Daffodil International University
Faculty of Humanities and Social Science => Law => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on October 22, 2011, 07:50:39 AM
-
ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৮৪
(১৯৮৪ সালের ১০ নং অধ্যাদেশ)
(২৬ জানুয়ারী, ১৯৮৪)
যেহেতু ভূমির উত্পাদন সর্বোচ্চকরণের এবং ভূ-মনিব ও বর্গাদারগণের মধ্যে উন্নততর সম্পর্ক নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে ভূমির মধ্যস্বত্ব, ভূমির জোতস্বত্ব ও ভূমির হস্তান্তর সম্পর্কিত আইন সংস্কার করা সমীচীন, সেহেতু এক্ষণে ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চের ঘোষণার পন্থানুসরণে এবং তত্পক্ষে তাহাকে সমর্থনকারী সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতঃ রাষ্ট্রপতি নিম্নবর্ণিত অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করিতে মনস্থ করেন :
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
ধারা-১। (সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রারম্ভ) :
(১) এই অধ্যাদেশ 'ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৮৪' নামে অভিহিত হইবে।
(২) সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যেই তারিখ নির্দিষ্ট করিবেন, সেই তারিখেই ইহা বলবত্ হইবে।
ধারা-২। (সংজ্ঞার্থে) :
এই অধ্যাদেশ-বিষয়ে বা প্রসঙ্গে পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে -
ক) 'বর্গাদার' বলিতে এইরূপ ব্যক্তি বুঝায়, যিনি আধি, বর্গা বা ভাগ বলিয়া সাধারণভাবে পরিচিত পদ্ধতিতে অপর কোনো ব্যক্তির জমি চাষ করিয়া থাকেন, এই শর্তে যে, সে ঐ জমির উত্পন্ন ফসলের একটি অংশ উক্ত ব্যক্তিকে অর্পণ করিয়া থাকেন;
খ) 'বর্গাচুক্তি' বলিতে এইরূপ চুক্তিকে বুঝায়, যাহার অধীনে কোনো ব্যক্তি বর্গাদার হিসাবে কোনো জমি চাষ করিয়া থাকেন;
গ) 'বর্গা জমি' বলিতে বর্গাদার হিসাবে কোনো ব্যক্তির চাষাধীন কোনো জমি বুঝায়;
ঘ) 'পরিবার' বলিতে কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে ঐ ব্যক্তিকে এবং তাহার স্ত্রী, পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা, পুত্রবধু, পৌত্র ও অবিবাহিত পৌত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করিয়া থাকে :
তবে শর্ত থাকে যে, পিতামাতা হইতে স্বাধীনভাবে পৃথক মেসে বসবাস করিয়া আসিলে এবং তাহার নিজ নামে ইউনিয়ন অভিকর প্রদান করিয়া থাকিলে, এমন সাবালক বা বিবাহিত পুত্র এবং তাহার স্ত্রী, পুত্র ও অবিবাহিতা কন্যা একটি পৃথক পরিবার গঠন করে বলিয়া গণ্য হইবে;
ঙ) 'বাস্তু' বলিতে এক মানানসই বিঘার অধিক নহে, এমন একটি এলাকা ব্যাপিয়া বহির্গৃহ, পুকুর ও তত্সংযুক্ত ঘেরাও জায়গাসমূহ সমেত একটি বাসগৃহ বুঝায়।
তবে শর্ত থাকে যে, যেইক্ষেত্রে এইরূপ এলাকা এক মানানসই বিঘার অধিক হয়, সেইক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত জমি বাস্তু বলিয়া গণ্য হইবে না;
চ) 'মালিক' বলিতে কৃষি জমির অধিকারী কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে বুঝায়;
