Daffodil International University

Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Mousumi Rahaman on October 28, 2017, 03:05:55 PM

Title: হাড় ক্ষয় হলে কী করবেন?
Post by: Mousumi Rahaman on October 28, 2017, 03:05:55 PM
প্রতিবছর ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস পালিত হয়। এবারে এ দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল হাড়কে ভালোবাসুন, আপনার ভবিষ্যৎ রক্ষা করুন।

অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বোঝায়। এতে হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাড়রা বা ফুলকো হয়ে যায়। এতে হাড় অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।

৫০ বছর পেরুবার পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। কারও কারও আগেও হয়।

যাঁদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাঁদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। নারীদের পিরিয়ডের পর হাড় ক্ষয়ের হার বেড়ে যায়।

উপসর্গ

প্রথমত, কোনো শারীরিক লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশকে কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, মেরুদণ্ডে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।

কাদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি?

অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

l বয়ঃবৃদ্ধি

l স্ত্রী লিঙ্গ
l জিনগত ত্রুটি
l অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা
l হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও নারীর)
l অতি খর্বাকৃতি

সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

l ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
l ধূমপান

l অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি]
l ক্ষীণকায় দৈহিক আকার
l আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস
l বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/চকলেট গ্রহণের অভ্যাস
l খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু
l কোমল পানীয় ও মদ্যপান

যাঁরা দীর্ঘ দিনের অচল, যাঁরা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের হতে পারে। অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ—হাইপারথাইরয়িডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়িডিজম, কুসিং সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।

চিকিৎসা

এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রোধ করা।

এরপর বেশ ওষুধ পাওয়া যায় যেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে।

যেহেতু হাড় ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর রিকভারের সম্ভাবনা থাকে না, তাই একে আগেভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতিমধ্যেই হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।

কীভাবে হয় হাড় ক্ষয় রোধ?

অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক, যার জন্য প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার উত্তম।

১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে। এতে হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাড় ক্ষয় কমায়।

২. নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার খান:

হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খান।

ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে।

৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। কারণ, এতে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি করে।

৪. ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৫. হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমের পিচ্ছিল ভাব দূর করুন।

৬. রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অন্ধকারে চলাফেরা করবেন না।

৭. অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না।


সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়