Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Life Style => Fashion => Topic started by: Md. Abul Bashar on July 12, 2017, 12:20:29 PM

Title: আমি কেন সেলফি তুলি?
Post by: Md. Abul Bashar on July 12, 2017, 12:20:29 PM

আমি কেন সেলফি তুলি?
সপরিবারে এক ভদ্রলোক গিয়েছেন বিয়ের দাওয়াতে। সেখানে এক বন্ধুর বোন হঠাৎ করে তাঁর স্ত্রীকে বলল, ‘ভাবি, ভাই যে মেয়েদের সঙ্গে এত সেলফি তোলে, আপনি কিছু বলেন না?’

ভদ্রলোকের স্ত্রী হাসে, আর জানায় যে সে তো ফেসবুকেই নেই। বন্ধুর বোন এবার বলে, সে কারণেই তো এত সেলফি তোলেন। দাওয়াতের শেষে বন্ধুর বোন ভদ্রলোকের সঙ্গে একটা সেলফি তুলতে চায়। তিনিও হাত লম্বা করে তুলে ফেলেন।
ঘটনাটা সত্যি। সেই ভদ্রলোকের কাছ থেকে আরো জানা গেল তাঁকে তাঁর এক বন্ধু বলেছেন, আপনি যে ম্যাচিং ম্যাচিং সেলফি ফেসবুকে দেন ভাবি কিছু বলে না? শেষে বলেন ভালোই লাগে কিন্তু।

ওই ভদ্রলোক আর তাঁর স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। যাঁদের সঙ্গে তিনি সেলফি তোলেন, স্ত্রী তাঁদের চেনেন। ফলে গৃহশান্তি বজায় রয়েছে। না হলে কবেই না গৃহদাহ শুরু হয়ে যেত!

কথা হচ্ছে আসলেই আমরা কেন সেলফি তুলি? অক্সফোর্ড অভিধানে সেলফির সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে এটা এমন এক ছবি, যেখানে নিজেই নিজের ছবি সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যাম দিয়ে তোলা হচ্ছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংজ্ঞার নিচেই লেখা আছে মাঝে মাঝে ঠিক আছে কিন্তু প্রতিদিন সেলফি প্রকাশ করা ঠিক নয়।

সেলফি এ যুগে আত্মপ্রকাশের সহজ একটা উপায়। মানুষের মধ্যে আত্মপ্রেম বা নার্সিসিজমের যে ব্যাপারটা রয়েছে, কিংবা আত্মকেন্দ্রিকতা—সেগুলোও কারণ সেলফি তোলার। অস্বীকার করার উপায় নেই।
রবার্ট কর্নেলিয়াস ১৮৩৯ সালে ক্যামেরা দিয়ে যে আত্মপ্রতিকৃতি তুলে হালের সেলফির সূচনা করেছিলেন, তা এখন আর একজনের নিজের একক ছবিতে আটকে নেই। ফেসবুকে তো বেশির ভাগ দলগত সেলফিই দেখা যায়। এখানে ‘সেলফ’ মানে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে যায় আরও কজন, কখনো কোনো একটা বড় দল। ১০-১২ থেকে ১৬-২০ বা তার চেয়েও বেশিজনের দলকেও একসঙ্গে দেখা যায় সেলফিতে। এক হাতে এত জনকে নিয়ে সেলফি তুলতে গেলে ফ্রেমে সবাইকে পাওয়া যায় না, সেই সমাধানও বেরিয়ে গেছে—সেলফি স্টিক। মোদ্দা কথা হলো, উদ্‌যাপন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের এই যুগে সেলফি উদ্‌যাপনের অংশই।