ছ) 'মনিব' বলিতে কোনো বর্গাজমি সম্পর্কে সেই ব্যক্তিকে বুঝায়, যাহার নিকট হইতে বর্গাদার বর্গাচুক্তিধীনে চাষের জন্য জমি লাভ করিয়া থাকে;
জ) 'ব্যক্তিগত চাষ' বলিতে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক -
১. তাহার নিজ শ্রম দ্বারা, বা
২. তাহার পরিবারের কোনো সদস্যের শ্রম দ্বারা, বা
৩. তাহার নিজের শ্রম বা পরিবারের কোনো সদস্যের শ্রম অনুপূরণ করিবার জন্য মজুরিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারীর বা শ্রমিকের শ্রম দ্বারা-তাহার নিজের জমির বা তাহার নিজের জন্য বর্গাজমির চাষ বুঝায়;
ঝ) 'নির্ধারিত' বলিতে এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত বুঝায়;
ঞ) 'নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষ' বলিতে এই অধ্যাদেশের অধীনে আনয়নযোগ্য আপিলের সকলগুলির বা যেই কোনোটির শুনানীর উদ্দেশ্যে সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অথবা ঐরূপ উদ্দেশ্যের জন্য বিধিমালায় নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝায়;
ট) 'নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ' বলিতে আপিল শুনানীর উদ্দেশ্য ব্যতীত এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যসমূহের সকলগুলির বা যেই কোনোটির জন্য সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অথবা ঐরূপ উদ্দেশ্যসমূহের জন্য বিধিমালায় নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝায়;
ঠ) 'উত্পন্ন ফসল' বলিতে খড়, যেই কোনো শস্যের বৃন্ত ও অন্য যেই কোনো শস্যবিশেষ অন্তর্ভুক্ত করিয়া থাকে;
ড) 'বিধিমালা' বলিতে এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত বিধিমালা বুঝায়;
ঢ) 'পল্লী এলাকা' বলিতে পৌরসভার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নহে, এমন যেই কোনো এলাকাকে বুঝায়।
ধারা-৩। (অন্যান্য আইন, ইত্যাদির উপর প্রাধান্য লাভকারী অধ্যাদেশ) :
বর্তমানে বলবৎ অন্য যেই কোনো আইনে অথবা যেই কোনো প্রথা বা রীতিতে অথবা যেই কোনো চুক্তি বা সাধনপত্রের অন্তর্গত বিপরীত (কার্যকারিতাযুক্ত) কোনো কিছু থাকা সত্ত্বেও এই অধ্যাদেশের বিধানাবলীর কার্যকারিতা বজায় থাকিবে।
-
দ্বিতীয় অধ্যায়
কৃষি জমির অধিগ্রহণ সীমিতকরণ
ধারা-৪। (কৃষি জমির অধিগ্রহণ সীমিতকরণ) :
(১) যিনি বা যাহার পরিবার ষাট মানানসই বিঘা অপেক্ষা অধিক কৃষি জমির মনিব রহিয়াছেন, এমন কোনো মালিক হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য যেই কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষি জমি অর্জন করিবেন না।
(২) যিনি বা যাহার পরিবার ষাট মানানসই বিঘা অপেক্ষা কম কৃষি জমির মনিব রহিয়াছেন, এমন একজন মালিক যেই কোনো উপায়ে নতুন কৃষি জমি অর্জন করিতে পারিবেন, কিন্তু ঐরূপ নতুন জমি তাহার মনিবানায় থাকা কৃষি জমি সমেত ষাট মানানসই বিঘার অধিক হইবে না।
(৩) যদি কোনো মালিক এই ধারার বিধানাবলী লঙ্ঘন করিয়া কোনো নতুন কৃষি জমি অর্জন করিয়া থাকেন, তাহা হইলে যেই পরিমাণ ষাট মানানসই বিঘার অতিরিক্ত হইবে, তাহা সরকারের নিকট অর্পিত হইবে এবং উত্তরাধিকার, দান বা ইচ্ছাপত্রের মাধ্যমে অধিগ্রহীত অতিরিক্ত জমির ক্ষেত্র ব্যতীত ঐভাবে অর্পিত জমির জন্য তাহাকে কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হইবে না।
