Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: faruque on March 19, 2018, 03:41:58 PM
-
সৃষ্টিকে ভালোবেসে মানুষ হই
বিজ্ঞানের হাত ধরে আমাদের পৃথিবী এগিয়ে গেছে অনেক দূর। কিন্তু পিছিয়ে গেছি আমরা। বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার সব মানুষের কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে। কিন্তু আমরাই আমাদের নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এ সুন্দর পৃথিবীকে বিষিয়ে তুলেছি। আবিষ্কার করেছি মানুষ ধ্বংসের হাতিয়ার। ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে শুরু করে জাতি ও দেশ-বিদেশের যুদ্ধগুলোতেও ব্যবহার করছি আমাদের আবিষ্কার করা মারণাস্ত্রগুলো। যখন এসব আবিষ্কার হয়নি, তখনো রাহাজানি খুনোখুনি ছিল। কখনো যদি এ মারণাস্ত্রগুলো ধ্বংস হয়ে যায় তখনো বিশ্বে খুনোখুনি থাকবে। কারণ, খুনের বীজ মারণাস্ত্রে থাকে না, থাকে মানুষের মনে। মানুষের মনেই খুনের নেশা চাপে। মনের রাগ-ক্ষোভ-লোভ থেকেই খুনের ইচ্ছা জাগে। তখনই এক মানুষ আরেক মানুষকে খুন করে বসে।
যেমন প্রবৃত্তির তাড়না থেকে আপন ভ্রাতৃঘাতক খুন করেছিল হাবিলকে। হায়! মানুষ কীভাবে আরেক মানুষকে খুন করে। এ জন্যই কী ফেরেশতাদের আপত্তির জবাবে আল্লাহ খুব গর্ব করে বলেছিলেন— ইন্নি আলামু মালাতালামুন। আমি যা জানি তোমরা তা জান না। ছিঃ মানুষ ছিঃ! আল্লাহর সেই গর্বভরা মুখখানি কীভাবে তুমি মলিন করে দাও? কীভাবে তুমি আরেক আদম সন্তানের বুকে ধ্বংসের বুলেট ছুড়ো? তোমার কি একটুও মায়া লাগে না? অন্তরের গভীরে কি একবিন্দুও দরদ জাগে না? সেও তো মানুষ। সেও তো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। তারও তো তোমার মতো ফুটফুটে সন্তান আছে। আছে প্রাণ-প্রেয়সী। অন্যায়ভাবে কাউকে খুন করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহগুলোর মধ্যে একটি।
সহি বোখারি-মুসলিমের একাধিক বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, সাতটি ভয়ঙ্কর কবিরা গুনাহর প্রথমটি হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। আর দ্বিতীয়টি হলো- অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। কাউকে হত্যা করা শুধু বড় গুনাহই নয় বরং কোরআনের ভাষায় একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা মানে গোটা পৃথিবীর মানুষকে হত্যা করা। কেননা, গোটা পৃথিবীর মানুষের জীবনের বিনিময়ে একজন মানুষের জীবন সৃষ্টি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, ‘মান কাতালা নাফসান বিগায়রি নাফসিন আও ফাসাদিন ফিল আরদি ফাকাআন্নামা কাতালানন্নাসা জামিআ। কেউ যদি কোনো মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তবে সে যেন পৃথিবীর সব মানুষকেই হত্যা করে ফেলল।’ (সূরা মায়েদা : ৩২।) হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীর সব মানুষ মিলে যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আল্লাহতায়ালা সব মানুষকেই জাহান্নামে দেবেন তারপরও অন্যায়ভাবে হত্যাকে মেনে নেবেন না।’ (মুসনাদে বাজজার।) আকদিয়াতুর রসুল (সা.) গ্রন্থে ইমাম কুরতুবি (রহ.) একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মানুষ যদি আরেকজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যায় মুখের একটি কথা দিয়েও সাহায্য না করে, তাহলে কেয়ামতের দিন তার কপালে লেখা থাকবে— এ ব্যক্তি আল্লাহর দয়ার চাদর থেকে বঞ্চিত।
বোখারির বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ হত্যায় জড়িয়ে না পড়বে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রাগ থেকে বেঁচে যাবে। আরেকটি বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন বান্দা যদি আল্লাহর কাছে এমন অবস্থায় হাজির হয় যে, সে কারও রক্ত নিয়ে খেলেনি, তাহলে আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে ক্ষমার চাদরে ঢেকে নেওয়া। শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো কাউকে হত্যা করা। আর কাউকে হত্যা না করা হলো জান্নাত পাওয়ার গ্যারান্টি। রসুল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি মুমিন ব্যক্তির রক্তে নিজেকে কলুষিত না করে তবে সে জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাবে। একটি কাজ থেকে বিরত থেকে কত সহজেই না জান্নাত পেতে পারি আমরা। আবার ওই কাজটি করেই আমাদের দুনিয়া-আখেরাত ধ্বংস করে ফেলতে পারি অনায়াসে। আফসোস! আমরা আখেরাতকে সুন্দর করার চেয়ে আখেরাত ধ্বংসের পথেই যেন এগিয়ে যাচ্ছি দুর্বার গতিতে। আমাদের দেশে প্রতিদিন শত শত অন্যায় হত্যার ঘটনা ঘটছে। পেপার-টেলিভিশন খুললেই এসব ঘটনা আমাদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। অথচ এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠুবিচার এবং প্রতিরোধের কোনো শুভ উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। হে আল্লাহ! আমাদের মনে আখেরাতের ভয় জাগিয়ে দিন। অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত করা থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। আমিন।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
-
Well written. Thanks for sharing.
-
Thanks for sharing the learning post.