Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: faruque on June 06, 2017, 10:50:02 AM
-
হৃদয়খেকো ‘রিয়া’র সর্বনাশী ফাঁদ!
শিরোনাম দেখে অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন, রিয়া একটি মেয়ের নাম। মেয়েটি হয়তো খুবই সুন্দরী, চপল এবং ধড়িবাজ প্রকৃতির প্রতারক। সে তার ভুবনমোহিনী রূপের মায়াজালে দুর্বল চিত্তের পুরুষের হৃদয়ে ভয়ানক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সময়-সুযোগ বুঝে মস্ত বড় সর্বনাশ ঘটায়। ফাঁদে পড়া পুরুষটির হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়ে নিরাপদে দ্রুত কেটে পড়ে। আপনি হয়তো এ কথাও ভাবতে পারেন, রিয়ার মতো মেয়েদের কারণে যুগ-যুগান্তরে, কাল-কালান্তরে এবং দেশ-দেশান্তরে যুদ্ধ-বিগ্রহ, ফ্যাতনা-ফ্যাসাদ এবং দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়ে মানব সভ্যতাকে বারবার পেছনে ঠেলে দিয়েছে। রিয়া সম্পর্কে আপনার ভাবনা যাই হোক না কেন সে ব্যাপারে আমি মাথা ঘামাব না। আমি বরং আপনাকে এমন এক রিয়ার সর্বনাশী কুকীর্তির কিছু নমুনা জানাব যা কিনা আপনার কল্পনার রিয়ার তুলনায় লক্ষ-কোটি গুণ বেশি বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে মানুষের আত্মা বা হৃদয় খেয়ে ফেলে। দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের জীবন-জীবিকা, মানসম্মান, পদ-পদবি এবং জৌলুসকে বরবাদ করে দেয়। আরবি শব্দ রিয়ার আদি উৎস ‘রা’ ‘আ’ যার অর্থ লোক দেখানো বা লোকজনকে দেখানোর জন্য উপরে তুলে ধরা। ইসলামী পরিভাষায় রিয়াকে বলা হয় গুপ্ত শিরক বা ছোট শিরক। আপনারা শিরক বা অংশীদারিত্বের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানেন। আল্লাহ কখনো শিরক বরদাস্ত করেন না এবং সাধারণ ইবাদত-বন্দেগিতে শিরককারীর গুনাহ মোচন হয় না। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যদি আমরা তার অন্যান্য সৃষ্টিকুলের দিকে তাকাই তবে লক্ষ্য করব যে, কোনো প্রাণীই কিছু কিছু সম্পর্কের অংশীদারিত্ব বরদাস্ত করে না।
স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান ইত্যাদি সম্পর্কের বাইরে দাতা-গ্রহীতা, নিয়োগকর্তা, কর্মচারী, শাসক-প্রজা, বিচারক-বিচারপ্রার্থী, আশ্রয়দাতা-আশ্রয়প্রার্থী সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথম পক্ষ কোনো দিন তার মর্যাদার সঙ্গে অন্য কারও অংশীদারিত্ব বরদাস্ত করে না। শিরক বা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শিরককারী যে পরিমাণ অপমান দ্বারা আল্লাহকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে তা অন্য কোনো গুনাহের দ্বারা একেবারেই অসম্ভব। রিয়ার তিনটি সাধারণ স্তর রয়েছে। প্রথম স্তরে মানুষ তার সৎ কর্ম, কোনো বিষয়ের ওপর গভীর পাণ্ডিত্য অথবা ভালো মানুষী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য এমনভাবে জাহির করতে থাকে যাতে লোকজনের মনে লোকটি সম্পর্কে এক ধরনের সম্ভ্রম ও মর্যাদা তৈরি হয়ে যায়। রিয়াকারীর যাবতীয় কৌশল কেবল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হয়ে থাকে। তারা চায় লোকজন বেশি বেশি তার সম্পর্কে জানুক এবং ভক্তি শ্রদ্ধায় গদগদ হয়ে তার কদম মুবারকে ঝাঁপিয়ে পড়ুক। দ্বিতীয় স্তরে, রিয়াকারী মানুষের জন্য নানারকম ফাঁদ তৈরি করে। নিজের সততা, জ্ঞান, ক্ষমতা, বুদ্ধিসত্তা এবং পরোপকারী মনোভাবকে নিঃস্বার্থ প্রমাণ করার জন্য সে নানা কৌশল ও ফন্দিফিকির শুরু করে। মানুষ তাকে দাতা হাতেম তাঈ, মহাজ্ঞানী লোকমান বা ওলিকুল শিরোমনি ভেবে তোয়াজ-তদবির সহকারে তার কাছে আনুগত্য প্রকাশ করুক এবং মাথানত করুক এমন মনোবাসনা নিয়ে সে লোক দেখানো ভালো কর্ম, ভালো আচরণ এবং ইবাদত বন্দেগি করতে থাকে।
নিজের অজান্তে তার কর্ম আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষ যেন তাকে তোয়াজ করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তৃতীয় স্তরে রিয়াকারী ধর্মের লেবাসে অতিমানব আখ্যা পাওয়ার জন্য লোক দেখানো ইবাদত বন্দেগি শুরু করে। অতিরিক্ত নামাজ-কালাম, তসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার, তাহজুদ-গুজার ইত্যাদি কর্মের মাধ্যমে সে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে মহান আল্লাহর সঙ্গে গুপ্ত শিরকে জড়িয়ে পড়ে। ফলে রিয়াকারীর তাবৎ আমল বরবাদ হয়ে যায়। দুনিয়াতে তার ভণ্ডামি জারিজুরি এক সময় প্রকাশ হয়ে পড়ে। তাছাড়া রিয়াকারী প্রকাশ্যে যত বড় সুনাম ও সুখ্যাতির অধিকারী হোন না কেন— তার নিজ ভুবনে তিনি সর্বদা জাহান্নামের কীট হিসেবে শাস্তিভোগ করতে থাকে। তার অন্তর, চোখ, শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি এবং অনুভূতিতে সব সময় জাহান্নামের অতৃপ্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। অন্যদিকে, তার মৃত্যুর পর তার স্থান যে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর সিজ্জিনে হবে তার ঘোষণাও পবিত্র কোরআনে আল্লাহ অনেক আগেই দিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রিয়া থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
-
Thanks for sharing .