Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: rumman on July 14, 2017, 02:43:27 PM

Title: The evil consequences of jealousy
Post by: rumman on July 14, 2017, 02:43:27 PM


হিংসা বলা হয় অপরের সুখ-শান্তি দেখে ব্যথিত হয়ে তা দূর হওয়ার প্রত্যাশা করা। পরিভাষাবিদ আল্লামা জুরজানি (রহ.) বলেন, ‘হিংসা বলা হয়, হিংসাকৃত ব্যক্তির নিয়ামত দূরীভূত হয়ে হিংসুকের মধ্যে চলে আসার আকাঙ্ক্ষা করা। ’

আল্লাহ তাআলা তাঁর কোনো বান্দাকে ধন-দৌলত দান করেছেন, কাউকে স্বাস্থ্য দান করেছেন, কাউকে সুখ্যাতি দান করেছেন, কাউকে সম্মান দান করেছেন, কাউকে নেতৃত্ব দান করেছেন, আবার কাউকে দান করেছেন জ্ঞান। হিংসুকের মনে এ খেয়াল জন্মায় যে এ নিয়ামত কেন তার অর্জিত হলো? যদি তার থেকে এ নিয়ামত চলে যেত, তাহলে ভালো হতো! তাই অন্যের বিপদে সে খুশি হয়, আর যদি অন্যের ভালো কিছু অর্জিত হয়, তাহলে সে অন্তরে ব্যথা পায়। সে আফসোস করতে থাকে, কেন ওই ব্যক্তি আমার চেয়ে বড় হয়ে গেল, উন্নতি লাভ করল! এমন মানসিকতার নাম হিংসা। এখানে হিংসার কিছু অপকারিতা তুলে ধরা হলো—

হিংসা পুণ্য বিনষ্ট করে : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা পুণ্যকে এমনভাবে বিনষ্ট করে দেয়, যেভাবে আগুন কাঠকে ভস্মীভূত করে দেয়। ’ (আবু দাউদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আগের লোকদের নৈতিক ব্যাধি বিস্তার লাভ করবে। সে ব্যাধি হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। ’ (জামে তিরমিজি)

হিংসা করা পাপ : আমরা যেসব কাজ করি, তার মধ্যে কিছু কাজ পুণ্যের, আর কিছু কাজ পাপের। পুণ্য ও পাপের কিছু কাজ প্রকাশ্য, আবার কিছু কাজ অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য পাপ কাজের মধ্যে হিংসা অন্যতম। হিংসা এমন নীরব অনল, যা ক্রমে ক্রমে জ্বলে ওঠে এবং মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। অথচ মানুষের কোনো খবর থাকে না যে তার ভালো আমল নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

হিংসা থেকে বেঁঁচে থাকা ফরজ : মানুষের মধ্যে হিংসা নামক ব্যাধি কার্যকলাপে লুকিয়ে আছে। খুব কমসংখ্যক ব্যক্তিই এ ব্যাধি থেকে বাঁচতে পারে। অথচ হিংসা থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ কোরো না ও অন্যের দোষ চর্চা কোরো না। ’ (সহিহ মুসলিম)

হিংসা ভাগ্যে অবিশ্বাসের নামান্তর : হিংসুক মূলত আল্লাহ তাআলার তকদিরের ব্যাপারে অভিযোগ করছে যে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে এ নিয়ামত কেন দিয়েছেন, আমাকে কেন দেননি? এটি হলো আল্লাহ তাআলার ফয়সালার ওপর তার অভিযোগ। সে যেন একচ্ছত্র ক্ষমতাবান স্রষ্টার ওপর অভিযোগ করছে এবং দয়াময় প্রভুকে দোষারোপ করছে। এটি ভাগ্যে অবিশ্বাসের নামান্তর।

হিংসা করার কারণ : হিংসা করার অনেক কারণ রয়েছে। মনীষীদের মতে, হিংসার প্রধান কারণ সাতটি। যথা—

ক. শত্রুতা, খ. সমপর্যায়ের লোকদের মান-সম্মান দেখে নিজের মধ্যে তা দুর্বিষহ বোধ হওয়া, গ. অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করা, ঘ. বিস্ময়বোধ, ঙ. কাঙ্ক্ষিত বিষয় হাতছাড়া হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, চ. শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের লোভ, ছ. হীনম্মন্যতা।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ লাভ হয়, তাহলে তাদের কাছে খারাপ লাগে। আর যদি তোমাদের অকল্যাণ হয়, তাহলে তাতে তারা আনন্দিত হয়। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২০)

হিংসা পৃথিবীতে অশান্তির কারণ : শত্রুতার কারণে হিংসার জন্ম হয়। পরিণতিতে অনেক সময় ভয়াবহ দ্বন্দ্ব-কলহ ও খুনাখুনির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিপক্ষের নিয়ামত বিলোপ সাধনের ফন্দি-ফিকিরে জীবন ও সময় ব্যয় হয়। কখনো কখনো প্রতিপক্ষের দোষ চর্চা ও মানহানির চেষ্টা চালানো হয়। হিংসার আগুন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ভাই-ভাইয়ের মধ্যে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। হিংসার উপাদানের উপস্থিতি যেখানে যত বেশি ঘটবে, হিংসাও সেখানে সেই পরিমাণ প্রবল আকারে পাওয়া যাবে।

হিংসার প্রতিকার : মানুষের আত্মার ব্যাধিগুলোর অন্যতম ব্যাধি হলো হিংসা। আত্মার এ রোগের প্রতিকার একমাত্র ইলম ও আমল দ্বারাই সম্ভব। যে ইলম দ্বারা হিংসার চিকিৎসা করা যায়, তা হলো—এ কথা নিশ্চিতভাবে জানা যে হিংসা একটি মারাত্মক রোগ। এ হিংসার ফলে হিংসুকের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ যার প্রতি হিংসা করা হয়, তার ইহলৌলিক ও পারলৌকিক কোনো ক্ষতি হয় না, বরং এ হিংসার ফলে সে লাভবান হয়। কেউ এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলে তার জন্য হিংসা ত্যাগ করা সহজ হবে।

হিংসার ভিত্তি হলো দুনিয়ায় প্রেম ও সম্পদের মোহ। ফলে ব্যক্তি যদি অন্তর থেকে দুনিয়ায় প্রেম ও সম্পদের লোভ-লালসা বের করে দিতে পারে, তাহলে হিংসার রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করবে।   


Source: লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।