সেলফি যেমন আত্মপ্রকাশের মাধ্যম, তেমনি আত্মপ্রচারও কি হয় না? নানা তরিকার আত্মপ্রচার রয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি—আমি ভালো আছি, সুখে আছি, জীবনকে উপভোগ করছি এটা জানান দেওয়ার জন্য যেমন সেলফি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম; তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কিংবা জনপ্রিয় মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে, সেটাও তুলে ধরা যায় সেলফিতে। তারকাখ্যাতিসম্পন্ন মানুষেরা আবার বিপত্তিতেও পড়েন এই সেলফির কারণে। ‘অটোগ্রাফ না, এটা তো ফটোগ্রাফের যুগ’—ভক্তরা তাই প্রিয় তারকা, প্রিয় ব্যক্তিত্বকে দেখলেই এগিয়ে যান। ক্যামেরা তো এখন কোনো ব্যাপারই না। হাতের স্মার্টফোন ধরে তারকার পাশে দাঁড়িয়েই ক্লিক! তারকা আর কী করবেন, ভক্তের সঙ্গে হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন।

কিছুদিন আগে দেখা গেল, বনানীতে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কিছু সেলফি রয়েছে বেশ কজন তারকার সঙ্গে। এমন ঘটনার পর এমন ছবি ছড়াতে সময় লাগে না। তারকা বা বিখ্যাত ব্যক্তির তখন বিব্রত হওয়া ছাড়া কিছুই তো আর করার থাকে না।

সেলফি তোলার ইতিহাস তো অনেক পুরোনো। প্রথম চন্দ্রবিজয়ীদের একজন বাজ অলড্রিন ১৯৬৬ সালে মহাকাশে নিজে নিজের ছবি তুলেছেন। তারপরও যুগের পর যুগ সেলফি তেমন একটা আলোচনায় ছিল না। স্মার্টফোন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে সেলফিও জনপ্রিয় হয়ে উঠল। ২০১০ সালের পর থেকে এ ধারা ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড অভিধানেও ঢুকে গেল সেলফি শব্দটি। স্মার্টফোনে সামনের ক্যামেরা এল, সেলফি তোলার বিশেষায়িত ফোনও এল। সেলফি যাতে সুন্দর হয়, সে জন্য বিশেষ বিশেষ অ্যাপ-ফিল্টার সবই তো রয়েছে। ফলে সেলফির জয়জয়কার যেন এক অব্যাহত ধারা। রাষ্ট্রপ্রধান, বিশ্বনেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবারই সেলফি দেখা যায়।
সেলফিতে নিজের চেহারা কেমন লাগছে, এ ভাবনা কমবেশি সবার মধ্যেই থাকে। ছেলেমেয়ে দুপক্ষেরই। মেয়েদের মধ্যে বিশেষ করে কম বয়সীদের মধ্যে পাউট ফেস, ডাক ফেস করে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। ‘ক্যামেরা ওপরে ধরেন, আমাকে মোটা লাগছে’—সেলফি তোলার সময় এমন কথা মাঝেমাঝেই শোনা যায়। কীভাবে নিজেকে সুন্দর দেখাবে সেটাই আসল কথা।

