Daffodil International University
Faculty of Humanities and Social Science => Law => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on October 22, 2011, 06:03:19 AM
-
শিশু অধিকার
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯
সনদে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ,
বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মর্যাদা এবং জাতিসংঘ নীতিমালা ও ঘোষণা অনুযায়ী সমঅধিকারের স্বীকৃতিই হচ্ছে স্বাধীনতা, ন্যায় বিচার ও বিশ্ব শান্তির ভিত্তি৷
উল্লেখিত বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য দেশ উক্ত সনদে বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকার এবং মানুষের মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাদের বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে৷ আরো স্বাধীনভাবে সমাজকে এগিয়ে নিতে এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে দৃঢ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে৷
এই বিষয়টি সামনে রেখে জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালায় এ কথা স্বীকৃত হয়েছে যে গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধমৃ, রাজনৈতিক অথবা ভিন্নমত, জাতীয়তা কিংবা সামাজিক পরিচয়, শ্রেণী, জণ্মসূত্র কিংবা অন্য কোন মর্যাদা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই এই ঘোষণায় বর্নিত সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করবে৷
জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি শিশুর প্রাপ্য হচ্ছে বিশেষ যত্ন ও সহায়তা৷
এ বিষয়ে আস্থাশীল হতে হবে যে পরিবার হচ্ছে সমাজের প্রাথমিক সংগঠন৷ সুতরাং পরিবারের সকল সদস্য বিশেষ করে শিশু সদস্যদের যত্ন, শিশুর নিরাপত্তা ও কল্যাণ সম্পের্ক ঘোষণার সামাজিক আইনানুগ শর্তাবলী স্মরণ রেখে শিশুকে দত্তক এবং লালন পালনের দায়িত্ব প্রদান প্রসঙ্গে বিশেষভাবে শিশুদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ সম্পর্কে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সামাজিক এবং আইনগত নীতিমালা ঘোষণা স্মরণ রাখতে হবে৷ শিশু সংক্রান্ত বিচার পরিচালনায় জাতিসংঘ ঘোষিত আদর্শ নূন্যতম বিধিমালা (বেইজিং রুলস) জরুরী অবস্থা এবং সশস্ত্র সংঘাতকালীন মহিলা ও শিশু নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘোষণার শর্তাবলী রাখতে হবে৷
পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এমন শিশু রয়েছে যারা খুবই কষ্টকর পরিবেশে বাস করছে এবং তাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন এ কথা মনে রাখতে হবে৷
প্রতিটি শিশুকে রক্ষা এবং তাদের স্বাভাবিক বিকাশের স্বার্থে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনতে হবে৷
প্রতিটি দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশুদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে৷
উল্লেখিত এই সকল বিষয় গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে ঐক্যমত ঘোষণা করছে :
পর্ব - ১
অনুচ্ছেদ-১: শিশুর বয়স
এই সনদে ১৮ বছরের নীচে সব মানবসন্তানকে শিশু বলা হবে, যদি না শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় ১৮ বছরের আগেও শিশুকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
অনুচ্ছেদ-২: শিশু অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ তাদের নিজ নিজ আওতায প্রতিটি শিশুর জন্য এই সনদে উল্লেখিত অধিকার সমূহের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং এগুলির নিশ্চয়তা বিধান করবে৷ এ ব্যাপারে শিশু অথবা তার পিতামাতা কিংবা আইনসম্মতঃ অভিভাবকের ক্ষেত্রে গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক ভিন্নমত, জাতিয়তা অথবা সামাজিক পরিচয়, বিত্ত, সামর্থ জণ্মসূত্রে কিংবা অন্য কোন বংশগত অবস্থানের কারণে বৈষম্য করা যাবে না৷
২. শিশুর পিতামাতা, আইনসম্মত অভিভাবক কিংবা পরিবারের সদস্যদের অবস্থান, কার্যকলাপ, প্রকাশ্য মতামত বা বিশ্বাস যদি কোন শিশুর জন্য বৈষম্য কিংবা শাস্তির কারণ হয় তবে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ-৩: শিশুর স্বার্থ রক্ষা
১. সরকারী এবং বেসরকারী সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান, আদালত, প্রশাসন বা আইন প্রণয়নকারী ব্যক্তিবর্গ যেই হোকনা কেন শিশু বিষয়ে যে কোন ধরনের কার্যক্রমে শিশুর স্বার্থই হবে প্রথম ও প্রধান বিবেচনায় বিষয়৷
২. শিশুর বাবা মা, আইনগত অভিভাবক বা অন্য ব্যক্তি যারা আইনগত ভাবে শিশুর দায়িত্বে আছেন তারা প্রত্যেকে শিশুর কল্যাণের জন্য সব ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷
৩. অংশ গ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর জন্য সেবা ও সুযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য প্রযোজ্য মানদন্ড দক্ষতার সাথে তত্বাবধানের বিষয়টির নিশ্চয়তা প্রদান করবে, বিশেষ করে শিশুর জন্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সংখ্যা ও তাদের উপযুক্ত তত্ত্বাবধানের বিষয়টি৷
অনুচ্ছেদ-৪: সনদের বাস্তবায়ন
এই সনদের সকল অধিকারকে বাস্তবায়নের জন্য অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সব ধরনের আইনগত ও প্রশাসনিক এবং অন্যান্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার সমূহের বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য সব সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কাঠামোর আওতায় সহায়তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ-৫: শিশুর প্রতি দায়িত্ব
এই সনদে উল্লেখিত শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য শিশুর বিকাশের সাথে সংগতিপূর্ন উপযুক্ত নির্দেশ ও পরামর্শদানের ক্ষেত্রে বাবা-মা, স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী যৌথ পরিবার বা সমাজের কোন ব্যক্তি, আইনসম্মত অভিভাবক অথবা আইনানুগতভাবে শিশুর দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কোন ব্যক্তির প্রতি দায়িত্ব, অধিকার এবং কর্তব্যের প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ সম্মান দেখাবে
অনুচ্ছেদ-৬: শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার
১. প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্বীকৃতি দেবে৷
২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর বেঁচে থাকার এবং উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব সর্বাধিক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করবে৷
অনুচ্ছেদ-৭: শিশুর জন্ম নিবন্ধীকরণ
১. জণ্মের সাথে সাথে শিশুর জণ্মের নিবন্ধীকরণ করতে হবে৷ জণ্মের সাথে একটি নাম, নাগরিকত্ব এবং যতদূর সম্ভব শিশুর পিতামাতার পরিচয় জানবার অধিকার এবং তাদের কাছে প্রতিপালিত হবার অধিকার থাকবে৷
২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব জাতীয় আইন অনুসারে শিশুর এই সকল অধিকারসমূহ বাস্তবায়ন করবে৷ এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক দলিল সমূহ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে৷ বিশেষ করে যে সকল ক্ষেত্রে এর অন্যথা হলে শিশু রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে৷
অনুচ্ছেদ-৮: শিশুর আইনসম্মত পরিচিতি
১. শিশুর জাতীয়তা, নাম এবং পারিবারিক সম্পর্ক, আইনসম্মত পরিচিতি রক্ষায় শিশুর অধিকারের প্রশ্নটিকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সংরক্ষণ করবে৷ সেখানে কোন বেআইনী হস্তক্ষেপ করা চলবে না৷
২. কোথাও কোন শিশু তার নিজস্ব পরিচয় থেকে যদি আংশিক অথবা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে বঞ্চিত হয় তাহলে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই পরিচয় পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে এবং শিশুকে রক্ষার ব্যবস্থা করবে৷
অনুচ্ছেদ-৯: পিতামাতার সাথে বসবাসের অধিকার
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র কোন শিশুকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার বাবা মায়ের কাছ থেকে বিছিন্ন না করার নিশ্চিয়তা বিধান করবে৷ তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ও আইনের ক্ষেত্রে বিধিবিধান অনুসারে এবং বিচার বিভাগীয় আলোচনা সাপেক্ষে শিশুর সর্বোচ্চ স্বার্থে শিশুকে যদি পৃথক করাই শিশুর সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করে সেক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে৷ যে সব ক্ষেত্রে বাবা-মা সন্তানকে নির্যাতন অথবা অবহেলা করে অথবা পিতা ও মাতা আলাদা বাস করে সে ক্ষেত্রে সন্তান কোথায় বাস করবে তা নির্ধারন করা অবশ্য প্রয়োজন৷
২. এই অনুচ্ছেদের ১ নং প্যারা অনুসারে কোন মামলা হলে তাতে জড়িত সকল পক্ষের উপস্থিত থাকার এবং তাদের মতামত দেবার সুযোগ থাকবে৷
৩. যদি শিশুর সর্বোচ্চ স্বার্থের ক্ষতি না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার একজন বা উভয়ের সাথে বিছিন্ন শিশুটির ব্যক্তিগতভাবে এবং সরাসরি সম্পর্ক রাখা, যোগাযোগ করার অধিকার থাকবে৷ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র এ বিষয়ে সম্মান দেখাবে, অবশ্য তা যদি শিশুর সর্বোচ্চ স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর না হয়৷
অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র যদি শিশুর পিতা অথবা মাতা ও উভয়কে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আটক, কারাদন্ড, নির্বাসন, দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে বা মৃত্যু হয় (রাষ্ট্রের অধীনে থাকাকালীন অবস্থায় যে কোন কারণে মৃতু্যবরণ সহ), এসকল কারণে শিশুকে, শিশুর পিতা মাতা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য সম্পর্কে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করবে, তবে যদি সে তথ্যের বিষয়বস্তু শিশুর জন্য অমঙ্গলের কারণ না হয়৷ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রে এ ধরণের তথ্য প্রকাশ যেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য কোন বিরূপ ফলভোগের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়৷
অনুচ্ছেদ-১০: পারিবারিক সংহতি
১. অনুচ্ছেদ ৯-এর ১ নং প্যারা অনুযায়ী পারিবারিক সংহতি বজায় রাখার জন্য কোন শিশুর পিতামাতা যদি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ত্যাগ কিংবা প্রবেশ করতে চায় তবে সে বিষয়ে রাষ্ট্রসমূহ যথা শীঘ্রই ইতিবাচক মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷ এই ধরনের অনুরোধ আবেদনকারী কিংবা তার পরিবারের কোন সদস্যের প্রতি যেন স্থায়ীভাবে কোন বিরূপ ফল বয়ে না আনে সে বিষয়ে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র নিশ্চয়তা বিধান করবে৷
২. শিশু ও তার পিতামাতা যদি পৃথক রাষ্ট্রে বাস করে তবে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া উভয়ে নিয়মিত ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারবে৷ এ উদ্দেশ্যে ৯ অনুচ্ছেদ ১ নং প্যারার বর্ণনা অনুযায়ী শিশু বা তার পিতামাতার নিজের দেশসহ যে কোন দেশ ত্যাগ বা প্রবেশের অধিকারের প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সম্মান দেখাবে৷
