Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Md. Sazzadur Ahamed on July 10, 2017, 12:10:04 PM
-
ধরুন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনার বসবাস। হুট করে যদি শরীরে সমস্যা দেখা দেয়, তখন শুরুতেই আপনার মাথায় কী চিন্তা আসবে? নিশ্চয় চাইবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে সেবা নিতে। গ্রামের এমন রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে দূরনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) টেলিমেডিসিন কার্যক্রম।
কীভাবে?
এই কার্যক্রমের পরিচালক ও ঢাবির বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাম্মানিক অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী গতকাল বিস্তারিত জানালেন এ ব্যাপারে। প্রথমেই রোগীকে যেতে হবে কাছের কোনো টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্রে। তারপর কেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেন। রোগীর কাছ থেকে তথ্য জানা ছাড়াও সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন পরীক্ষণের মাধ্যমে তাঁর অবস্থা জানতে পারেন চিকিৎসক। ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করা যাক। প্রতিটি টেলিমেডিসিন কেন্দ্রেই রয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্র। যন্ত্রপাতিগুলো হচ্ছে স্টেথোস্কোপ, ইসিজি যন্ত্র, মাইক্রোস্কোপ, এক্স-রে ভিউ বক্স। রোগীর সমস্যা জেনে চিকিৎসক কেন্দ্রের উদ্যোক্তাকে বলে দেন রোগীর কী পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। পরীক্ষার সময় ওই যন্ত্রকে সংযোগ করা হয় কম্পিউটারের সঙ্গে। আর তাই চিকিৎসক তাৎক্ষণিক ফলাফল জানতে পারেন।
নিজেদের তৈরি যন্ত্রপাতি
খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী বলেন, এসব কেন্দ্রে ব্যবহৃত ডিজিটাল যন্ত্রগুলো টেলিমেডিসিন কার্যক্রম দল উদ্ভাবন করেছে। পাশাপাশি দূরনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নিজেরাই সফটওয়্যার বানিয়েছি। প্রত্যেক রোগীর তথ্যই নিবন্ধিত থাকে এই সফটওয়্যারে। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮০০-এর বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ৭৫ শতাংশই মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন ২৫টি টেলিমেডিসিন কেন্দ্র রয়েছে।
বর্তমানে আটজন চিকিৎসক রয়েছেন রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। চিকিৎসকের সংখ্যাটা ধাপে ধাপে বাড়ছে বলে জানিয়েছে খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী। আর শুধু ওই সব যন্ত্রপাতিই নয়, আরও বেশি রোগের সেবা দিতে নানা যন্ত্র উদ্ভাবনের কাজ করছে তাঁদের গবেষণা বিভাগ। এতে কাজ করছেন ১৫ জন। আর তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রগুলোর কারিগরি রূপ দিতে কাজ করেন আরও তিনজন। দলটির বানানো যন্ত্র ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনুদান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির সহায়তায় চলছে এই টেলিমেডিসিন কার্যক্রম।
শুরুর কথা
খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম শুরুর কথা। বলছিলেন, দূর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমার নেতৃত্বে একটি দল ২০১১ সালে যন্ত্র ও সফটওয়্যার বানানো শুরু করে। ২০১৩ সালে এসে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষণ করি। তারপর এই কার্যক্রম চালু করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঢাবির বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের পরিচালনায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম। কারও আগ্রহ থাকলে সুযোগ রয়েছে তাদের নিয়ম মেনে স্থানীয় উদ্যোক্তা হওয়ার।
রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পদ্ধতি আরও সহজ করতে ‘টেলি আপা’ নামক এক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন তাঁরা। এর মাধ্যমে স্থানীয় কেন্দ্র থেকে একজন নারী রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে যোগ স্থাপন করে দিতেন। তবে অর্থের অভাবে এই কার্যক্রমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টেলি আপার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নেওয়া রোগীদের ৯৫ শতাংশই মহিলা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছে এই কার্যক্রম। ২০১৬ সালে পায় ব্র্যাক-মন্থন পুরস্কার। এরপর মন্থন সাউথ এশিয়া ২০১৬-এ ‘ফাইনালিস্ট’ সনদ লাভ করে। আর গত জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি ফোরামে (ডব্লিউএসআইএস) স্বাস্থ্য বিভাগে ‘চ্যাম্পিয়নশিপ’ পুরস্কার পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম।
ভবিষ্যৎ ভাবনা
দেশের আরও অনেক গ্রামে এই কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম দলের। খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী বললেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের আরও কিছু দেশে এই টেলিমেডিসিন কার্যক্রম শুরু করতে চাই। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম।
-
Very helpful post. Thanks for sharing..