Daffodil International University
Faculty of Allied Health Sciences => Nutrition and Food Engineering => Topic started by: Nahian Fyrose Fahim on March 08, 2018, 04:33:11 PM
-
কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশ, অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া, অতিরিক্ত ওজন ছাড়া আরো নানা কারণে কিডনি রোগ হতে দেখা যায়। যে কারণেই কিডনির সমস্যা হোক না কেন দীর্ঘ মেয়াদি কিডনি রোগের চিকিৎসায় একমাত্র উপায় হলো সঠিক পথ্য। অন্যান্য রোগের চেয়েও খুব হিসাব-নিকাশ করে কিডনি রোগীর চিকিৎসার পথ্য নির্ধারণ করতে হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধিকে ধীর গতিতে চালোনার ক্ষেত্রে সঠিকপথ্য দারুণভাবে কার্যকরী। কিছু ক্ষেত্রে সঠিক পথ্য মেনে চললে রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রাকে অনেকটা নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে রোগী ভেদে কিডনির পথ্য নির্ধারণে কিছুটা ভিন্নতা থাকে। কেননা রক্তে ইলেকট্রোলাইটসের পরিমাণ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ, রক্ত ও ইউরিনে এলবুমিনের পরিমাণ এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ভেদে পথ্যটিকে সাজাতে হয়। সে ক্ষেত্রে একজন ক্লিনিক্যাল ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি। তারপরও সাধারণভাবে যে বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন সেগুলো হলো :
১. ক্যালরি
কিডনি রোগীদের সাধারণত ক্যালরির চাহিদা অন্যান্য রোগীদের তুলনায় বাড়ানো হয়। যথাযথ শক্তি প্রদান করার মাধ্যমে রোগীর সঠিক মাংসপেশীকে বজায় রাখতে ক্যালরি সাহায্য করে। সাধারত প্রতি কেজি ওজনের জন্য রোগী ভেদে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোক্যালরি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এই ক্যালরি রোগীকে শক্তিপ্রদান করা ছাড়াও সচল এবং কর্মক্ষম রাখে। যা রোগীকে এই রোগ মোকাবিলায় দারুণভাবে সাহায্য করে।
২. কার্বোহাইড্রেট
কিডনি রোগী মোট ক্যালোরি চাহিদার বেশির ভাগই কার্বোহাইড্রেটের মাধ্যমে পূরণ হয়। কার্বোহাইড্রেট কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে বন্ধুবৎসল। খাবারে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বলে কাবোর্হাইড্রেটকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে শর্করার মাত্রা বিবেচনা করে কার্বোহাইড্রেট হিসাব করা হয়। ভাত, ময়দা, রুটি, চিরা, সুজি , চালের গুঁড়া, চালের রুটি, সাগু, সেমাই ইত্যাদি কিডনি রোগীর জন্য উত্তম কার্বোহাইড্রেট।
৩. প্রোটিন
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ মেয়াদি কিডনি রোগে প্রতি কেজি ওজনের জন্য পয়েন্ট পাঁচ থেকে পয়েন্ট আট গ্রাম প্রোটিন বরাদ্দ করা যেতে পারে। যদিও এই হিসাব নির্ভর করবে রোগীর অবস্থা ও বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর। সাধারণত ডাল, বাদাম, কাঁঠালের বিচি, সিমের বিচি ইত্যাদি রোগীকে বর্জন করতে হয়। প্রতিদিনের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা ডিমের সাদা অংশ, মাছ, মুরগির মাংস ও দুধ বা দই ইত্যাদি থেকে হিসাব করে বরাদ্দ করা হয়। গরু, খাসির মাংস, কলিজা, মগজ ইত্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে যেতে বলা হয়।
৪. চর্বি