জাতীয় নিরাপত্তা, জনগণের শান্তি ও শৃঙ্খলা, জনস্বাস্থ্য, নৈতিকতা কিংবা অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সনদে স্বীকৃত অন্যান্য অধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রাখার জন্য দেশ ত্যাগের উক্ত অধিকার খর্ব করা যাবে৷
অনুচ্ছেদ-১১: শিশু পাচার প্রতিরোধ
১. শিশুদের অবৈধভাবে বিদেশে পাচার এবং দেশে ফেরত না আসতে পারাকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র প্রতিহত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷
২. এ উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সমূহ দ্বিপাক্ষীক এবং বহুপাক্ষীক চুক্তি প্রস্তুতের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে অথবা বর্তমানে প্রচলিত চুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ-১২: শিশুর মত প্রকাশের অধিকার
১. মতামত গঠনে পরিপক্ক শিশু নিজস্ব মতামত এবং ধারনা প্রকাশে অবাধ স্বাধীনতার অধিকারী৷ সেই সকল অধিকার রক্ষার জন্য শিশু বয়স এবং নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা অনুযায়ী এই সকল মতামতকে যাতে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ তার নিশ্চয়তা বিধান করবে৷
২. এই উদ্দেশ্যে শিশুকে সুনির্দিষ্ট সুযোগ দিতে হবে যেন শিশু নিজে অথবা কোন প্রতিনিধি কিংবা কোন যথাযথ সংস্থার মাধ্যমে তার নিজ স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগীয় বা প্রশাসনিক মকদ্দমার ক্ষেত্রে জাতীয় আইনের বিধিবদ্ধ ধারার সঙ্গে সংগতি রেখে তারা কথা বলতে পারে৷
অনুচ্ছেদ-১৩: শিশুর ভাব প্রকাশের অধিকার
১. শিশুর স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশের অধিকার থাকবে৷ এই অধিকারের মধ্যে সীমান্ত নির্বিশেষে সব ধরনের তথ্য, ধ্যান-ধারনা সম্পর্কে জানার, গ্রহণ করার এবং অবহিত করার স্বাধীনতা থাকবে৷ তা মৌখিক, লিখিত, ছাপান অথবা অংকন চিত্রের বা শিশুর পছন্দ মত অন্য কোন মাধ্যমে হতে পারে৷
২. এই অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা যেতে পারে, তবে তা হবে আইন দ্বারা নির্ধারিত এবং নিম্নলিখিত কারণ সমূহের প্রয়োজনে :
ক) অন্যের অধিকার ও সুনামের প্রতি সম্মান দেখাবার প্রয়োজনে৷
খ) জাতীয় নিরাপত্তার অথবা জন শৃংখলা, জনস্বাস্থ্য বা নৈতিকতা সুরক্ষার প্রয়োজনে৷
অনুচ্ছেদ-১৪: শিশুর চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে৷
২. শিশুর নিজস্ব বিকাশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিশুর অধিকার চর্চার বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পিতামাতা এবং আইনসঙ্গত অভিভাবক, যেখানে প্রযোজ্য, তার অধিকার এবং কর্তব্যের প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সম্মান দেখাবে৷
৩. কারো ধর্ম অথবা বিশ্বাস স্বাধীনভাবে চর্চা করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই সকল বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা যাবে, যা আইনে উল্লেখিত রয়েছে এবং নিরাপত্তা. শৃংঙ্খলা, স্বাস্থ্য, নৈতিক অথবা মৌলিক অধিকার ও অন্যের স্বাধীনতা সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজন৷
অনুচ্ছেদ-১৫: শিশুর সংঘবদ্ধ ও সমাবেশের অধিকার
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের সংঘবদ্ধ হবার ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে৷
২. শিশুর এই অধিকারকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে কোন বিধি নিষেধ আরোপ করা যাবে না, যদি না গণতান্ত্রিক সমাজে জাতীয় কিংবা জন নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, নৈতিকতা এবং অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে৷
অনুচ্ছেদ-১৬: শিশুর মর্যাদা ও সুনামের অধিকার
১. শিশুর নিজস্ব গোপনীয়তা, পরিবার এবং বাসস্থান অথবা যোগাযোগের প্রতি অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করা যাবে না৷ কোন শিশুর মর্যাদা এবং সুনামের উপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ এবং আক্রমন করা যাবে না৷
২. এই ধরনের কোন হস্তক্ষেপ কিংবা আক্রনের জন্য শিশু আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে৷
অনুচ্ছেদ-১৭: শিশুর শারীরিক এবং মানসিক উন্নয়ন
শিশুর শারীরিক এবং মানসিক উন্নয়নের জন্য অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র গণমাধ্যমের কর্মকান্ড গুরুত্বের সাথে স্বীকৃতি দিয়ে শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য ও বিষয়বস্তু শিশুর সামনে তুলে ধরবে৷ বিশেষ করে সে সব তথ্য ও বিষয় যা শিশুর সামাজিক-আত্নিক কল্যাণ করবে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ সাধন করবে৷ এই উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহঃ
ক) অনুচ্ছেদ ২৯ এর ভাবধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ
-
শিশু অধিকার
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯
অনুচ্ছেদ-২১: দত্তক প্রদান
শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের কথা সর্বাধিক বিবেচনা করে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র দত্তক পদ্ধতিকে স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেবে৷ তারা :
(ক) শিশুকে দত্তক গ্রহণের বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত হবে৷ প্রচলিত আইন ও নিয়ম অনুসারে এবং নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে যে পিতামাতা, আত্নীয়স্বজন ও আইনসম্মত অভিভাবকদের সাথে শিশুর সম্পর্ক এমন যে, দত্তক অনুমোদনযোগ্য এবং প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনীয় পরামর্শের ভিত্তিতে দত্তক প্রদানে সুচিন্তিত মত দিয়েছেন৷
