে টুকরো একটি হতাশা—একটি নো বল। কেননা ওটা যদি নো বল না হতো, টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া শ্রীলঙ্কা পরিণত হতো ২ উইকেটে ১৫ রানে। ওটা যদি নো বল না হতো দিন শেষে ১৬৬ রানে অপরাজিত মেন্ডিস ফিরে যেতেন শূন্য রানেই। ১৯৬ রানের হাতির মতো একটি জুটিও হতো না। গল টেস্ট হয়তো প্রথম দিনেই বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দিত মুশফিকদের দিকে।
নো বলটি ছিল শুভাশিস রায়ের। আগের বলেই জোরের সঙ্গে একটি বল স্কিড করিয়ে বোল্ড করেছেন ওপেনার উপুল থারাঙ্গাকে। উইকেটে এসেই ঠিক ওরকম একটি বল পেলেন মেন্ডিস। এবার বলটি ব্যাটের ভেতরের কানা নিয়ে উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে। আম্পায়ার আলিম দার আঙুল তুলে দিলেন। কিন্তু নো বল কি না পরীক্ষাতেই ধরা পড়ল সর্বনাশ। ওভার স্টেপিং করে ফেলেছেন ডানহাতি পেসার। তাঁর এবং দলের কপালে লেখা ছিল এমন দুর্ভাগ্যের একটি কালো রেখা!
সকালে সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশ দলে নেয় শুভাশিসকে। নিজেদের চিরচেনা উইকেটে শ্রীলঙ্কা যেখানে তিন স্পিনার নিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ নিয়েছে তিন পেসার। মোস্তাফিজ-তাসকিন নিশ্চিতই ছিলেন, শেষ মুহূর্তে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের জায়গায় এসেছেন শুভাশিস। তা তাঁর দলভুক্তি যতই অনেকের ভ্রু কুঞ্চিত করুক না কেন, আস্থার প্রতিদান তিনিই দিয়েছেন সবচেয়ে ভালো। অন্তত প্রথম বদলি বোলার হিসেবে যা করেছেন তা অসাধারণ। তুলনায় তাঁর চেয়ে এগিয়ে থাকা দুই পেসার তাসকিন ও মোস্তাফিজকে ম্লানই বলতে হয়। তবে এঁরা দুজনও উইকেটশূন্য থাকেননি। দ্বিতীয় সেশনে এসেই মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দিয়েছেন দিনেশ চান্ডিমালকে। তাসকিন বোল্ড করেছেন বীর বিক্রমে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া আসেলা গুনাবর্ধনেকে। এর আগে প্রথম সেশনেই মেহেদী হাসান মিরাজ বেশ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে বোল্ড করেছেন ওপেনার দিমুথ করুণারত্নেকে।
সকালের সেশনটি পুরোপুরিই ছিল মুশফিকদের হাতে। ২ উইকেট হারিয়ে ৬১ রান নিয়ে লাঞ্চ করতে যায় শ্রীলঙ্কা। ভালো বোলিংয়ের সঙ্গে সমর্থনসূচক ফিল্ডিং একেবারেই পাখা মেলতে দেয়নি তখন লঙ্কানদের ব্যাটিংকে।
তবে এটা জানাই ছিল, গা পোড়ানো গরমের মধ্যে বাংলাদেশ মনঃসংযোগ ধরে রাখতে পারবে না। সেটিই হয়েছে পরের দুই সেশনে। দুই সেশনও নয়, বলতে পারেন দেড় সেশনে। কারণ লাঞ্চের এক ঘণ্টা পরও লাগাম ছিল মুশফিকদের হাতে। তারপর রোদ যত চড়েছে, ক্লান্তি ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের মধ্যে। আর সেই ক্লান্তিকে পুঁজি করে সদর্পে ব্যাটিং করে গেছেন মেন্ডিস ও গুনারত্নে।
খুব ছোট্ট একটা পরিসংখ্যান দিলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে দিনের দুই প্রান্তে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রথম ৪০ ওভারে রান উঠেছে ৯৬, শেষ ৪৮ ওভারে ২২৫। বাংলাদেশের পিঠে আজ কত রানের বোঝা শ্রীলঙ্কা চাপিয়ে দেয় কে জানে। তবে দিনের শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে মিরাজ সাংবাদিকদের জানিয়ে গেলেন, দ্বিতীয় দিনে খুব দ্রুতই মেন্ডিসদের অলআউট করার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী, ‘প্রথম দিনে স্পিনারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। দ্বিতীয় দিনে নিশ্চয়ই এমন হবে না।’ মিরাজ তাঁর সংক্ষিপ্ত ক্রিকেট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে অবশ্য বুঝে গেছেন, আসল দায়িত্ব হবে ব্যাটসম্যানদের। ওদের হয়ে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন মেন্ডিস বা গুনারত্নে।
মেন্ডিস সাংবাদিকদের সামনে খোলাখুলিই স্বীকার করেছেন, খুব ভাগ্য নিয়ে নেমেছিলেন। তা না হলে দ্বিতীয় জীবন তাঁর পাওয়া হয় না। সেই নতুন জীবনে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলে গেছেন। দ্বিতীয় দিনেও ওটাই তাঁর চাওয়া।
কিন্তু বাংলাদেশকে তাঁর চাওয়ার পথে যে আজ কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে হবে। শুভাশিসের মতো দুর্ভাগ্য যেন আর কারও না হয়, সেটাও থাকবে চাহিদার তালিকায়। কী ঘটবে সেটি তো লুকিয়ে আছে আজকের দিনটির বুকের গভীরে, তবে তার আগে প্রথম দিনের একটি নো বলের হতাশা বাংলাদেশকে বড্ড পোড়াচ্ছে।