Daffodil International University

Faculty of Science and Information Technology => Environmental Science and Disaster Management => Topic started by: Zannatul Ferdaus on July 12, 2017, 01:30:49 PM

Title: ডাইনোসরের পর এ বার গণবিলুপ্তির পথে মানুষও?
Post by: Zannatul Ferdaus on July 12, 2017, 01:30:49 PM
ডাইনোসরের পর এ বার মানুষ। ‘মাস এক্সটিঙ্কশন’  বা গণবিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে গোটা মানবসভ্যতা?

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে এই ‘অশনি সংকেত’ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেছেন, ষষ্ঠতম এই বিলুপ্তির নাম হবে ‘অ্যানথ্রোপোজেনিক বা হ্যালোসিন এক্সটিঙ্কশন’। যাতে শেষ হয়ে যাবে মানবসভ্যতা। আর এই প্রথম তার জন্য দায়ী থাকবে মানুষই।
জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন তাঁর ‘ডারউইনবাদ’-এ এই ধরনের বিলুপ্তির নাম দিয়েছিলেন- ‘যোগ্যতমের উদবর্তন’ (সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট)। যার মানে, যে সব প্রাণী জীবন সংগ্রামে টিঁকে থাকতে পারবে পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের অভিযোজন ঘটিয়ে, তারাই কেবল বেঁচে থাকতে পারবে। তাদেরই হবে উদবর্তন। বাকিরা কালে কালে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। বহু কোটি বছর আগে ঠিক যে ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর আগে পাঁচ বার এমন গণবিলুপ্তি হয়েছে পৃথিবীতে। যার মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল ২৫ কোটি বছর আগে। প্রায় ৯৬ শতাংশ জলচর এবং ৭০ শতাংশ স্থলচর প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যু হয়েছিল ওই মহাধ্বংসে। সেই তালিকায় ছিল ডাইনোসররাও। শাকাহারী বা হার্বিভোরাস তো বটেই,  এমনকী  বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ভয়ঙ্কর মাংসাশী বা কার্নিভোরাস ডাইনোসররাও। উল্কাপাত, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বেরনো লাভাস্রোতের মতো নানা প্রাকৃতিক এবং মহাজাগতিক শক্তিই ছিল সেই বিনাশের মূল কারণ।
গবেষণা বলছে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধির জন্য গত ৫০ বছরে বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩০ শতাংশ। ২০৬০-র মধ্যে যা পৌঁছবে ১০ লক্ষ কোটিতে। বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের জোগান দিতে হিমশিম খাবে মানবসভ্যতা। টান পড়বে প্রকৃতির ভাঁড়ারেও। ইতিমধ্যেই ক্রমবর্ধমান দূষণ, চোরাশিকার, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ আর মানুষের জন্য হওয়া প্রাকৃতিক অবক্ষয়ের কারণে ২৫ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ১৩ শতাংশ পাখি বিলুপ্তির পথে।

জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করেই বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি বোঝা যায়। তাতেই বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় এই বিনাশ ঘনিয়ে আসবে পৃথিবীর বুকে। কারণ,-

-দ্রুত হারে কমে আসছে জৈব সম্পদ
-মাত্রা ছাড়াচ্ছে দূষণ
-সেই সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের মতো গ্রিন হাউস গ্যাস
-তার ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উষ্ণায়ন
 

বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে নাসার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, তুষার যুগের পর থেকে গত পাঁচ হাজার বছরে পৃথিবীপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও ২ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলেই আশঙ্কা নাসার বিজ্ঞানীরা

‘নেচার’-এর ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মানুষের গণবিলুপ্তি এর আগেও হয়েছে। তবে খুব বড় আকারে নয়। এই বিলুপ্তির সূচনা হয়েছিল যখন বিবর্তনের ধারায় আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। ৫০ হাজার বছর আগে থেকে শুরু করে এই বিলুপ্তির ঢেউ আছড়ে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মগুলিতেও। ১০ থেকে ১১ হাজার বছর আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ৩ থেকে ১২ হাজার বছর আগে ইউরোপে ব্যাপক হারে গণবিলুপ্তি হয়। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় প্রায় তিন হাজার বছর আগে। অর্ধেকেরও বেশি ‘মেগাফনা’ প্রজাতি অর্থাৎ বৃহৎ স্তন্যপায়ীরা হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও।

গণবিলুপ্তিতে লাগাম টানতে সমাধান সূত্রও বাতলেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেছেন, সংরক্ষণ নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রকৃতি বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের একজোট হয়ে সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন আনতে হবে মানুষের অভ্যাসেও। তা হলেই বাঁচবে মানুষ। রক্ষা পাবে আগামী প্রজন্ম।