খ) যদি নিজ দেশে কোন পরিবারে শিশুকে দত্তক হিসাবে স্থান করে দেয়া না যায় অথবা শিশুর নিজ দেশে যদি লালন পালনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় তা হলে উক্ত শিশুর লালন পালনের জন্য আন্তঃদেশীয় দত্তকের ব্যবস্থা বিবেচনা করা যেতে পারে৷
গ) আন্তঃদেশীয় দত্তকের ক্ষেত্রে শিশুর রক্ষনাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ব্যবস্্থা জাতীয় দত্তক প্রথা অনুযায়ী হতে হবে এবং এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে৷
ঘ) শিশুকে দত্তক দেয়ার নামে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যাতে অবৈধ অর্থ আয় করতে না পারে সেজন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
ঙ) এই অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিষয় গুলোকে কার্যকর করতে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সমঝোতা বা চুক্তি সম্পন্ন করবে এবং এ কাঠামোর মধ্যে অন্য দেশে শিশুর স্থানান্তরের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা দ্বারা যাতে পরিচালিত হয় সে বিষয় নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ২২: শরণার্থী শিশুর অধিকার
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ এ বিষয় নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে যে, প্রচলিত আন্তর্জাতিক বা নিজ দেশের আইন ও কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী কোন শিশু যদি শরণার্থীর অবস্থান চায় অথবা শরণার্থী বিবেচিত হয় তবে তার সাথে পিতামাতা বা অন্য কেউ থাকুক বা না থাকুক, ঐ শিশু এই সনদে এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করেছে এমন অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বা কল্যাণকর দলিলে বর্ণিত অধিকারসমূহ ভোগের ব্যাপারে উপযুক্ত সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা পাবে৷
২. এরূপ শরণার্থী শিশুর রক্ষা ও সহায়তায় এবং পরিবারের সাথে পূনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, পিতামাতাসহ পরিবারের অন্যসদস্যের খোঁজ পেতে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে৷ উপযুক্ত আন্তঃসরকারী, বেসরকারী সংস্থাকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র তাদের বিবেচনামত যথাযথ সাহায্য করবে৷ স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে পারিবারিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত শিশুদের জন্য এমন সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে যা, যে কোন কারণে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে পারিবারিক পরিবেশ বঞ্চিত শিশুদের জন্য এই সনদে উল্লেখ আছে৷
অনুচ্ছেদ - ২৩: প্রতিবন্ধী শিশুর অধিকার
১. মানসিক বা শারীরিকভাবে পঙ্গু শিশু এমন পরিবেশে বাস করবে, যে পরিবেশে সে সুষ্ঠু এবং পরিপূর্ণ জীবনকে উপভোগ করতে পারবে এবং তার মর্যাদা নিশ্চিত হবে৷ সমাজ শিশুর আত্ননির্ভরশীল সক্রিয় অংশগ্রহণের পথকে সুগম করবে৷ এই বিষয়ে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সমূহ স্বীকৃতি দেবে৷
২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ পঙ্গু শিশুদের বিশেষ যত্নের অধিকারকে স্বীকার করবে৷ পঙ্গু বলে বিবেচিত শিশুর পরিচর্যা এবং দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত সম্পদ অনুযায়ী পারিপাশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদানকে উত্সাহিত ও নিশ্চিত করবে৷
৩. পঙ্গু শিশুদের বিশেষ প্রয়োজনের কথা স্বীকার করে এই অনুচ্ছেদের ২ নং প্যারা অনুযায়ী যখনই সম্ভব সহায়তা সমূহ বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে এবং এ বিষয়ে শিশুর পিতামাতা অথবা শিশুর পরিচর্যাকারী অন্যান্যদের আর্থিক সংগতির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে৷ পঙ্গু শিশুটির শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা, পুনর্বাসন ইত্যাদি সেবা, কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুতি এবং বিনোদন লাভের ক্ষেত্রে কার্যকর সুযোগের ব্যবস্থা করে সহায়তা প্রদান করবে৷ তবে তা এমনভাবে প্রদান করা হবে যে শিশুর সাংস্কৃতিক এবং আত্নিক বিকাশসহ ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং যতদূর সম্ভব তার সামাজিক একাত্মতা ঘটাবে৷
৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতার চেতনায় প্রতিরোধক স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা এবং পঙ্গু শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও শারিরীক ক্রিয়ামূলক চিকিত্সার ক্ষেত্রে যথাযোগ্য তথ্য বিনিময়কে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ উত্সাহিত করবে৷ এই সকল তথ্যের বিনিময়ের মধ্যে পুনর্বাসন, শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা বৃদ্ধির পদ্ধতি সংক্রান্ত তথ্য প্রচার এবং সংগৃহিত হবে৷ এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে এই সকল বিষয়ে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার উন্নয়ন ও অভিজ্ঞতার সম্প্রসারণ করা৷ এই বিষয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের প্রয়োজনের কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে৷
অনুচ্ছেদ - ২৪: শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
১. শিশুর সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মানের স্বাস্থ্য, রোগের চিকিত্সা, স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সুবিধা লাভের অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকার করে৷ এই ধরনের সেবায় অধিকার থেকে কোন শিশু যেন বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সর্বাত্নক চেষ্টা করবে৷
