Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Raihana Zannat on July 12, 2017, 04:20:37 PM
-
স্বামী-সন্তানহারা ইজাতন বেওয়ার (৭৫) সংসারে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। এই বয়সেও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। কাজ জুটলে ছয় ও সাত বছরের দুই নাতি-নাতনি চাঁদনী ও মাহিনের মুখে ভাত জোটে।
এক সপ্তাহ ধরে চারদিকে বন্যার পানি থই থই। যমুনাপারের গ্রাম রোহদহের মানুষ দলে দলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু নাতি-নাতনিকে নিয়ে স্বামীর বসতভিটা আঁকড়ে ধরে পানিবন্দী ঘরে এই কয়েক দিন পড়ে ছিলেন ইজাতন। পানি হুহু করে বাড়তে থাকলে নিরুপায় হয়ে অনাহারী দুই শিশুকে নিয়ে তিন দিন আগে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা ইউনিয়নের রোহদহ পুরোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ওঠেন তিনি। পলিথিন টেনে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নেন। পেছনে যমুনার ভয়াল স্রোতের গর্জন। রাতে দুই শিশুর ভয়ে ঘুম আসে না।
বৃদ্ধা ইজাতনের ঘরে একমুঠো চাল নেই। অনাহারী দুই নাতি-নাতনি ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। এ বৃদ্ধার দুই ছেলেমেয়ের একজনও বেঁচে নেই। এই দুই নাতি-নাতনি তাঁর মৃত মেয়ের সন্তান।
গত শনিবার পুরোনো বাঁধে খবর পৌঁছায়, এক কিলোমিটার অদূরে নতুন বিকল্প বাঁধে সরকারি ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
ত্রাণের আশায় বৃদ্ধা ইজাতন গত শনিবার বানের পানি মাড়িয়ে দিনভর রোহদহ পুরোনো বাঁধ থেকে নতুন বাঁধে দিনভর ছুটোছুটি করেন। কিন্তু দিন শেষে খালি হাতে বাঁধে ফেরেন ইজাতন।
আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে রোহদহ পুরোনো বাঁধে বৃদ্ধা ইজাতন বেওয়ার ঝুপড়ি ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ঝুপড়ি ঘরের ভেতরে একটি পাতিলে পাটশাক সেদ্ধ করছেন। দুই নাতি-নাতনি চাঁদনি ও মাহিন চুলার কাছে থালা পেতে বসে নানির রান্না শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে।
কী দিয়ে রান্না হচ্ছে, জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ইজাতন বেওয়া। তিনি বলেন, ‘রোহদহ গাওত একনা ঘর আছে। কিন্তু ঘরত এক মুঠো চাল নাই। সাত দিন ধরে পানিবন্দী। সবার বাড়িত বন্যার পানি। কেউ কাজে লেয়না। আজ বিয়ানবেলা ওবাড়ি থ্যাকে একনা পাটের শাক চ্যায়া আনছি। সেকনা কোনা সেদ্ধ করিচ্চি। কিন্তু ছল দুডা তো ভাত খাতে চাচ্চে। ভাত পামো কোনটি? খিদায় জানডা বার হয়্যা যাচ্চে, কেউ অ্যাকনা চাল দিলে দুডা ছলক নুন দিয়ে পান্তা খাওয়াবার পারনুহুনি।’
ইজাতন বেওয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহদহ গ্রামের অবস্থা সম্পন্ন কৃষক ছিলেন তাঁর স্বামী ছমির উদ্দিন শেখ। যমুনা নদী জমিজমা ভিটেমাটি সব গিলে নিঃস্ব করেছে। ছমির শেখ মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ইজাতন বলেন, ‘যমুনা হামার সব শ্যাষ করে দিচে। ঘরবাড়ি, বসতভিটা সব গিলে খাচে। এখন বানের ঢলত ভাসিচ্চি। খিদার জ্বালায় না খ্যায়া মরিচ্চি।’
বৃদ্ধা ইজাতন বেওয়ার মতোই অসহায় চার শিশুকে নিয়ে ক্ষুধার সঙ্গে লড়ছেন তাঁর বিধবা পুত্রবধূ মরিয়ম নেছা। গত বছর চায়ের দোকানে বিদ্যুতায়িত হয়ে স্বামী কমর উদ্দিন মারা যাওয়ার পর থেকেই সংসারে হাল ধরেন মরিয়ম। রোহদহ বাজারে চা বিক্রি করে সারা দিনে যে উপার্জন হয়, তা দিয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকন্যা মুগলি (৭) এবং নাতি নিহাদ, লিমন ও নাতনি লিমার মুখে ভাত জোটে। মুগলি ছাড়া তিনজন পড়ালেখা করছে রোহদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মরিয়ম বলেন, যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে রোহদহ বাজার প্লাবিত হয়। চায়ের দোকান বন্ধ হওয়ায় পুঁজি ভেঙে কয়েক কেজি চাল কিনেছিলেন। আট দিন ধরে পানিবন্দী। ঘরের চাল-ডাল সব শেষ। চার দিন আগে পুরোনো বাঁধে এসে উঠেছেন। মরিয়ম নেছা বললেন, ‘এখন পাটশাক, কচুশাক সেদ্ধ কর্যা খাচ্ছি। কিন্তু ছোট অবুঝ শিশুরা ভাত খ্যাবার চায়। একটু ইলিপের জন্য অনেক ছুটোছুটি করেছি, পাইনি।’
(copied)