Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Topic started by: taslima on October 04, 2017, 04:53:01 PM

Title: গেঁটে বাত হলে কী করবেন?
Post by: taslima on October 04, 2017, 04:53:01 PM
বাতের ব্যথায় শয্যাশায়ী ও কর্মক্ষমতাহীন হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা কম নয়। পেশি ও অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা হওয়াকে বাত বলে। গাউট বা গেঁটে বাত এমন একধরনের রোগ, যার উদ্ভব হয় মেটাবলিজমের বিশৃঙ্খলা থেকে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, এই ব্যথা হঠাৎ তীব্র অসহনীয় রকমের হয়ে থাকলেও সাধারণত পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

কেন হয়?
গেঁটে বাত একপ্রকার সিনড্রোম, যা ইউরেট নামের একধরনের লবণদানা জমে জোড়া বা সঞ্চিত সৃষ্ট প্রদাহ, যা শরীরের রক্তের প্লাজমায় অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের উপস্থিতির ফলে ঘটে থাকে। গেঁটে বাত স্বল্পকালীন তীব্র প্রদাহ বা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ—এই দুই প্রকারের হতে পারে। আবার যে কারণে রক্তের ইউরেট লবণ বেড়ে যায়, তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন পারিপার্শ্বিক বা পরিবেশগত কারণ, ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের কারণে বা ব্যক্তির জন্মগত ত্রুটির কারণে, যাকে জেনেটিক কারণও বলা যায়।
অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড দেহে দুইভাবে জমতে পারে। যেমন অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন ও ইউরিক অ্যাসিড দেহ থেকে নির্গত হতে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। ইউরিক অ্যাসিড দেহ থেকে সাধারণত কিডনির সাহায্যে বের হয়। কোনো কারণে, বিশেষ করে কিডনির রোগের কারণে কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাসে অসুবিধা হতে পারে।

কাদের বেশি হয়?
পুরুষদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ পাঁচ গুণ বেশি। গেঁটে বাত সাধারণত কম বয়সী পুরুষ ও বেশি বয়সী নারীদের হয়ে থাকে। মেনোপোজ হওয়ার পর নারীদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। যাঁরা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি বেশি খান, তাঁদের এই রোগ বেশি হয়।

গেঁটে বাতের লক্ষণ
এই রোগের প্রধান প্রধান উপসর্গের মধ্যে পায়ের বুড়ো আঙুলের অসহনীয় ব্যথাসহ হাঁটু, গোড়ালি বা কাঁধে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে বেড়ে যেতে পারে।
হঠাৎ তীব্র ব্যথা, এমনকি ব্যথার কারণে ঘুম ভেঙে যাওয়া। পায়ের বুড়ো আঙুলের গোড়া ফুলে লাল হয়ে যাওয়া। হাঁটু, কনুই বা অন্য যেকোনো জোড়া ফুলে যাওয়া। ক্রমান্বয়ে হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় হতে থাকে। ইউরেট লবণের দানা জমাট বেঁধে টফি তৈরি করতে পারে। ক্রমান্বয়ে জোড়া স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারাতে পারে।
গিঁটের ব্যথা ও অন্যান্য বাতের ব্যথা আলাদা করার উপায় কী?
সহজেই আলাদা করা যায়। এটি মধ্যবয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়। আরও কিছু বৈশিষ্ট্য, যেমন পায়ের গোড়ালির জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, তীব্র ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। মজার বিষয় হলো, যদি গিঁটের বাতের রোগীকে চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে প্রথম প্রথম তিন থেকে সাত দিন বা দশ দিনের মধ্যে ব্যথাটি চলে যাবে। ফোলাটাও কমে আসবে। এত তীব্র ব্যথা হয় যে ব্যথানাশক ওষুধ দিতেই হবে। আর বাতজ্বর যেমন ছোট বয়সে হয়, ৫ থেকে ১৫ বছরে হয়, ক্ষেত্রবিশেষে একটু বড়দেরও হতে পারে। কিন্তু সেটার আশঙ্কা কম। বাচ্চাদের জন্য সেটা প্রযোজ্য। সেই বাতজ্বরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যে জয়েন্টের ব্যথাগুলো চলে যাবে, থাকবে না। আর অন্য যে বাতগুলো যে জয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করবে এবং সেখানেই থাকতে চাইবে।

নো কার্ব ডায়েট থেকে কি গিঁটে ব্যথা হয়?
হ্যাঁ হতে পারে। যাঁরা ডায়েটে একেবারে শর্করা বাদ দিয়ে প্রোটিন বেশি করে খেয়ে থাকেন, তাঁদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেশি বেশি তৈরি হয়।

চিকিৎসা ও এর প্রতিকার
প্রাথমিক চিকিৎসা—আক্রান্ত জয়েন্টে বরফ লাগাতে হবে এবং বিশ্রামে রাখতে হবে। বেদনানাশক ওষুধ বেশ কার্যকর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা—ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে। মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, মাংস (হাঁস, ভেড়া, কবুতর, খাসি ইত্যাদি), ডিম, শিমের বিচি, কলিজা ইত্যাদি খাওয়া যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। যেসব রোগের কারণে গিঁটে ব্যথা হয়, সেসব রোগের যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। কিছু ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
রিহ্যাবিলিটেশন ও ফিজিক্যাল থেরাপি লাগতে পারে।

সতর্কতা
গেঁটে বাত হলে হাত বা পায়ের দিকে বেশি নজর দিতে হবে, যাতে হাত বা পায়ে কোনো আঘাত না লাগে। কারণ, আঘাত লাগলে এ রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়।

লেখক: চিকিৎসক।

Source  http://www.prothom-alo.com/life-style/article/1332616/%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%81%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8