২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ এ অধিকার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং বিশেষ ভাবে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে :
(ক) নবজাতক ও শিশু মৃতু্য হ্রাস করবে৷
(খ) প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করবে এবং সকল শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সহায়তা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে৷
(গ) প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার কাঠামো ও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সহজে পাওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যায় এরূপ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ দূষনের বিপদ এবং ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করে ব্যাধি এবং অপুষ্টি বিরুদ্ধে কর্মসূচী গ্রহণ করবে৷
(ঘ) মায়েদের জন্য গর্ভকালীন এবং প্রসবের পর উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবে৷
(ঙ) শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বুকের দুধ পানের সুফল, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত পয়ঃনিস্কাশন এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ব্যাপারে প্রাথমিক জ্ঞানের ব্যবহার সম্পর্কে সমাজের সকলকে বিশেষ করে বাবা মাকে ও শিশুকে জানানো, শিক্ষা দেয়া ও সহায়তা করাকে নিশ্চয়তা দিবে৷
(চ) প্রতিরোধক স্বাস্থ্য সেবা, পিতামাতার কনণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে শিক্ষা এবং সেবা উন্নত করবে৷
৩. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিরাচরিত গতানুগতিক সংস্কার সমূহ দূর করার জন্য সকল কার্যকর ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
৪. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র এই অনুচ্ছেদের অধিকার পর্যায়ক্রমে পূর্ন বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরালো ও উত্সাহিত করবে৷ এই ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের প্রয়োজন বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে৷
অনুচ্ছেদ - ২৫: শিশুর চিকিত্সা পরিচর্যা
উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচর্যা, শারীরিক, মানসিক চিকিত্সায় নিয়োজিত শিশুকে দেয়া চিকিত্সা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়কে নিয়মিত পর্যালোচনার অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে৷
অনুচ্ছেদ - ২৬: শিশুর সামাজিক নিরাপত্তা
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর সামাজিক বীমা সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তা থেকে সুবিধা পাবার অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং এই বিষয়টি কার্যকর করার জন্য নিজ দেশের আইন অনুসারে পূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবে৷
২. উল্লেখিত সুবিধাগুলি শিশুর জন্য কার্যকর করতে ভরন পোষনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তির অবস্থাকে বিবেচনা করে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সম্পদের সরবরাহ করবে৷ শিশু কিংবা তার পক্ষ থেকে আবেদনের সাথে সংগতিপূর্ন অন্য কোন সুবিধাও বিবেচনা করবে৷
অনুচ্ছেদ- ২৭: শিশুর উন্নয়ন
১. প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্নিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য উন্নত জীবন মানের ব্যবস্থার প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়৷
২. পিতামাতা কিংবা শিশুর দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সামর্থ ও সংগতি অনুযায়ী শিশুর উন্নয়নের জন্য উপযোগী জীবন যাপনের মান নিশ্চিত করা৷
৩. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র জাতীয় পরিস্থিতি ও সামর্থ অনুযায়ী শিশুর অধিকারকে বাস্তবায়নের জন্য মা বাবা দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যদের সাহায্য করবে৷ এবং এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগান দেবে এবং সহায়তা কর্মসূচী নেবে৷ বিশেষ করে পুষ্টি, পোশাক ও বাসস্থানের জন্য৷
৪. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ দেশের ভিতরে বা বাইরে শিশুর বাবামা বা শিশুর ভরণপোষণে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভরণপোষণ আদায় নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করবে৷ বিশেষ করে শিশুর আর্থিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি যদি শিশুর কাছ থেকে পৃথকভাবে বাস করে সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চুক্তি বা জাতীয় চুক্তি করতে উত্সাহিত করবে এবং এ জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ - ২৮: শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সমান সুযোগের ভিত্তিতে শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকারকে স্বীকার করবে এবং এই অধিকারকে অধিক বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করবে, বিশেষ করে :
(ক) সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং সহজলভ্য করতে হবে৷
(খ) সাধারণ ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ বহুমুখী মাধ্যমিক শিক্ষাকে উত্সাহ দেয়া, প্রতিটি শিশুর জন্য এইরূপ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা৷ সকল শিশু যেন এ সুযোগ লাভ করতে পারে সে জন্য বিনা খরচে শিক্ষা লাভ ও প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্যের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে৷
