Daffodil International University

Faculties and Departments => Business & Entrepreneurship => Topic started by: Md. Alamgir Hossan on May 08, 2017, 12:56:13 PM

Title: ডিজিটাল হুন্ডিতে কমছে প্রবাসী আয়
Post by: Md. Alamgir Hossan on May 08, 2017, 12:56:13 PM
বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা অর্থ পাঠাতে (রেমিট্যান্স) আবারও হুন্ডিতে ফিরে যাচ্ছেন। প্রক্রিয়াটি এবার ডিজিটাল। অর্থ পাঠাতে ও পেতে এখন আর ব্যাংকে লাইন দিতে হচ্ছে না। পাঠানো অর্থ কয়েক মিনিটেই জমা হচ্ছে স্বজনের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে। বিনিময় হারও মিলছে বেশি।

বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় হুন্ডি বা অবৈধ পথে অর্থ লেনদেন অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কম খরচে দ্রুত পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অবৈধ ব্যবহারের কারণে এখন আবার প্রবল প্রতাপে ফিরে এসেছে সেই হুন্ডি ব্যবস্থা। ব্যাংকাররা এর নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল হুন্ডি’।

আর এর ফলে ব্যবসা কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউস। পাশাপাশি দেশও পড়েছে বড়
ক্ষতিতে। অর্জিত বিদেশি মুদ্রা এখন আর দেশে আসছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমে গেছে ১৬ শতাংশ। একইভাবে ‘ডিজিটাল হুন্ডি’র মাধ্যমে অর্থ পাচারও বেড়ে গেছে।

প্রবাসী আয় কেন কমছে, তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধিদল গত মার্চ মাসে গিয়েছিল সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব। তিন দেশে গিয়েই দলটি দেখেছে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘বিকাশ’-এর নামে রেমিট্যান্সের অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে। শুধু মোবাইল নম্বর দিয়েই টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের বিকাশ হিসাবে ওই টাকা জমা হয়ে যাচ্ছে। কিছু এলাকায় ডাচ্‌-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘রকেট’–এর নামেও এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
|প্রতিনিধিদল দুটির নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামান ও মহাব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান। তাঁরা দেশে ফিরে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি দল বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এসব দেশে বিকাশ, রকেটের নাম ব্যবহার করে টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের পরিদর্শনে আরও কিছু বিষয় এসেছে। এজেন্টদের ওপর নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অনেকেই এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে।’

বিপাকে এক্সচেঞ্জ হাউস:প্রবাসীদের অর্জিত অর্থ দেশে আনতে ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় এক্সচেঞ্জ হাউস চালু করে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। এ জন্য বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ রিঙ্গিত মূলধন পাঠানো হয়। মুনাফার মুখ দেখায় সেখানে ৯টি শাখা খোলে এক্সচেঞ্জ হাউসটি। দেশে ১৬ লাখ রিঙ্গিত মুনাফাও পাঠায়। ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত এক্সচেঞ্জ হাউসটি মুনাফায় ছিল। এরপরই থেকেই লোকসান গুনছে।

মালয়েশিয়ার এনবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আখতার উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসা ভালোই চলছিল। গত বছর থেকে বিকাশ, রকেট এসে সব শেষ করে দিল। এখন আর কেউ টাকা পাঠাতে আসে না। আমাদের ব্যবসাও শেষ, দেশেরও অবস্থা খারাপ।’ তিনি বলেন, ‘বিকাশ, রকেটে টাকা পাঠালে বিনিময় হার বেশি পাওয়া যায়। একটা মোবাইল নম্বর দিলেই টাকা বাসায় পৌঁছে যায়। এ কারণে প্রবাসীদের বুঝিয়েও কোনো উপকার হচ্ছে না।’

শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক নয়, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে থাকা অন্য এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। বর্তমানে ১৩ দেশে থাকা ৩৬ ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউসের বেশির ভাগই লোকসান করছে। লোকসানে পড়ে এরই মধ্যে ১০টি এক্সচেঞ্জ হাউস বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

