Daffodil International University
Faculty of Science and Information Technology => Software Engineering => Topic started by: Nazia Nishat on April 23, 2017, 01:06:52 AM
-
এই প্রবন্ধটির ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয় শুক্রবার, ১৭ মে,২০১৩ , দি নিউজ টুডে,বাংলাদেশ এ প্রকাশনা (২৭৮)এ । এর লিঙ্ক
http://www.scribd.com/doc/141892547/Does-the-human-brain-have-a-purpose
লেখক: ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম
অনুবাদক: নাজিয়া নিশাত
আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক বস্তু ব্যবহার করে থাকি। কোন বস্তুকে তার পরিকল্পিত উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কোন কাজে কি ব্যবহার করা উচিৎ? যখন কোন বস্তু তৈরি করা হয় তার পিছনে একটা নকশা থাকে এবং একটা উদ্দেশ্য থাকে। কি ঘটে, যখন যে উদ্দেশ্যে বস্তুটি তৈরি হয়েছে সেটি ছাড়া অন্য কোন কাজে তা ব্যবহার হয়? প্রায়ই আমরা চাকু অথবা ছুরিকে স্ক্রুড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করি। এটা করার ফলে চাকু অথবা ছুরির মাথার কি হয় অথবা স্ক্রু এর মাথার কি অবস্থা হয়? যেকোনো একটা অথবা দুটাই নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে মানুষ যদি সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে তাদের সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অবশ্যই পরিকল্পিত উদ্দেশ্য আছে। একইভাবে শরীরের প্রতিটি অংশ যেমন: বুদ্ধি, চোখ, হাত, পা, পাঁচটা ইন্দ্রিয়, তন্ত্র, জননতন্ত্র প্রত্যেকটির কিছু না কিছু পরিকল্পিত নকশা এবং উদ্দেশ্য আছে। উদাহরণস্বরূপ: আমরা কি চিন্তা করতে পারি যে সৃষ্টিকর্তা বুদ্ধিমত্তা কেন তৈরি করেছেন?
মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের কাজের দিকে দৃষ্টিপাত করার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে, অবশ্যই প্রতিটি বস্তুকে কাজের উপযোগী করে তৈরি করার পেছনে নকশাকারী অথবা প্রস্তুতকারীর সংকল্প অথবা ব্যক্তিগত আগ্রহ বা উদ্দেশ্য আছে। তাই মগজের কাজের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আগে আমরা কি একটি সহজ প্রশ্ন করতে পারি? যেমন:মানুষের বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করার পেছনে সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব কি আগ্রহ থাকতে পারে?
অথবা তিনি এত জটিলভাবে যে মগজ তৈরি করলেন তা কি মজা করার জন্য তৈরি করেছেন?
মস্তিস্ক একইসাথে কিভাবে অনেকগুলি কাজ করে অ্যাডামসন তার লেখার ভিতরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আমরা অ্যাডামসন এর ব্যাখ্যাকে সহজভাবে উপস্থাপন করে যা পাই তা হলঃ
“মানুষের মগজ একই সাথে অনেক প্রকারের তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে, আপনি যে জিনিষ চোখে দেখেন তার রঙ, পরিবেশের তাপমাত্রা, মেঝেতে আপনার পায়ের চাপ, আপনার চারিদিকের শব্দ, আপনার মুখের শুষ্কতা, এমনকি আপনার কী-বোর্ড স্পর্শ করে এর ধরণ বুঝতে পারে। আপনার সব অনুভূতি ধরে রাখে ও প্রক্রিয়া করে এবং ধরে রাখে সব চিন্তা ও স্মৃতি। একই সময়ে আপনার মগজ আপনার শরীরের চলমান প্রক্রিয়া যেমন নিঃশ্বাস আদান প্রদান, চোখের পাতার নড়াচড়া, ক্ষুধা, আপনার হাতের পেশীর নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক সেকেন্ডে দশ লক্ষ বার্তা প্রক্রিয়া করে। মগজ অপ্রয়োজনীয় তথ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বাছাই করে এবং ধরে রাখে। এই পদ্ধতিটা, আপনার চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করতে সহায়তা করে। অতএব মস্তিস্ক শরীরের অন্যান্য অঙ্গের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে। এতে বুদ্ধিমত্তা রয়েছে, এটির কার্যকারণ নির্ণয় করার, অনুভূতি তৈরি করার, স্বপ্ন দেখার, পরিকল্পনা তৈরি করার ও সেটা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক বোঝার ক্ষমতা রয়েছে। ”{১}
কি বিস্ময়কর যন্ত্র এই মগজ! মগজ লিখিত শব্দ প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যেমনঃপড়া, সারসংক্ষেপ করা, লিখা। এখন প্রশ্ন হল যে, বিধাতা কেন এত জটিলতা দিয়ে এই বিস্ময়কর যন্ত্র তৈরি করেছেন? বিধাতার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
এটা কি হতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন যে মানুষ বুদ্ধি ব্যবহার করে তাঁর বিস্ময়কর কাজ অনুধাবন করে এবং বিনিময়ে তাঁকে ধন্যবাদ ও ভালবাসা জানায়?
বাইবেলে আছে,
“আমাকে সন্ধান করে খুঁজে পাবে তখনই, যখন আমাকে খুঁজবে তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে। ”
[যেরেমিয়াহ্, ২৯:১৩]{২}
বিধাতার সাথে আচরণের সম্বন্ধে প্রশ্ন করাতে বাইবেলের এক জায়গায় যীশু উত্তর দিলেন যে,
“তোমার অধিপতি, তোমার রব কে ভালোবাসো তোমার সমস্ত হৃদয়,মন এবং আত্মা দিয়ে। ”
[ম্যাথিউ, ২২:৩৭]{৩}
যীশু আমাদের (সকল ধর্ম ও মত নির্বিশেষে)অভিন্ন সেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি সম্পূর্ণ ভালোবাসা জানাতে বলেছেন। [জন, ২০:১৭] {৪}
একই বিষয়ে আমরা কোরান এর ৩.৫১ আয়াত থেকে পাই,
“হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা অবিরামভাবে আল্লাহ্র প্রশংসা কর এবং সকাল সন্ধ্যা তাঁর গুণগান করো। তিনিই ফেরেশতাদের মাধ্যমে নেয়ামত দিয়ে থাকেন যাতে তোমরা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসো। তিনি অসীম দয়াময়। ” [৩৩.৪১– ৩৩.৪৩]
তাঁরাই ব্যক্তিগতভাবে সৃষ্টিকর্তাকে নিজের বুদ্ধি থেকে চিনতে পারেন এবং অন্ধকার থেকে বের হয়ে জ্ঞানের আলোতে আসতে পারেন যারা জ্ঞানকে প্রক্রিয়া করে এবং সত্যমিথ্যা যাচাই করার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। যে মানুষ আলোর পথে আসে এবং সঠিক কাজ করে সে ক্রমাগতভাবে সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারে, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রতি বিস্মিত হয় এবং তাঁকে সম্মান ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানায়।
“হে মানুষ! ভালোবাসা জানাও তোমার মালিকের প্রতি, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রতিও ভালোবাসা জানাও যারা তোমার সামনে এসেছে তোমাকে সঠিক পথে আনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। ”
তিনিই একজন ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ যিনি সৃষ্টিকর্তা ব্যক্তিগতভাবে যা দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে ভালোবাসা জানান।
“কিভাবে তুমি আল্লাহ্র প্রতি অবিশ্বাস করতে পারো? এটা দেখার পর যে একসময় তোমার জীবন ছিলোনা এবং তিনি তোমাকে জীবন দিয়েছেন; তিনি তোমাকে মৃত্যু দিবেন এবং তোমাকে আবার জীবিত করা হবে; এবং তুমি তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। তিনিই তোমার জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন;......... ”[২.২৮-২.২৯]
সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য শুধু পৃথিবীর সব সৃষ্টিই করেননি তিনি মানুষের সুবিধার জন্য মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যকলাপ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা এক একটি বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য। যখন মানুষ সৃষ্টিকর্তার দেওয়া নেয়ামত উপভোগ করে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জানানোর পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পিত উদ্দেশ্যের বাইরে কাজ করে, তখন সৃষ্টিকর্তার প্রতিক্রিয়া কি হওয়া উচিৎ? আমরা কি আশ্চর্য হব এটা জেনে যে সৃষ্টিকর্তা সদম এবং গমরাহ জাতিকে তাদের সমকামিতা ও অশ্লীল যৌন আচরণের মন্দ অভ্যাসের জন্য স্বাভাবিক মৃত্যু না দিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছেন? বাইবেল এবং কুরআন উভয় গ্রন্থেই সৃষ্টিকর্তা কিভাবে দুটি শহর ধ্বংস করেছেন তার বর্ণনা আছে।
“এবং তোমরা ভুলে যেওনা সদম, গমরাহ এবং তাদের নিকটবর্তী শহরগুলো যেগুলো পাপাচার এবং সব রকমের বিকৃত যৌন কর্ম দ্বারা নিমজ্জিত ছিল। ঐ শহরগুলিকে আগুন পাথর দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং এটি সৃষ্টিকর্তার বিচারের চিরস্থায়ী আগুনের সতর্কবার্তা বহন করে। ”
[জুড ,১:৭]{৬}
কুরআন থেকে নেওয়া নিচের আয়াতগুলি এই ঘটনার লক্ষণীয় বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত।
৭.৮০“আমি লূতকেও পাঠিয়েছি:তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন :তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করো যা তোমাদের পূর্বে আর কোন জাতি করেনি? ”
অশ্লীল কাজ কি ? এটা পরের আয়াতে বর্ণিত আছে।
৭.৮১“তোমরা নারীদের পরিত্যাগ করে পুরুষদের সাথে যৌন বাসনা নিবারণ করছ:তোমরা প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করছ। ”
সদম এবং গমরাহ জাতি তাদের অস্বাভাবিক কাজ দৃঢ়তার সাথে করে যেতে থাকলো এবং লূতকে তাদের শহর থেকে বের করে দিতে চাইলো।
৭.৮২“এবং তাঁর সম্প্রদায় একটি কথা ছাড়া আর কোন উত্তর দিতে পারলো না। তারা বলল:
“এদেরকে শহর থেকে বের করে দেওয়া হোক এরা প্রকৃতপক্ষেই পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অবলম্বনকারী! ”
৭.৮৩“কিন্তু আমি লূত এবং তাঁর পরিবারকে রক্ষা করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া:তাঁর স্ত্রী পাপীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ”
ইবনে কাসির{৭}পৃষ্ঠা ১৩১, এ বর্ণিত আছে, লূতের স্ত্রী আল্লাহ্র বানীতে বিশ্বাসী ছিলোনা।
৭.৮৪“এবং আমি তাদের উপর গন্ধকের বৃষ্টি(আগ্নেওগিরির লাভা) বর্ষণ করলাম: তাহলে তাদের পরিনতি দেখ যারা অপরাধ ও পাপকর্মে লিপ্ত ছিল! ”
{নোট}:
{১}http://www.everystudent.com/features/isthere.html?gclid=CJ_bhpuY9LYCFU1_6wodYGYAcQ
{২}http://biblehub.com/jeremiah/29-13.htm
{৩}http://biblehub.com/matthew/22-37.htm
{৪}http://www.mostmerciful.com/myfather.htm
{৫}http://en.wikipedia.org/wiki/Sodom_and_Gomorrah
{৬}http://biblehub.com/jude/1-7.htm
{৭}http://www.quran4u.com/Tafsir%20Ibn%20Kathir/PDF/007%20A%27raf.pdf