(গ) যোগ্যতার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ যাতে সবাই পায় সে জন্য সব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
(ঘ) শিক্ষা বিষয়ক ও বৃত্তিমূলক তথ্য এবং দিক নির্দেশনা সব শিশুর জন্য সহজে গ্রহণযোগ্য ও পর্যাপ্ত হবে৷
(ঙ) বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি উত্সাহিত করা এবং স্কুল ত্যাগের হার কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷
২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্কুলের শৃংখলা বিধানের নিয়ম-কানুন যাতে শিশুর মানবিক মর্যাদা এবং সনদের সাথে সংগতিপূর্ণ হয় সে জন্য উপযুক্ত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
৩. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে জোরদার ও উত্সাহিত করবে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী অজ্ঞতা, নিরপেক্ষতা দূর করার জন্য এবং বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী শিক্ষার ব্যাপারে জ্ঞান সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে৷ এ ব্যাপারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদাকে বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ২৯: শিশুর শিক্ষা
১.অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ শিশু শিক্ষার যে বিষয় সমূহ লক্ষ্য রাখবে তা হচ্ছে :
ক) শিশুর ব্যক্তিত্ব, মেধা এবং মানসিক ও শারীরিক দক্ষতার পূর্ণ বিকাশ৷
খ) মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা এবং জাতিসংঘ ঘোষিত নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ৷
গ) শিশুর পিতামাতার নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং যে দেশে বাস করে সে দেশের মূল্যবোধ, শিশুর নিজস্ব মাতৃভূমিসহ অপরাপর সভ্যতার প্রতি সম্মান বোধকে জাগিয়ে তোলা৷
ঘ) মৈত্রীয় চেতনায় একটি মুক্ত সমাজে দায়িত্বশীল জীবনের জন্য শিশুর প্রস্তুতি নিতে হবে৷ সে কারণে সমঝোতার সাথে শান্তি, সহিষ্ঞুতা, নারীপুরুষের সমান অধিকারসহ সকল জনগণ, বিশেষ গোষ্ঠীভূক্ত জাতি (এথনিক), জাতীয় ও ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং আদিবাসী সকল লোকজনের প্রতি সম্মান দেখাবে৷
ঙ) প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷
২. এই অনুচ্ছেদে কিংবা ২৮নং অনুচ্ছেদ এর যে কোন অংশ অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং পরিচালনার ব্যাপার কোন ব্যক্তি বা সংস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে এমন ভাবে কোন ব্যাখ্যা দেয়া যাবেনা৷ যদিনা ১নং প্যারায় উল্লেখিত নীতিমালা উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহ অনুসরণ না করে থাকে৷ এবং তাদের শিক্ষার মান যদি রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত মানের সাথে নূ্যন্যতম সংগতিপূর্ণ না হয়৷
অনুচ্ছেদ - ৩০: সংখ্যালঘুদের অধিকার
যে সব দেশে জাতি, গোষ্ঠীগত, ধর্মীয় কিংবা ভাষাগত সংখ্যালঘু কিংবা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনগণ রয়েছে সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিজ সংস্কৃতি বজায় রেখে, ধর্মের কথা প্রকাশ এবং চর্চা করা অথবা নিজ ভাষা ব্যবহার থেকে ঐ ধরনের আদিবাসী সংখ্যালঘুদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷
অনুচ্ছেদ - ৩১: শিশুর অবসর ও বিনোদন
১. বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে শিশুর বিশ্রাম, অবসরযাপন, বয়স অনুযায়ী, বিনোদনমূলক কর্মসূচী এবঙ সাংস্কৃতিক, সুকুমার শিল্পে অংশগ্রহণের অবাধ অধিকার অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্বীকার করবে৷
২. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিল্প ও সাংস্কৃতিক জীবনে শিশুর পরিপূর্ণ অংশগ্রহণকে সম্মান করবে ও উন্নতি সাধন করবে এবং সাংস্কৃতিক, সুকুমার শিল্প ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত ও সমানভাবে অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৩২: শিশুর বিকাশ
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক শোষন থেকে শিশুর অধিকারকে রক্ষা করবে৷ স্বাস্থ্য অথবা শারীরিক, মানসিক, আত্নিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর অথবা শিশুর শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটায় অথবা বিপদ আশংকা করে এমন কাজ যেন না হয় তার ব্যবস্থা নেবে৷
অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ এই অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আইনগত, প্রশাসনিক, সামাজিক ও শিক্ষা বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷ এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলের প্রাসংগিত বিষয় সমূহের প্রতি লক্ষ্য রেখে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ পদক্ষে
-
শিশু অধিকার
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯
পর্ব - ২
অনুচ্ছেদ - ৪২: সনদের প্রচার
অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ যথাযথ এবং কার্যকর উপায়ে এই সনদের নীতিমালা ও বিধি ব্যবস্থা সমূহকে পূর্ণ বয়স্ক ও শিশুদের কাছে প্রচার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪৩: সনদ বাস্তবায়ন কমিটি
১. এই সনদে উল্লিখিত দায়িত্বসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি, পরীক্ষার জন্য একটি শিশু অধিকার কমিটি গঠন করবে, যে কমিটি এ সকল কর্মকান্ড বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে৷
