Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: Shakil Ahmad on July 09, 2017, 06:10:01 PM

Title: বিদায় সুরসাধক...
Post by: Shakil Ahmad on July 09, 2017, 06:10:01 PM
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও সংগীত গবেষক সুধীন দাশ আর নেই। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। সংগীতের পেছনে জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়ে দিয়েছিলেন। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। গান গেয়েছেন, সুর করেছেন, করেছেন সংগীত পরিচালনা। সংগীত নিয়ে গবেষণার কাজটিও করে গেছেন নিরলসভাবে। তিনি নজরুলের গানের স্বরলিপিকার।

নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমপ্রভা দাশের কনিষ্ঠ সন্তান সুধীন দাশগুপ্তর জন্ম কুমিল্লার তালপুকুরপাড়ের বাগিচাগাঁওয়ে; ১৯৩০ সালের ৩০ এপ্রিলে।

সুধীন দাশের মরদেহ অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা বাসস সূত্র জানায়, সুধীন দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রমুখ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় সুধীন দাশের মরদেহ মিরপুরের বাসায় নিয়ে আসা হবে। সকাল ১০টায় নিয়ে যাওয়া হবে নজরুল ইনস্টিটিউটে, বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দুপুরে পোস্তগোলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

সুর–সাধনায় নিবেদিত এই একজীবনে সুধীন দাশ কুড়িয়েছেন অনেক সম্মান ও সম্মাননা। ১৯৮৮ সালে একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০১১’। তাঁর সাধনায় মুগ্ধ কয়েকজন সংগীতশিল্পী স্মরণ করলেন তাঁকে।

ফেরদৌসী রহমান

১৯৫৪ সালের পরের ঘটনা। আমাদের বাড়িতে তো প্রায়ই গানের আসর বসত। পুরানা পল্টনের সেই বাসায় আব্বা একবার সুধীন দাশ ও তাঁর স্ত্রী নীলিমা দাশকে দাওয়াত করলেন। আরও অনেকেই ছিলেন। দুজনে সেদিন রবীন্দ্রসংগীত গাইলেন। আমি তখন ছোট। গান শিখতাম আবদুল আহাদের কাছে। একটা সময় আহাদ চাচার চোখে সমস্যা দেখা দিলে তিনি আমাকে সুধীনদার কাছে গান শেখার কথা বলেন। গান শিখতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে খুব দারুণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ ছিলেন। তাঁর শেখানোর পদ্ধতিটাও ভালো ছিল। বাচ্চারাও তাঁকে খুব ভালোবাসত। মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভালো ছিলেন। ছিলেন খুব স্নেহপ্রবণ। নিজের বোনকে যেভাবে ভালোবাসতেন, আমাকে সেভাবেই ভালোবাসতেন।

ফাতেমা তুজ জোহরা

আমি সরাসরি তাঁর ছাত্রী ছিলাম না। কিন্তু অনেক কিছু তাঁর কাছে শিখেছি। খুব সুন্দর করে গান তুলে দিতেন। প্রশংসা করতেন, যা অনুপ্রেরণা জোগাত। একদিন তাঁর সঙ্গে হাঁটছি, জানতে পারলাম, তিনি খুব একটা চোখে দেখেন না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি চোখে না দেখলে হাঁটেন কীভাবে? বললেন, ‘সবাই ধরে নিয়ে যায়।’ আমি অবাক হতাম, একজন মানুষ চোখে না দেখার জন্য ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, তারপরও ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে নোটেশন ঠিক করছেন। এতটা ধৈর্য! নজরুলের গানের চলতি স্বরলিপিটা আদি সুরে পেলাম তো তাঁর জন্যই। সুধীনদা খুব ভালো বক্তৃতাও করতে পারতেন। মুগ্ধ হওয়ার মতো।

ফেরদৌস আরা

একবার একটি অনুষ্ঠানে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গাইতে গিয়ে গানের কথা নিয়ে সমস্যা হলো। অনেককেই ফোন করলাম। কেউ বলতে পারল না। যন্ত্রশিল্পীসহ সবাই বসে আছি। হঠাৎ মনে হলো সুধীন কাকার কথা। তখন কাকিমাসহ খাচ্ছিলেন। আমার কথা শুনে তখনই প্লেট রেখে উঠে গেলেন। বললেন, ‘আমি বুঝছি তুই দলবল নিয়া বইস্যা আছিস। ফোনটা একটু ধর।’ এরপর আলমারি থেকে দুটি বই বের করে গানটি খুঁজলেন। কিন্তু তাঁর মনে হলো, এগুলোয় ভুল আছে। এরপর ট্রাংক থেকে পুরোনো একটি বই বের করে আমাকে বললেন, ‘আরে এই গানটা তো এক মাইল লম্বা রে। তোর কোন স্তবক লাগব?’ অক্ষরগুলো ছোট বলে ঠিকমতো পড়তেও পারছিলেন না। কাকিমাকে বললেন, ‘ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা এনে দাও।’ এরপর সেই গ্লাস দিয়ে একটু একটু করে পড়ে আমাকে গানের কথা ঠিক করে দিলেন। এমন মানুষ আর কই পাব?

নাশিদ কামাল

সুধীন দাশ ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। কাজী নজরুল ইসলামের গানের রেকর্ড সংগ্রহ করার জন্য তিনি দিনের পর দিন প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। পরে নজরুল একাডেমি থেকে সেসব গানের স্বরলিপি তৈরির কাজে লেগে পড়েন। নজরুল ইনস্টিটিউট যখন নির্মিত হলো, তখন সেখানকার প্রশিক্ষক হলেন তিনি। নজরুলের গানের স্বরলিপি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হলো তাঁকে। আব্বাসউদ্দীন সংগীত একাডেমিতে তিনি গান শেখাতে আসতেন। তখন দেখেছি, টোস্ট বিস্কুট খেতে খুব ভালোবাসতেন।

বুলবুল ইসলাম

আশির দশকের শেষ দিকে আমি প্রথম ঢাকায় আসি। সে সময় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের অনুষ্ঠানে সুধীন দাশ ‘একদা তুমি প্রিয়ে’ গেয়েছিলেন। সেটা শুনে আমি চমৎকৃত হয়ে যাই। সে‌ যে কী এক অসাধারণ ভালো লাগা, এক অসাধারণ মুগ্ধকর স্মৃতি! আমি ৩০ বছর পরও যেন শুনতে পাই। তিনি মূলত নজরুলসংগীতের মানুষ। কিন্তু রবীন্দ্রনা‌থের গান ছিল তাঁর প্রাণের গান। মানুষ হিসেবে ছিলেন খুবই মজার। মুখে হাসি লেগেই থাকত। আমাদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতেন। সুধীন দাশ আর নেই—খবরটা পে‌য়েই ময়না‌কে (স্ত্রী শারমীন সাথী ইসলাম) সঙ্গে নি‌য়ে ছু‌টে গেলাম হাসপাতালে। অনেক কিছুই ম‌নে পড়‌ছে।

গ্রন্থনা: মনজুর কাদের

 
Title: Re: বিদায় সুরসাধক...
Post by: Anuz on July 09, 2017, 06:28:19 PM
তিনি তার সংগীত দিয়ে আমাদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন ............