Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: shawket on June 14, 2017, 09:47:27 AM
-
অত্যন্ত সুখের জীবন। অবৈধ কোনো লেনদেন নেই।
নেই কোনো ধারদেনা। দরদামের কোনো কাজ কারবার নেই। তাই কোনো উপরিও নেই। সরকারের দেওয়া বেতনেই চলে সংসার।
এভাবেই জীবনের কথা জানালেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, ‘সৎ জীবনযাপনের চেষ্টা করছি। এ জন্য হারামকে একদম না করেছি। হালালের ওপরই নির্ভরশীল। এতে কোনো কষ্ট নেই। ’
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এই সদস্যের নাম মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস। কক্সবাজার সদর সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তিনি। ‘ঘুষ বাণিজ্যে’ জড়িত নেই এমন পুলিশ নেই-এমন অভিযোগ মানতে নারাজ গোলাম কুদ্দুস। বলেন, ‘সৎ থাকার চেষ্টা করলেই হলো। একবার যখন সৎ হিসেবে পরিচিতি মেলে, তখন সততাই প্রতিনিয়ত তাঁকে টেনে তোলে। ’
কক্সবাজার শহর কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সদর সার্কেলের বর্তমান এএসপি একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে সর্বত্র জানাজানি রয়েছে। এ কারণে তাঁর কাছে কেউ অন্যায় আবদার নিয়ে যেতে চান না। তিনি অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। ’
মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘পুলিশ বিভাগে তাঁর মতো একজন সৎ নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে কাজ করছেন। ’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত বড়ুয়া বলেন, ‘আমি যে কদিন স্যারকে পেয়েছি, বুঝেছি তিনি একজন মহৎ ব্যক্তি। ’
জানা গেছে, মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে তাবলিগ জামায়াতে যোগ দিয়েছিলেন। তাবলিগে একেবারে ৪০ দিনের এক চিল্লা সময় দিয়ে তাঁর আমূল পরিবর্তন ঘটে। সেদিন থেকে কোনো অনৈতিক কাজে তিনি পা দেননি। কলেজজীবনে মুখে দাড়ি রেখে দেন। একদিন কলেজে যাওয়ার সময় ছেলের মুখে দাড়ি দেখে মা সেভ করার জন্য বারে বারে পীড়াপীড়িও করেছিলেন। মা বলেছিলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষা দিতে গেলে এসব নিয়ে আবার কোনো ঝক্কি-ঝামেলা হবে না তো!’
সেই মা গত ৯ জুন কক্সবাজার শহরে ছেলের সরকারি বাসায় বসে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জানেন বিমানে চাকরি পেয়ে ছেলেটা কিছুতেই বিসিএস দিতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। তাকে পাঠালাম বিসিএসে। আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আমার সন্তানের ভাগ্যে আমারই পছন্দের চাকরিটা জুটেছে। ’
মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমি সাদা জুব্বা, সাদা পায়জামা, মাথায় সাদা টুপি এবং কালো জুতা পরেই যাই বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা দিতে। ছিল মুখ ভর্তি দাড়ি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আমার মেধা বাদ দিয়ে পোশাক-আশাককে প্রাধান্য দেওয়া হলেও মনে কষ্ট পাব না। কিন্তু তা হয়নি। আমি সঠিক রায় পেয়েছি। ’
কেবল অফিসেই পুলিশের পোশাকে থাকেন তিনি। বাদবাকি সময় পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেন। কক্সবাজারে ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে, পুলিশের চৌকশ এই কর্মকর্তার সততার কথা। তিনি কোনো অবৈধ লেনদেনের ধারেকাছেও নেই। তাঁকে নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়েও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে প্রতিবেদককে। তিনি কিছুতেই এ প্রসঙ্গে আলাপে রাজি হচ্ছিলেন না। বলেন, ‘সৎ থাকাটা কোনো কৃিতত্ব হতে পারে না। তাই লেখারইবা কি আছে। ’ শেষপর্যন্ত তাঁকে বুঝানো হয়, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অসাধুদের সৎ জীবনে উৎসাহিত করতেই এই প্রতিবেদন। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাকে মাসিক যে বেতন দিয়ে থাকে তা যথেষ্ট। স্ত্রী ও মাকে নিয়ে সুখের সংসার আমার। ’
তাঁর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তাঁর সংসারের চাহিদা একেবারেই সীমিত। বাসায় রয়েছে তার বাবার ব্যবহৃত এক সেট সোফা। পরিবারের সদস্যদেরও একদম সাধাসিধে জীবনযাপন। এমনকি সারা বছরে মাত্র দুবার কাপড় দিতে হয় স্ত্রীকে। তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ তিনি। তাঁর সাথে থাকেন মা। বড় ভাই গোলাম রব্বানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে চাকরি করেন। মেজ ভাই গোলাম মোরশেদ বেসরকারি চ্যানেল দীপ্ত টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মার্কেটিং। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের মৃধা পাড়া শান্তিমোড়ের স্থায়ী বাসিন্দা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুসের বাবা মরহুম অধ্যাপক মো. আবদুল জব্বার ছিলেন শরিয়তপুর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।
ছাত্রজীবনে মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। রাজশাহী কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স করা মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস লেখাপড়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খানেই প্রথম। ২০০৭ সালে মাস্টার্স পাস করে চাকরি নেন বাংলাদেশ বিমানে। বিমানে চাকরির প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে তিনি বিসিএসে উত্তীর্ণ হন। যোগ দেন সহকারী পুলিশ সুপার পদে। শুরুতে কাজ করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব)।
সিলেটের একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী লন্ডনে থাকেন। তাঁদের অনেকের অট্টালিকা রয়েছে সিলেটে। লন্ডন প্রবাসীদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নিতে সক্রিয় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। সিলেটে এ রকম ১২ সদস্যের একটি ডাকাত দল ধরে পুলিশের এই চৌকশ কর্মকর্তা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন চাকরির শুরুতে।
পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত এই পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসলে সবক্ষেত্রেই আছে এমন অভিযোগ। তবে পুলিশের অভিযোগটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ’
তিনি সৎ জীবনযাপনের জন্য সকল শ্রেণি-পেশায় সততার চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘একজন সৎ মানুষের জন্য দুনিয়ায় যেমনি সাময়িক সুখ রয়েছে, তেমনি পরকালে দীর্ঘকালীন শান্তির নিশ্চয়তাও রয়েছে।
Source: http://www.kalerkantho.com/print-edition/2nd-rajdhani/2017/06/14/508511
-
Nice Writing. It was really informative.