বেশির ভাগ কিডনির রোগীই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে। এ ছাড়া কিডনি রোগীদের যাতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে না যায়- প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে তাই চর্বির হিসাব যথাযথভাবে করতে হয়। সাধারণত স্যাচুরেটেট বা সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড, ডিমের কুসুম এড়িয়ে যেতে হয়। রান্নার তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ তেল, সূর্যমুখী, কর্ন অয়েল, ক্যানোলা অয়েল ইত্যাদি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক কিডনি রোগীকে ভয়ে তেল খাওয়া বন্ধ করতে দেখা যায়। যা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রতিদিনের রান্নায় চার চা চামচ (২০ এমএল) তেল ব্যবহার করলে ভালো।
৫. সবজি
রক্তে পটাশিয়াম, ইউরিক এসিডের মাত্রা, ফসফরাস ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে সবজি হিসাব করা হয়। অতিরিক্ত পিউরিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাকসবজি, পিচ্ছিল ও গাড় লাল রঙের শাক সবজি এড়িয়ে যেতে হবে। তবে কিডনি রোগীদের জন্য চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিংগা ইত্যাদি পানীয় সবজি উপকারী। উপকারী হলেও এগুলোর পরিমাণ মেনে চলাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা সবজির সালাদ, সবজি স্যুপ ইত্যাদি কিডনি রোগীদের এড়িয়ে চলতে হয়।
৬. ফল
কিডনি রোগীদের ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক হতে হয়। অক্সালিক এসিড, ইউরিক এসিডস, পটাশিয়াম, রক্তচাপ ছাড়াও আরো অনেক কিছু বিবেচনা করে ফল নির্ধারণ করা হয়। তিন চারটি ফল রোগী ভেদে সীমিত আকারে দেওয়া হয়। যেমন : আপেল, পাকা পেপে, পেয়ারা ইত্যাদি। অনেকই কিডনি রোগ হলে ফল খাওয়া বন্ধ করে দেয়। যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বিবেচনা করে ফল নির্ধারণ করতে হবে।
৭. লবণ
লবণ বা সোডিয়াম নিয়ন্ত্রিত পথ্য কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপ, রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা, ইডিমা বা শরীরের পানির পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে লবণের পরিমাপ করা হয়। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ গ্রাম লবণ নির্ধারণে করা হয় যা নির্ভর করবে আপনার শারীরিক অবস্থা ও ডায়েটেশিয়ানের ওপর। তবে আলাদা লবণ অবশ্যই পরিহার করতে হবে এবং অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন : চিপস, পাপর, চানাচুর, আচার ইত্যাদি। যা শুধু কিডনি রোগীর চিকিৎসায় নয়, কিডনি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৮. তরল/ পানি
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে তরল নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। দৈনিক চা, দুধ, পানি সব মিলিয়ে তরলের হিসাব করা হয়। কোনো রোগীকে কতটুকু তরল বরাদ্দ করা হবে তা নির্ভর করবে রোগীর অবস্থার ওপর। শরীরের ইডিমা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, সোডিয়ামের মাত্রা, ইজিএসআর- এসবের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে এক থেকে দেড় লিটার, কখনো কখনো দুই লিটার পর্যন্ত তরল বরাদ্দ হয়। অনেকেই্ অসুস্থ কিডনিকে সুস্থ করার জন্য অতিরিক্ত পানি খায়, এটি ভুল।
দীর্ঘ মেয়াদি ক্রনিক কিডনি রোগী এ ধরনের খাবার মেনে চললে কিডনিকে মারাত্মক জটিলতা থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। কিছুটা এক ঘেয়েমি হলেও ধৈর্যের সঙ্গে সঠিক পথ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলা প্রত্যেক কিডনি রোগীর জন্য একান্ত জরুরি।
বিঃ দ্রঃ ডায়ালাইসিসের আগ পর্যন্ত রোগাক্রান্ত কিডনি সুরক্ষার জন্য এই খাবারগুলো মেনে চলা যায়।
তামান্না চৌধুরী
প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।
Tags: কিডনি
-
:D :D :D