২. উচ্চ নৈতিকমানসম্মন্ন এবং এই সনদের বর্ধিত বিষয় সমূহ সম্পর্কে যোগ্যতাসম্পন্ন দশজন বিশেষজ্ঞ এই কমিটিতে থাকবেন৷ অংশ গ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ নাগরিকদের মধ্য থেকে এই কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করবেন৷ তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত যোগ্যতাবলে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন৷ এ ক্ষেত্রে সম ভৌগলিক প্রতিনিধিত্ব এবং প্রধান আইনগত কাঠামো সমূহ বিবেচনায় আনতে হবে৷
৩. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের মনোনিত ব্যক্তিগণের তালিকা থেকে গোপন ব্যালটে কমিটির সদস্যরা নির্বাচিত হবেন৷ প্রত্যেকটি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মধ্য থেকে একজনকেই মনোনয়ন দিতে পারবেন৷
৪. কমিটির প্রাথমিক নির্বাচন এই সনদ কার্যকর হবার ছয় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তীতে প্রতি দুই বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতিটি নির্বাচনের অন্ততঃ চার মাস আগে জাতিসংঘ মহাসচিব অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহকে দুই মাসের মধ্যে তাদের মনোনয়ন পেশের আমন্ত্রন জানিয়ে চিঠি দেবেন৷ এরপর মহাসচিব মনোনয়ন ব্যক্তিগণকে কোন রাষ্ট্র কর্তৃক মনোনীত তা উল্লেখ করে উক্ত ব্যক্তিদের নামে বর্ণক্রমানুসারে একটি তালিকা তৈরী করে এই সনদের অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের নিকট পেশ করবেন৷
৫. মহাসচিবের আহবানে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের বৈঠকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ উপস্থিতি ফোরাম হিসাবে বিবেচিত হবে৷ কমিটির সদস্য হিসাবে তারাই নির্বাচিত হবেন যারা বৈঠকে উপস্থিত এবং ভোটদানকারী অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র সমূহের প্রতিনিধিদের সর্বাধিক এবং নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট লাভ করবেন৷
৬. চার বছরের মেয়াদের জন্য কমিটির সদস্যগণ নির্বাচিত হবেন৷পুনরায় মনোনয়ন পেলে তাঁরা পুনঃনির্বাচিত হবার যোগ্য বিবেচিত হবেন৷ প্রথম বারের নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন সদস্যের মেয়াদ প্রথম নির্বাচনের পর দুই বছর শেষে উত্তীর্ণ হবে৷ এই পাঁচজন সদস্যের নাম সভার সভাপতি কর্তৃক লটারীর মাধ্যমে ঠিক হবে৷
৭. কমিটির কোন সদস্যের মৃত্যু, পদত্যাগ বা অন্য যে কোন কারণে কমিটির দায়িত্বপালনে অপারগ হলে শূণ্য পদে ঐ মনোনয়নদানকারী অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মধ্য থেকে আরেকজন বিশেষজ্ঞকে মনোনীত করবেন৷ তিনি কমিটির অনুমোদনক্রমে বাকি মেয়াদের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন৷
৮. কমিটি তার নিজস্ব কার্যপ্রণালী বিধি প্রণয়ন করবে৷
৯. দুই বছরের মেয়াদের জন্য কমিটি তার কর্মকর্তাদের নির্বাচিত করবে৷
১০. কমিটির বৈঠক সাধারণতঃ জাতিসংঘ প্রধান কার্যালয়ে অথবা কমিটি নির্ধারিত অন্য কোন সুবিধাজনক স্থানে অনুষ্ঠিত হবে৷ সাধারণতঃ বছরে একবার কমিটির সভা হবে৷ কমিটির বৈঠকগুলো কত সময় চলবে তা নির্ধারণ এবং প্রয়োজন বোধে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে, এই সনদের অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর বৈঠকে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুমোদনক্রমে৷
১১. এই সনদে নির্ধারিত কমিটির কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে পরিচালনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব প্রয়োজনীয় কর্মচারী এবং সুবিধাদির ব্যবস্থা করবেন৷
১২. সাধারণ পরিষদের অনুমোদন ক্রমে এই সনদের আওতায় প্রতিষ্ঠিত কমিটির সদস্যগণ সাধারণ পরিষদ নির্ধারিত শর্তানুযায়ী জাতিসংঘ সংস্থান থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ করবেন৷
অনুচ্ছেদ - ৪৪: সনদ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন
১. অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘ মহাসচিবের মাধ্যমে কমিটির কাছে এই সনদে স্বীকৃত অধিকার সমূহ প্রতিষ্টার ব্যাপারে নিজ রাষ্ট্রে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন সেই সব অধিকার বাস্তবায়নের অগ্রগতির ব্যাপারে প্রতিবেদন পেশের স্বীকৃতি দিয়েছে :
(ক) সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের এই সনদে অন্তর্ভুক্তির দুই বছরের মধ্যে ;
(খ) এর পর থেকে প্রতি পাঁচ বছরে৷
২. এই ধারার আওতায় তৈরী করা প্রতিবেদেন এই সনদের আওতাধীন বাধ্যবাধকতাগুলো পালনের ক্ষেত্রে সব প্রয়োজনীয় বিষয় এবং অনুবিধা, যদি থাকে, তার উল্লেখ থাকতে হবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশে সনদ বাস্তবায়ন সম্পর্কে কমিটিতে একটি ব্যাপক ধারণা দেয়ার জন্য প্রতিবেদনে পর্যাপ্ত তথ্য থাকতে হবে৷
৩. যে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র কমিটির কাছে ব্যাপক প্রাথমিক প্রতিবেদন পেশ করেছে, তাকে এই ধারার প্যারা-১, (খ) অনুযায়ী পেশ করা পরবর্তী প্রতিবেদন সমূহে পূর্বে দেয়া মৌলিক তথ্যাদি পুনরায় উল্লেখ করার প্রয়োজন হবে না৷
৪. কমিটি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের কাছে সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আরো তথ্য জানানোর জন্য অনুরোধ করতে পারে৷
৫. কমিটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদের কাছে প্রতি দুই বছরে তার কর্মতত্পরতার উপর প্রতিবেদন পেশ করবে৷
অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ তাদের প্রতিবেদনগুলো নিজ দেশের জনগণকে ব্যাপকভাবে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪৫: সনদ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগীতা
সক্রিয়ভাবে এই সনদের বাস্তবায়নকে উত্সাহিত করতে এবং এই সনদের আওতাধীন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে জোরদার করার জন্য :
