Daffodil International University
Faculty of Allied Health Sciences => Public Health => Topic started by: Monir Hossan on May 28, 2018, 01:44:53 PM
-
লিভার ফেইলিউর মানেই আঁতকে ওঠার মতো একটি রোগের নাম। এ রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন পর্যন্ত লিভার ফেইলিউরের সবচেয়ে ধন্বন্তরী চিকিত্সা লিভার ট্রান্সপ্ল্যানটেশন, তবে নানা কারণেই তা বেশ জটিল। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে লিভার ট্রান্সপ্ল্যানটেশনের সুবিধা নেই। পাশাপাশি এমনকি ভারতেও এই চিকিত্সা যথেষ্ট ব্যয়বহুল, যা আমাদের মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। স্টেম সেল থেরাপি ও লিভার ডায়ালাইসিস এসব ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে এসব কনসেপ্ট একবারেই নতুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) উদ্যোগে একদল লিভার ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিন ও হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ক্রনিক লিভার ফেইলিউরে সাফল্যের সাথে এক বছরের বেশি সময় ধরে স্টেম সেল থেরাপি ব্যবহার করে আসছেন। আর সম্প্রতি তারা শুরু করেছেন লিভার ডায়ালাইসিস। এই দুই চিকিত্সা পদ্ধতিতেই তারা ব্যবহার করছেন নিজস্ব উদ্ভাবনী ও লাগসই প্রযুক্তি।
স্টেম সেল থেরাপিতে প্রথমে গ্র্যানুলোসাইট কলোনি স্টিমুলেটিং ফ্যাক্টর (জিসিএসএফ) ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে রক্তে স্টেম সেলের সংখ্যা বহুশত গুণে বাড়ানো হয়। এরপর রক্ত থেকে জিসিএসএফ প্রয়োগের ফলে বেড়ে যাওয়া স্টেম সেলগুলোকে বিশেষ পদ্ধতিতে আলাদা করে নেওয়া হয়, অনেকটা ছেঁকে নেওয়ার মতো করে। এরপর ক্যাথ ল্যাবে অ্যাঞ্জিওগ্রামের মাধ্যমে ওই স্টেম সেলগুলো সরাসরি হেপাটিক আর্টারি দিয়ে লিভারে ইনজেক্ট করা হয়। আমাদের চিকিত্সকদের অভিনবত্ব হচ্ছে যে তারাই সম্ভবত পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো ক্যাথ ল্যাবে অ্যাঞ্জিওগ্রামের মাধ্যমে সরাসরি লিভারে স্টেম সেল থেরাপি করছেন।
স্টেম সেলগুলো আক্রান্ত অর্গান অর্থাত্ এক্ষেত্রে লিভারের যত কাছাকাছি এবং সরাসরি প্রয়োগ করা যাবে, তাতে সাফল্যের সম্ভাবনাও ততই বেশি। আর তাই এদেশে লিভার ফেইলিউরের চিকিত্সায় স্টেম সেল থেরাপি শুধু প্রথমবারের মতো চালু করার জন্যই নয়, বরং লিভারে তা প্রয়োগের অভিনবত্বের জন্যও এদেশের চিকিত্সকরা প্রশংসার দাবিদার। অন্যদিকে যে ইউনিক পদ্ধতিতে লিভার ডায়ালাইসিস শুরু হলো হলো তা যে শুধু বাংলাদেশে প্রথম তাই নয়, বরং সারা পৃথিবীতেই প্রথম। এতে কিডনি হেমোডায়ালাইসিসের মতোই লিভার রোগীর রক্ত থেকে ক্ষতিকারক উপাদান, এক্ষেত্রে বিলিরুবিন রক্ত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এজন্য এফেরেসিস মেশিনে বিশেষ কিট ও কলাম ব্যবহার করা হয় হচ্ছে। বিশেষ কলামের ছাঁকনির ভেতর দিয়ে রোগীর রক্ত প্রবাহিত করে প্লাজমা থেকে বিলিরুবিন আলাদা করে ফেলা হয়। জন্ডিসে দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা কিংবা লিভার ক্যান্সার ও লিভার ফেইলিউরের যেসব রোগীর জন্ডিসের প্রচলিত চিকিত্সায় উপকার পাচ্ছেন না তাদের ক্ষেত্রে লিভার ডায়ালাইসিস হতে পারে কার্যকরী চিকিত্সা। উন্নত বিশ্বে যেখানে মার্স ও প্রমিথিউস ডায়ালাইসিস মেশিনে প্রচুর এলবুমিন ব্যবহার করে ডায়ালাইসিস করা হয়, সেখানে এই নতুন পদ্ধতিতে এলবুমিন ব্যবহার না করেই বিলুরিবিন কমানো সম্ভব হচ্ছে।
নতুন এই চিকিত্সা পদ্ধতি দুটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল রিসার্চ কোলাবোরেশনের প্রশংসনীয় উদাহরণ। সীমিত সম্পদ নিয়ে প্রাপ্ত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যব্যবহার কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে এসব তার নিদর্শন। পাশাপাশি এ ধরনের রোগী বান্ধব এবং বাস্তবধর্মী গবেষণায় আমাদের জনগণও সরাসরি উপকৃত হবেন।
Source: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/projonmo/2018/05/28/279906.html