Daffodil International University
Famous => History => Topic started by: Md. Zakaria Khan on June 13, 2017, 05:38:33 PM
-
হিজরতের দ্বিতীয় বছর ১৭ রমজান বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধ কুফর-শিরকের মর্মমূলে আঘাত করে বিস্ময়কর বিজয়ের মাধ্যমে সত্যের পতাকা মুক্ত আকাশে তুলে ধরেছিল। এদিন নিরস্ত্র অল্পসংখ্যক মুসলমানের হাতে কুফরের গর্বিত কপালে পরাজয়ের নীল চিহ্ন অঙ্কিত হয়। মক্কায় কাফেরদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিরা। সেখানেও মুসলমানদের নিরাপদে থাকতে দেয়নি কাফেরেরা। পরিস্থিতির ঘূর্ণিপাকে তৈরি হয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। এ যুুদ্ধে লোকবল ও অস্ত্রবলে উন্মত্ত ছিল কাফের বাহিনী। যুদ্ধ জয়ের বাসনায় ছিল কিছুটা বেপরোয়া। অপরদিকে মুষ্টিমেয় মুসলমানদের পর্যাপ্ত হাতিয়ার ছিল না। লোকবল ছিল নামেমাত্র। তবে তাদের ছিল ইমানি শক্তি। ছিল সত্যের পথে লড়ে যাওয়ার দুর্বার হিম্মত। ফলে পৃথিবী সেদিন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেছে, আবুু জাহেলের যে বাহিনী গুটিকয়েক মুসলমানকে হত্যার নেশায় ছুটে এসেছিল, যুদ্ধ শুরুর পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার ফুরসতও তারা পায়নি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সশরীরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহতায়ালার সাথে তার রুহের যোগাযোগ ছিল নিরবচ্ছিন্ন। মুসলমানরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য প্রান্তরের এক প্রান্তে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি তৈরি করেছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার সেখানে গিয়ে আল্লাহর স্মরণে তন্ময় হয়ে পড়তেন। একবার হযরত আবুু বকর (রাযি) ওই ঝুপড়িতে প্রবেশ করে দেখেন প্রাণের সবটুকু আবেগ মিশিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাতর স্বরে বলে যাচ্ছেন, হে আমার প্রভু! এই মুষ্টিমেয় সত্যের সৈনিক দল যদি আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তা হলে দুনিয়ায় তোমার নামের মহিমা প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। হে আল্লাহ! আমার সাথে তুমি যে ওয়াদা করেছিলে আজ তা পূর্ণ কর। দয়াময় রবের প্রতিশ্রুতির কোনো ব্যতিক্রম নেই।
মুসলমানদের সাহায্যে তিনি একদল ফেরেশতা পাঠিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতেই যুদ্ধের চিত্র পাল্টে গেল। নিরস্ত্র মুসলমানদের হাতেই বড় কাফের সরদাররা নিহত হতে লাগল। খোদ আবুু জাহেল মুসলিম দুই তরুণ ভাইয়ের হাতে নির্মমভাবে ধরাশায়ী হয়। এভাবেই মক্কার কাফেরদের ঔদ্ধত্য অহংকার চিরদিনের জন্য মরুর বালুতে ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়।
সূরা আলে ইমরানে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন, বদর প্রান্তরে সংখ্যায় স্বল্পতা সত্ত্বেও আল্লাহ তোমাদেরই বিজয়ী করেছেন। যদি তোমরা দ্বীনের পতাকাকে সুউচ্চ করার জন্য আজও সততা ও এখলাস নিয়ে ময়দানে পা রাখো, তা হলে অবশ্যই তিনি তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে বিপুল সাহায্য-সহযোগিতায় ভরপুর করে তুলবেন। এ জন্যই তিনি বলেন, সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার। অর্থাৎ আল্লাহপাকের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জীবনের প্রতিটি পর্বকে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অনুযায়ী পরিচালিত কর।
মাহে রমজানের এই বরকতময় সময় আমাদের ভেতরে তাকওয়া তৈরির এক অনবদ্য সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগালে আশা করা যায় আমাদের জীবনে আশাতীত এক পরিবর্তন সাধন করা যাবে।