(ক) বিশেষজ্ঞ সংস্থা সমূহ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল এবং জাতিসংঘের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই সনদের সেইসব বিধি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারী হিসাবে বিবেচিত হবে, যে সব বিধি ব্যবস্থা উল্লেখিত সংগঠন সমূহের নিজ দায়িত্বের আওতাভূক্ত৷ এই সনদের বিষয়সমূহ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল এবং অন্যান্য উপযুক্ত সংস্থার কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ আহবান করতে পারে, যে সব ক্ষেত্র বিশেষজ্ঞ পরামর্শ আহবান করতে পারে, যে সব ক্ষেত্র ঐ সব সংস্থার নিজ দায়িত্বের আওতাধীন৷ কমিটি এই সনদের সেইসব ক্ষেত্র বাস্তবায়নের উপর বিশেষজ্ঞ সংস্থা, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন দেয়ার আহবান জানাতে পারে, যে সব ক্ষেত্র এসব তত্পরতার আওতাধীন;
(খ) অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলির কোন প্রতিবেদনে যদি কারিগরী পরামর্শ বা সহায়তার জন্য অনুরোধ অথবা চাহিদা সম্পর্কে কমিটি তার মতামত এবং যদি পরামর্শ দেয়ার থাকে তা উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহ, জাতিসংঘ শিশু তহবিল এবং অন্যান্য যথাযথ সংস্থাসমূহের কাছে প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দিবে;
(গ) কমিটি সাধারণ পরিষদের কাছে শিশু অধিকার সম্পর্কিত সুনিধিষ্ট বিষয়সমূহ পর্যালোচনা, বিবেচনা করার জন্য সহাসচিবকে অনুরোধ করতে পারে ;
(ঘ) এই সনদের ৪৪ এবং ৪৫ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমিটি পরামর্শ এবং সাধারণ সুপারিশমালা প্রণয়ন করতে পারে৷ এ ধরনের পরামর্শ ও সাধারণ সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে কোন মন্তব্য থাকলে তা সহ সাধারণ পরিষদে পেশ করা হবে৷
পর্ব - ৩
অনুচ্ছেদ - ৪৬: সনদ স্বাক্ষর
এই সনদ সকল রাষ্ট্রে স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪৭: সনদ অনুমোদন
এই সনদ অনুমোদন সাপেক্ষে অনুমোদনের দলিল জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা থাকবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪৮: সনদে অংশগ্রহণ
এই সনদে যে কোন রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের পথ খোলা থাকবে৷ এই অংশগ্রহণের দলিল জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা থাকবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪৯: সনদ কার্যকর
১. জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে অনুমোদন বা অংশগ্রহণের বিশতম দলিল জমা হবার পরবর্তী ত্রিশতম দিনে এই সনদ কার্যকর হবে৷
২. অনুমোদন বা অংশগ্রহণের বিশতম দলিল জমা হবার পর সনদ অনুমোদনকারী অথবা সনদে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাষ্ট্র তার অনুমোদন বা অংশগ্রহণ সংক্রান্ত দলিল জমা দেয়ার পর ত্রিশতম দিনে এই সনদ ঐ রাষ্ট্রের জন্য কার্যকর হবে৷
অনুচ্ছেদ- ৫০: সনদ সংশোধন
১. যে কোন অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র কোন সংশোধনীর প্রস্তাব করতে পারবে এবং তা জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পেশ করতে হবে৷ এরপর মহাসচিব প্রস্তাবিত সংশোধনী অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোকে জানাবেন, সেই সাথে প্রস্তাবের উপর আলোচনা এবং ভোট গ্রহণের জন্য অংশগ্রহনকারী রাষ্ট্রগুলো সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য রাজি কি-না তা জানাবার জন্য অনুরোধ জানাবেন৷ এই যোগাযোগের তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র এ ধরনের সম্মেলনে রাজি হলে মহাসচিব জাতিসংঘের আয়োজনে সম্মেলন আহবান করবেন৷ সম্মেলনে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রের উপস্থিতি এবং ভোটের মাধ্যমে যে কোন সংশোধনী গ্রহণ করা হলে তা অনুমোদনের জন্য সাধারণ পরিষদে পেশ করতে হবে৷
২. এই অনুচ্ছেদে ১ নং প্যারা অনুযায়ী গৃহীত কোন সংশোধনী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত হলে তা কার্যকর হবে৷
৩. যখন কোন সংশোধনী কার্যকর হবে তখন সেই সংশোধনী অনুমোদনকারী রাষ্ট্রসমূহ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে৷ অন্যান্য অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রকেই সনদের শর্তাবলী এবং পূর্বের যে কোন সংশোধনী মেনে চলতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৫১: আপত্তি উথ্থাপন
১. অনুমোদন বা অন্তর্ভুক্তির সময় রাষ্ট্রসমূহের উত্থাপিত কোন আপত্তির বিষয় জাতিসংঘ মহাসচিব গ্রহণ করবেন এবং তা সব রাষ্ট্রকে অবহিত করবেন৷
২. এই সনদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিহীন কোন আপত্তি গ্রহণ করা যাবে না৷
৩. কোন বিষয়ের আপত্তি যে কোন সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে নোটিশ দিয়ে প্রত্যাহার করা যাবে৷ তারপর মহাসচিব তা সব রাষ্ট্রকে জানাবেন৷ মহাসচিব যে দিন নোটিশ পাবেন, সেদিন থেকে তা কার্যকর হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৫২: সনদ বর্জন
জাতিসংঘ মহাসচিবকে লিখিত নোটিশ প্রদান করে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র এই সনদ বর্জন করতে পারে৷ মহাসচিব এ নোটিশ পাবার তারিখ থেকে এক বছর পর বর্জন কার্যকর হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৫৩: সনদের সংরক্ষন
জাতিসংঘ মহাসচিব এই সনদের সংরক্ষণকারীর দায়িত্ব পালন করবেন৷
অনুচ্ছেদ - ৫৪: সনদের ভাষা
মূল সনদ, যার আরবী, চীনা, ইংরেজী, ফরাসী, রুশ ও স্পেনীয় অনুবাদ, যা সমান মান সম্পন্ন-জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তা সংরক্ষিত থাকবে৷