মালয়েশিয়ায় ২০১৩ সালে এক্সচেঞ্জ হাউস চালু করে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক। বর্তমানে দেশটিতে ৬টি শাখা রয়েছে সিবিএল মানি ট্রান্সফারের। ২০১৫ ও ১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফাও করে। বর্তমান অবস্থা নিয়ে সিবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান ফারাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকেরা এখন আর কষ্ট করে আসেন না। তাঁরা ঘরে বসেই বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন।’

একই অবস্থা সিঙ্গাপুরেও। ২০০৭ সালে দেশটিতে এক্সচেঞ্জ হাউস খোলে ন্যাশনাল ব্যাংক। বর্তমানে সেখানে তিনটি শাখা রয়েছে। ২০১৪ ও ১৫ সালে মুনাফা করলেও গত বছর থেকে লোকসানে পড়েছে। এনবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী জাকারিয়া হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকাশের মাধ্যমে পাঠালে ১-২ টাকা বেশি পাওয়া যায়। এ কারণে সবাই ওদিকে ছুটছে। ফলে আমাদের ব্যবসা খারাপ।’ তিনি আরও জানান, সম্প্রতি প্রকাশ্যে বিকাশ সেবা কিছুটা কমেছে। এখন তারা বাড়ি বাড়ি ও ক্যাম্পে গিয়ে সেবা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন:সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের শ্রমিকেরা প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, বিকাশ বৈধ না অবৈধ—এসব বোঝার দরকার নেই। সহজে টাকা জমা দেওয়া যায়, বাড়িতে টাকা চলে যায়। টাকাও একটু বেশি মেলে। এসব কথা উল্লেখ করে প্রতিনিধিদলটি তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে।

যেমন, কিছু মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এসব নম্বরে রেমিট্যান্সের অর্থ লেনদেন করা হয়। কোন কোন এজেন্ট এই ব্যবসা করছে, তাদের চিহ্নিত করে এজেন্ট চুক্তি বাতিল করতে হবে। আবার প্রবাসী আয় সংগ্রহকারী শীর্ষ যে ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়েছে, তাদের তাগাদা দিতে বলা হয়েছে। আয় আসা সবচেয়ে বেশি কমেছে ইসলামী ব্যাংকের। অন্য সুপারিশগুলো হলো—মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অর্থ জমাকারী ও উত্তোলনকারীর বিস্তারিত তথ্য (অর্থের উৎস) সংগ্রহ করতে হবে। প্রবাসে যাওয়ার সময় প্রত্যেককে ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় এক বছর আগেও ১ রিঙ্গিত দিয়ে ২৭ টাকা পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৮ টাকা। আবার যাঁরা অবৈধভাবে কাজ করছেন, তাঁরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে পারছেন না। এসব অর্থ লেনদেন হচ্ছে বিকাশ, রকেট–এর নাম ব্যবহার করে।

 প্রবাসী আয় বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিকাশ বেশ কিছু এজেন্টের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়নি বিকাশ কর্তৃপক্ষ।

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো এজেন্টের অনুমোদন বাতিল করলে, আইন অনুযায়ী আমরা বলতে পারি না। তবে আমরা কাজ করছি, সবাইকে নিয়ম মেনে সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নাম ব্যবহার করে যেন অবৈধ কাজ না হয়, এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

রকেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে যা চলছে এটাকে ডিজিটাল হুন্ডি বলা যায়। তবে আমাদের কোনো এজেন্ট অবৈধ প্রবাসী আয় বিতরণের সঙ্গে জড়িত না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিদলের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বেশ কিছু নির্দেশনা এবং মন্ত্রণালয়কে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে।

উসকে দিচ্ছে অর্থ পাচার: অর্থ পাচারের জন্যও ভরসা এখন হুন্ডিওয়ালারা। প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ডিজিটাল হুন্ডির কারণে এখন আর দেশে আসছে না। ওই অর্থ এখন দেশের বাইরে সেকেন্ড হোমের নিবন্ধন, বাড়ি, গাড়ি কেনাসহ নানা ধরনের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। ডিজিটাল হুন্ডি অর্থ পাচারকারীদের কাজটি সহজ করে দিয়েছে বলেই ব্যাংকাররা মনে করছেন।