Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: Md. Nazmul Hasan on May 22, 2018, 10:27:59 AM
-
২
কন্যাপক্ষ সবুর করিতে পারিত, কিন্তু পাত্রপক্ষ সবুর করিতে চাহিল না! ডিমবাবুর জন্য এর চেয়ে ভালো পাত্রী হইতে পারে না। তাহারা সকলে কন্যার ছবি ইনস্টাগ্রামে দেখিল, দেখিয়াই ‘হা’ বলিয়া দিল। পাত্রীর নাম কুসুম। দেখিতে রাঙা। পাত্র দূর থেকে একনজর দেখিয়াই কুসুমের প্রেমে পড়িয়া গেল। অসুবিধা একটাই, পাত্রী ঢাকায় থাকে। বিবাহ করিতে গেলে ডিমবাবুকে ঢাকায় যাইতে হইবে। কিন্তু ঢাকা যাওয়া তো সহজ নহে! মাঝখানে এক মহাসমুদ্র আছে...মহাসমুদ্রের নাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক! ডিমবাবুকে প্রতিবেশী ডিমেরা কহিল, ‘শোন, তাপ থেকে সাবধান থাকবি, নাহলে ওই রাস্তার মধ্যেই ফুটে যাবি! তোর ভেতর থেকে তখন মোরগ না মুরগি কী বের হয় কে জানে!’
ডিমবাবুর চোখ বড় হইয়া উঠিল। মা অবশ্য অভয় দিলেন। কহিলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তা খারাপ শুনিয়াছি, কিন্তু তাই বলিয়া নিশ্চয়ই এত খারাপ নয় যে আমার ডিমখানা যাইতে যাইতে ফাটিয়া যাইবে! দেখে-শুনে যা। ঘর আলো করে কুসুমকে নিয়ে আয়।’ ডিমবাবু সকলের দোয়া নিয়া বাহির হইল। একটা লরিতে আরও হাজার হাজার ডিমের সহিত তাহার যাত্রা নিশ্চিত হইল শেষকালে। ডিমবাবু টাইটানিক সিনেমাখানি দেখিয়াছিল। নিজেকে তার জ্যাক মনে হইল। আফসোস, জ্যাকের মতন চুল তাহার নাই। তাহার চান্দি ছিলা!
লরি প্রথম প্রথম বেশ টানিল। গোঁ গোঁ শব্দ তুলিয়া যখন ছুটিতেছিল তখন ডিমবাবু ভাবিল, প্রতিবেশীরা অযথাই তাহাকে ভয় দেখাইয়াছে মাত্র। আসলে ঈর্ষা! কুসুমের মতো এক পাত্রীকে সে বিবাহ করিতে যাইতেছে বলিয়াই এই ঈর্ষা তাদের। সে ঠিক করিল, কুসুমকে বিবাহ করিয়া ফেলামাত্র একখানা সেলফি তুলিয়া তাহা ফেসবুকে দিয়া প্রতিবেশীদের ট্যাগ করিবে, তখন দেখিবে কত মজা! ভাবিতে ভাবিতে ডিমবাবু হাসিয়া উঠিল। আর তখনই লরিখানা ঝাঁকি খাইয়া থামিয়া গেল। তারপর লরিটি থামিয়াই থাকিল, থামিয়াই থাকিল। একচুল পর্যন্ত নড়িল না। ডিমবাবু বারবার মোবাইল ফোন বাহির করিয়া ঘড়ি দেখিল। বিকাল তিনটা রাত তিনটা হইয়া গেল, রাত তিনটা আবার বিকাল তিনটা হইয়া গেল। লরি চলিল না! কেহ একজন গাহিয়া উঠিল, ‘লরি চলে না চলে না, চলে না রে, লরি চলে না!’
ডিমবাবুর মেজাজ খারাপ হইয়া গেলে গায়ককে ঝাড়ি দিয়া লরি হইতে বাহির হইয়া আসিল। দেখিল, হাজার হাজার গাড়ি রাস্তার ওপর একে-অপরের পিঠে নাক ঠেকাইয়া দাঁড়াইয়া আছে। এক ট্রাকভর্তি কাঁচা সবজি, ইতিমধ্যেই তাহারা হাল ছাড়িয়া দিয়া জিব বাহির করিয়া শুইয়া পড়িয়াছে। তরমুজ ফাটিয়া গিয়ে ড্রাকুলার রূপ নিয়াছে। শাকের আঁটিকে মনে হইতেছে শাঁকচুন্নি! রাস্তায় অপেক্ষা করিতে করিতে করলা তার এক জীবনের তেতো হারাইয়া ‘দুশ্চরিত্র’ হইয়া উঠিয়াছে। আর ডিমবাবু? এই সব দেখিয়া তার ঘাম ছুটিবার দশা! একবার সূর্যের পানে একবার লরির পানে তাকাইয়া তাহার প্রেশার বাড়িয়া গেল। প্রতিবেশীদের কথা মনে পড়িল খুব।
ডিমবাবু হাঁপাইতে হাঁপাইতে আবার গিয়া লরিতে উঠিল। কিন্তু মহল্লায় আগুন লাগিলে ক্লাব কি রক্ষা পায়? লরিও যে ভীষণ উত্তপ্ত! যেন এক অগ্নিকুণ্ডের ভেতর পড়িল ডিমবাবু।
এ রকম সময়েই লরি আবার চলিতে শুরু করিল। একটা বাতাস আসিয়া ডিমবাবুকে ছুঁইয়া গেল। আহারে, যেন কুসুমের শীতল আঁচল! কুসুমের কথা মনে করিতে করিতে ডিমবাবু ঘুমাইয়া পড়িল।
কিন্তু এ ঘুম মাত্র লহমার। আরেকটা ঝাঁকি খাইয়া লরি থামিয়া গেল। আর কখনোই চলিল না। ডিমবাবু কুসুমকে ভিডিওকল করিতে বাধ্য হইল। কুসুম তখন অধীর আগ্রহে ডিমবাবুরই অপেক্ষা করিতেছিল। সব শুনিয়া কুসুম কহিল, ‘প্রেমের পথ এত সহজ হইবে তোমাকে কে কহিল! তুমি বরং ওই মানুষদের ধন্যবাদ দাও, যাহারা এই যানজট লাগাইয়া রাস্তার বারোটা বাজাইয়াছে! যদি তুমি ওই পথ পাড়ি দিয়া আসিতে পারো, তাহা হইলে তোমার–আমার নাম কুসুম-রঙে লেখা থাকিবে। আর যদি না পারো...’
আর শুনিতে পারিল না ডিমবাবু। তাপে-উত্তাপে-উষ্ণতায় সে ফটাস করিয়া ফাটিয়া গেল। আর তার ভেতর হইতে...থাক তাহার কথা আর নাই-বা বলি। শুধু এইটুকু বলিয়া রাখি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র প্রেমের সমাধি রচিত হইল।
লরির ভেতর হইতে অনেক মুরগির কক কক আওয়াজ শোনা যাইতে থাকিল! তবু, কী কাণ্ড লরি চলিল না!
আরও সংবাদ
বিষয়:
রস+আলো