সেলফিতে তাৎক্ষণিক একটা ব্যাপার রয়েছে। মুহূর্ত ধরে রাখা, তখনই সেটা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করার যে সুবিধা, এটা তো অনেকেই আমরা নিতে চাই। হয়তো কোথাও বেড়াতে বা খেতে গেছেন বন্ধুবান্ধবসহ। কিংবা পরিবারের সঙ্গে। বেড়ানো কিংবা খাওয়ার সঙ্গে প্রধান অনুষঙ্গ হলো সেলফি তুলে পোস্ট করা। এ কাজটা করার জন্য হয়তো অন্যদের একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাৎক্ষণিক বা সরাসরি সম্প্রচারের মতো একটা আনন্দ পাওয়া যায়। ছবি দেওয়ার পর একটু পরপর ফেসবুক খুলে দেখা ‘কয়টা লাইক পড়ল’—এও এক অভ্যাস। ফেসবুকে যথেষ্ট সংখ্যক বন্ধু থাকার কারণে আর প্রতিদিনই ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটির জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, কোন ধরনের সেলফি বেশি লাইক পায়। একাধিক ওয়েবসাইটের সঙ্গে তা মিলেও যায়। সবচেয়ে বেশি লাইক পায় কয়েক ধরনের সেলফি। সন্তান বা পরিবারের সঙ্গে তোলা সেলফি জনপ্রিয়তায় রয়েছে এগিয়ে। পোষা প্রাণীর সঙ্গে তোলা সেলফিও লাইক পায় বেশি। তবে আমাদের দেশে এ ধারাটা কম। ভ্রমণের ছবিতে লাইক পড়ে প্রচুর। সে ভ্রমণ যদি হয় পরিবারের সঙ্গে, তবে লাইক বেড়ে যায় তরতর করে। ফেসবুকে জনপ্রিয় এমন কেউ যদি আপনার বন্ধুতালিকায় থাকে, তবে তাঁর সঙ্গে একটা সেলফি তুলে তাঁকে ট্যাগ করে দিলেই লাইকের বন্যা বয়ে যায়। খুব পরিপাটি সাজপোশাকে সেলফি তুললে তাতেও বেশি লাইক পড়ে। না কিনে বেশি লাইক পাওয়ারও নানা হিসাব-নিকাশ রয়েছে। কোন সময়ে ছবিটা পোস্ট করা হচ্ছে, এটা একটা বিষয়। ফেসবুকের প্রথম দিকে দেখতাম, রাত ১০টার পর সক্রিয় বন্ধু কমে যাচ্ছে। এখন তা উল্টো। রাত যত গভীর হয়, ফেসবুক তত সরগরম।

ছবি যেমন কথা বলে, সেলফি তেমন কথা বলে; বরং একটু বেশিই বলে। বন্ধুদের কোনো এক দলের ৬ জনের সেলফি প্রায়ই দেখতাম। কিছুদিন পর দেখা গেল দলটি চারজনের। পরে জানা গেল, দুজনের সঙ্গে বাকিদের বন্ধুত্ব কমে গেছে। আবার এক দম্পতির হাসিখুশি, ঘন ঘন সেলফি চলল বেশ কয়েক মাস। তারপর তাঁদের আর কোনো ছবি দেখা যায় না ফেসবুকে। আরও কিছুদিন পর দেখা গেল দুজনের একা একা ছবি। অবশেষে জানা গেল, তাঁরা আর একসঙ্গে থাকছেন না। সম্পর্ক, সামাজিক অবস্থান-এসবই প্রকাশ করে সেলফি।

সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা এমনকি প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটছে। ১৩ এপ্রিল চলন্ত ট্রেনে সেলফি তুলতে গিয়ে কলকাতা শহরের কাছে লিলুয়া স্টেশনে চার বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। নিজের বীরত্ব দেখাতে গিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় সেলফি তুলতে যান অনেকে। তখনই ঘটে বিপত্তি। তাই স্থান-কাল-পাত্র মাথায় রেখেই সেলফি তোলা ভালো। সেলফিকে সময় আর জীবনের উদ্‌যাপন হিসেবে নেওয়াটাই তো আসল।

সুন্দর সেলফি তুলতে

* বিভিন্ন কোণ থেকে ক্যামেরা ধরে দেখুন।

* আপনার কাঁধ ছবির ফ্রেমের কোথায় তা দেখুন। বেখাপ্পা লাগলে ক্যামেরার অবস্থান পরিবর্তন করুন।

* আলোতে দাঁড়ান।

* নতুন কোনোভাবে পোজ দিন।

* মজার কোনো কিছু করতে পারেন।

* সেলফি স্টিক, স্মার্টফোন ক্যামেরার জন্য বাড়তি লেন্স ব্যবহার করতে পারেন।

* পারলে পুরো শরীরের ছবি তুলুন।

* সুন্দর পটভূমি বেছে নিন।

* আলোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন না।

* নিজেকে প্রকাশ করুন।
Title: Re: আমি কেন সেলফি তুলি?
Post by: afrin.ns on February 17, 2018, 10:01:36 AM
Thanks for sharing.