(৪) (৩) উপধারা অনুযায়ী অতিরিক্ত জমির জন্য প্রদেয় ক্ষতিপূরণ যথানির্ধারিতব্য প্রকারে নিরূপণ ও প্রদান করিতে হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, এইখানে এইরূপ ক্ষতিপূরণ শুধুমাত্র অতিরিক্ত জমির অংশবিশেষের জন্য প্রদেয় হইলে সেইখানে ক্ষতিপূরণ নিরূপণ ও প্রদান সেই সকল অতিরিক্ত জমির অংশবিশেষের জন্য প্রদান করা হইবে, যাহা মালিক এতদপক্ষে নির্দিষ্ট করিয়া দিবেন।
-
তৃতীয় অধ্যায়
স্থাবর সম্পত্তির বেনামী লেনদেন নিষিদ্ধকরণ
ধারা-৫। (বেনামী লেনদেন চলিবে না) :
(১) কোনো ব্যক্তিই তাহার নিজ উপকারার্থে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করিতে পারিবেন না।
(২) যেইক্ষেত্রে কোনো স্থাবর সম্পত্তির মালিক রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলের মাধ্যমে উহা হস্তান্তর বা ইচ্ছাপত্রবলে দান করিয়া থাকেন, সেইক্ষেত্রে ইহা অনুমান করিয়া নিতে হইবে যে, সেই দলিলে যথানির্দিষ্ট উক্ত সম্পত্তিতে নিহিত তাহার উপকারদায়ক স্বার্থ হস্তান্তর করিয়াছেন এবং হস্তান্তরগ্রহিতা বা উত্তরদায়-গ্রাহক মনিবের উপকারার্থে উক্ত সম্পত্তি ধারণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং মনিব উক্ত সম্পত্তিতে তাহার উপকারদায়ক স্বার্থ হস্তান্তর করিবার অভিপ্রায় করেন নাই অথবা হস্তান্তরগ্রহিতা বা উত্তরদায়-গ্রাহক মনিবের উপকারার্থে উক্ত সম্পত্তি ধারণ করিয়া থাকেন, ইহা প্রদর্শন করিবার জন্য মৌখিক বা দস্তাবেজামূলক কোনো সাক্ষ্যই কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের সম্মুখে কোনো কার্যব্যবস্থায় গ্রহনযোগ্য হইবে না।
(৩) যেইক্ষেত্রে কোনো স্থাবর সম্পত্তি রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করা হয়, সেইক্ষেত্রে ইহা অনুমান করিয়া লইতে হইবে যে, ঐ ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তি তাহার নিজ উপকারার্থে অর্জন করিয়াছেন এবং যেইক্ষেত্রে ঐরূপ হস্তান্তরের পণ অপর কোনো ব্যক্তি প্রদান করিয়া থাকেন বা যোগান দেন, সেইক্ষেত্রে ইহা অনুমান করিয়া লইতে হইবে যে, ঐ অপর ব্যক্তি হস্তান্তর-গ্রহিতার উপকারার্থে ঐরূপ পণ প্রদান করিবার বা যোগান দেওয়ার অভিপ্রায় করেন এবং হস্তান্তরগ্রহিতা অপর কোনো ব্যক্তির উপকারার্থে বা পণপ্রদানকারী বা যোগানদার ব্যক্তির উপকারার্থে উক্ত সম্পত্তি ধারণ করেন, ইহা প্রদর্শন করিবার জন্য মৌখিক বা দস্তাবেজমূলক কোনো সাক্ষ্যই কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের সম্মুখে কোনো কার্যব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য হইবে না।
-
চতুর্থ অধ্যায়
বাস্তু
ধারা-৬। (বাস্তু হইতে উচ্ছেদ ইত্যাদি চলিবে না) :
পল্লী এলাকায় মনিব কর্তৃক বাস্তু হিসাবে ব্যবহৃত কোনো জমি কোনো অফিসার, আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দ্বারা আটক, ক্রোক, বাজেয়াপ্তকরণ বা বিক্রয়সহ সকল আইনগত প্রক্রিয়া হইতে অব্যাহতি পাইবে এবং ঐরূপ জমির মনিবকে কোনো উপায়েই উক্ত জমি হইতে বঞ্চিত বা বেদখল বা উচ্ছেদ করা যাইবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোনো কিছুই কোনো আইনের অধীনে অনুরূপ বাস্ত অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।
