Daffodil International University

Famous => History => Topic started by: 710001113 on March 12, 2018, 03:09:09 PM

Title: মানুষ প্রথম জুতো পরতে শুরু করে কবে থেকে?
Post by: 710001113 on March 12, 2018, 03:09:09 PM
রাস্তাঘাটে চলাফেরার জন্য, সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের জুতো ছাড়া চলে না। কিন্তু এই জুতো জিনিসটা কি সবসময় ছিল? না! জুতো ছাড়াও মানুষ একটা সময় চলাফেরা করেছে। প্রাচীন মানুষের কাছে চলাফেরা করার জন্য জুতো বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিলোই না। তাহলে মানুষ কবে জুতো পরা শুরু করে? সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে আসে যে, মানুষ প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে জুতো পরতে শুরু করেছিল। অবশ্য সেটাই মানুষের জুতো পরার শুরু কিনা তা জানা যায়নি। কিন্তু তাতে কী? অন্তত প্রাচীন মানুষ যে জুতো পরতো সেটার কিছু তো নিদর্শন পাওয়া গেছে! আর সবকিছু হিসাব করে কিছুদিন আগে করা নৃতাত্বিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে সেই সময়েই প্রথম জুতো পায়ে গলাতে শুরু করেছিল মানুষ।

৪০,০০০ বছর! সময়টা বেশ লম্বা মনে হচ্ছে, তাই না? শুরুতে বাকি সবারও সেটাই মনে হয়েছিল। কারণ এর আগে গবেষকদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী মানুষের জুতো ব্যবহার করার সময়কাল ছিল আরো কাছাকাছি। ফলে এবার তারও আগে থেকে মানুষ জুতো পরতে শুরু করেছিল সেটা জেনে বেশ অবাক হয়েছিলেন তারা। যেকোনো পোশাক মানুষের শারীরিক গঠনের উপরে প্রভাব ফেলে। জুতো সেক্ষেত্রে অনেকটা বেশিই প্রভাব ফেলে একজন মানুষের পায়ে।

মানুষের জুতো পরার ইতিহাস ৪০ বছর আগের; Source: Space Coast Foot and Ankle Center

জুতো পরার পর একজন মানুষের চলনভঙ্গি, পায়ের জোর ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়। সেই সাথে মানুষের শরীরের হাড়, পেশী ইত্যাদিতেও প্রভাব রাখে জুতো। ফলে জুতো পরার পরে যে পরিবর্তন হয় তা খুব সহজেই লক্ষ্য করা সম্ভব। প্রাচীন মানুষের পায়ের গড়নের পরিবর্তন নৃতাত্বিকদের এক্ষেত্রে সাহায্য করেছে মানুষ কখন জুতো পরেছে সেটা জানতে। এমনকি জুতোর গড়ন কতটা পরিবর্তিত হয়েছে এবং কবে হয়েছে সেটাও জানা সম্ভব হয়েছে তাদের পায়ের আকৃতি দেখে।

বিজ্ঞানীরা শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও জুতোর পরিধানের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন বিংশ শতকে। তারপর থেকেই শুরু হয় গবেষণা। খুব শক্ত জুতো যেমন মানুষের পায়ের হাড়ে প্রভাব ফেলতে পারে, ঠিক তেমনি পায়ের আঙ্গুলের মধ্যকার দূরত্ব এবং অন্যান্য কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপারকেও ফুটিয়ে তোলে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতাত্ত্বিক এরিক ত্রিনকাউসের জানান, জুতো পরিধান করলে মানুষের পায়ের আকৃতি ছোট হয়ে যায়। অন্যদিকে, জুতো পরেন না এমন মানুষের পা যেমন বড় হয়, তেমনি তাদের আঙ্গুলগুলোর মধ্যকার দূরত্ব থাকে কম। ফলে ইতিহাসে নানান সময়ে খুঁজে পাওয়া প্রাচীন সব মানুষকে দেখে আর তাদের পায়ের ছোট হয়ে আসা দেখে খুব সহজেই একটু পরীক্ষার মাধ্যমেই বলে দেওয়া যায় যে, কখন থেকে মানুষ জুতো পরা শুরু করেছে।

এখন পর্যন্ত টিকে থাকা মানুষের সবচাইতে পুরোনো যে জুতো খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তার বয়স ১০ হাজার বছর। তবে এরিকের তথ্য এবং যুক্তিগুলো মেনে নিলে সেই সংখ্যাটা এক লাফে চলে যায় আরো ৩০ হাজার বছর পেছনে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় মানুষ এবং জুতো পরিধানের সময়কাল নিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান এরিক এবং ব্যাপারটি সর্বস্বীকৃত। এরিকের গবেষণাটি ছিল সহজেই বোধগম্য।
হাড়ের অবস্থা এবং জুতো

খুব চাপা ও শক্ত জুতো পায়ের হাড়ে প্রভাব ফেলে; Source: Boulders

জুতো মানুষের হাড়ের উপরে প্রভাব ফেলে সেটা একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা নিয়েই বিস্তারিত জানিয়েছেন এরিক নিজের গবেষণায়। তাকে সেখানে সমর্থন করেছেন আরো অনেকে। হাড় কোনো নির্দিষ্ট কিছু নয় যেটা পরিবর্তিত হতে পারে না। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার নৃতাত্ত্বিক দলনেতা ওয়েভার জানান, একজন মানুষ নিয়মিত শরীরচর্চা করলেও তার হাড়ের গড়ন পুরুষ্ট হয়। ফলে একজন মানুষ অনেক দিন ধরে তার হাড়ের উপরে চাপ পড়ে এমন কিছু ব্যবহার করে তাহলে হাড় একটু অন্যরকম আকৃতি নেবেই।

ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে যে, তাদের পায়ের আকৃতি বড় এবং হাড় অন্যদের চাইতে বেশি মোটা ও পুরুষ্ট। তারা অনেকটা সময় হাঁটত, ভারী জিনিস বহন করতো এবং গাছে চড়তো। এগুলোই মূলত এমনটা হওয়ার পেছনের মূল কারণ। নিয়ান্ডারথাল এবং বর্তমান মানুষের প্রাচীন মানবদের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি লক্ষণীয়। তবে ৪০ হাজার বছর আগের মানুষদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি পরিবর্তিত হতে শুরু করে বলে উল্লেখ করেন এরিক। হাড়গুলো তখন মোটা হলেও এর গড়ন ছোট হতে শুরু করে। হুট করে হওয়া এই পরিবর্তনের কারণ জানার চেষ্টা করেন এরিক আর তারপরই তার মাথায় আসে জুতোর কথা। খুব দ্রুত কাজ করা শুরু করেন তিনি আর জানতে পারেন যে, মানুষের পায়ের হাড়ে আসা এই পরিবর্তনের মূল কারণ জুতো। সেই সময়, ৪০ হাজার বছর আগেই জুতো পরিধান করতে শুরু করে প্রাচীন মানবেরা।
জুতো, নাকি অন্যকিছু?

জুতো না পরলে মানুষের পায়ের আঙ্গুলের মধ্যকার দূরত্ব লক্ষ্য করা যায়; Source: warosu.org

অবশ্য এরিকের এই যুক্তি সব নৃতাত্ত্বিকের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি। বেশ কিছু নৃতাত্ত্বিক এই ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন এবং বাস্তবেই ৪০ হাজার বছর পূর্বে মানুষ জুতো পরতে শুরু করেছিল কিনা সেটা নিয়ে নিজেদের সন্দেহ জানান। তাদের এই সন্দেহের পেছনেও যথেষ্ট শক্ত যুক্তি দেখান তারা। এরিকের এই গবেষণার মূল ব্যাপারটিকেই নাড়া দেন তারা।

এরিক হাড়ের ছোট হয়ে আসাকে কেন্দ্র করে মানুষের জুতো পড়ার ব্যাপারটিকে বোঝাতে চেয়েছেন। তবে অন্য নৃতাত্ত্বিকদের মতে, হাড় কি কেবল এই একটি কারণেই ছোট হতে পারে? না! একদম নয়। নৃতাত্বিকগণ জানান যে, ইতিহাসের যে সময়টায় এসে এরিক হাড় এবং জুতো পরার মধ্যে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছেন সেই সময়ে মানুষ পূর্বের চাইতে অনেক বেশি কর্মঠ হতে শুরু করেছিল। ফলে তাদের কার্যক্রম কমে যাওয়ার ফলে হাড়ের গঠনগত পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল এমনটাও হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এছাড়াও নৃতাত্ত্বিকেরা জানান যে, জুতোর কারণেই যদি হাড় ছোট হতে শুরু করবে তাহলে মানুষের শরীরের অন্যান্য স্থানের হাড়ের ব্যাপারে কী বলা যাবে?

সেই একই সময়ে কেবল মানুষের পায়ের নয় বরং পুরো শরীরের হাড় সংকুচিত হতে শুরু করে। এদিক দিয়েও এরিকের জুতোর তত্ত্ব খাটে না। তবে সেই সময়ে মানুষের কার্যক্রমে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তারা নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করছিল তখন। সুঁই, অস্ত্র, পোশাক- এমন অনেক কিছুর সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিল তারা। যদি বলা হয় যে, মানুষ সেই সময় জুতো নামের কিছু একটা তৈরি করেছিল, সেটা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে- সেটা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তবে মানুষের পায়ের গঠন এবং একমাত্র মানুষের পায়ের গঠন দেখেই মানুষ কবে থেকে জুতো পরতে শুরু করেছিল সেটা নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব- এমন ধারণা পোষণ করেন না প্রতিপক্ষের এই নৃতাত্ত্বিকেরা। তবে এরিকের গবেষণা ও যুক্তিকে একদম উড়িয়ে দিয়েছেন তা-ও নয়। আর সেটা সম্ভবও নয়।

নানারকম জুতো; Source: Runnerclick

এরিক এমন অনেক যুক্তি দেখিয়েছেন যেটা সত্যও হতে পারে। হতে পারে ৪০ হাজার বছর আগেই মানুষ জুতো পরতে শুরু করেছিল। তবে এটি ছাড়াও আরো অনেক দিক রয়েছে এই ব্যাপারটিকে ঘিরে। মানুষের হাড়ের আকৃতি পরিবর্তন তার জুতো পরার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। তবে সেটাই একমাত্র কারণ নয়। আরো অনেক কারণ থাকতে পারে মানুষের হাড় ছোট হয়ে আসার পেছনে। মানুষ ৪০,০০০ বছর আগে, তার পরে কিংবা তার আগে- যেকোনো সময়েই জুতো পরিধান করা শুরু করতে পারে। নিশ্চিতভাবে এই তথ্য ও গবেষণাকে যেমন সঠিক মানা যায় না, তেমনি একে ভুলও বলা সম্ভব নয়!