ধারা-৭। (বাস্তুর জন্য খাস জমির বন্দোবস্ত) :
(১) পল্লী এলাকায় বাস্তু হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার উপযুক্ত কোনো খাস জমি পাওয়া গেলে সরকার উক্ত জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার সময় ভূমিহীন কৃষক ও শ্রমিকদের অগ্রাধিকার প্রদান করিবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তিকেই উপরোক্ত উদ্দেশ্যে পাঁচ কাঠার অধিক অনুরূপ কোনো জমি বরাদ্দ করা হইবে না।
(২) (১) উপধারার অধীনে বন্দোবস্তী কোনো জমি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য হইবে, কিন্তু হস্তান্তরযোগ্য হইবে না।
-
পঞ্চম অধ্যায়
বর্গাদারগণ
ধারা-৮। (বর্গাচুক্তির অধীনে চাষ) :
(১) এই অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তিই তাহার জমি চাষ করিবার জন্য অপর কোনো ব্যক্তিকে অনুমোদন করিবেন না এবং কোনো ব্যক্তিই অপর কোনো ব্যক্তির জমি তাহাদের মধ্যে ঐ জমির উত্পন্ন ফসল ভাগ করিয়া নেয়ার শর্তে চাষ করিবেন না, যদি তাহারা অনুরূপ চাষের জন্য যথানির্ধারিতব্য ফরমে ও ধরনে একটি চুক্তি সম্পাদন করিয়া থাকেন।
(২) কোনো বর্গা চুক্তি ঐ বর্গা চুক্তিতে যেই তারিখ নির্দিষ্ট করা হইবে, সেই তারিখ হইতে আরম্ভ করিয়া পাঁচ বত্সরের মেয়াদের জন্য বৈধ থাকিবে।
ধারা-৯। (বিদ্যমান বর্গাদারদের স্বীকৃতি) :
(১) এই অধ্যাদেশের প্রারম্ভের অব্যবহিত পূর্বে অপর কোনো ব্যক্তির জমি বর্গাদার হিসাবে চাষকারী কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী উক্ত জমি সংক্রান্ত বর্গাদার বলিয়া গণ্য হইবেন।
(২) এই অধ্যাদেশের প্রারম্ভের তারিখ হইতে নব্বই দিনের মধ্যে (১) উপধারায় বর্ণিত কোনো জমির মনিব বা বর্গাদার ৮ ধারা অনুযায়ী আবশ্যক একটি চুক্তি সম্পাদন করিবেন।
(৩) যদি পক্ষগণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে তাহাদের মধ্যে যেই কোনো একজন চুক্তি সম্পাদন করানোর জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন পেশ করিতে পারিবেন।
(৪) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণের ষাট দিনের মধ্যে যেইরূপ উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ অনুসন্ধান চালানোর পর আবেদনকারী উক্ত চুক্তি সম্পাদন করানোর অধিকারী কিনা, তত্সম্পর্কে সিন্ধান্ত গ্রহণ করিবেন।
(৫) যদি নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, আবেদনকারী আবেদনে উল্লিখিত কোনো সম্পত্তি সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন করানোর অধিকারী, তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ বিরোধী পক্ষকে নির্দেশ গ্রহণের তারিখ হইতে দুই সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিবেন এবং যদি উক্ত পক্ষ চুক্তি সম্পাদন করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ উক্ত পক্ষের হইয়া ইহা সম্পাদন করিবেন।
(৬) এই ধারার অধীনে সম্পাদিত বর্গাচুক্তি এই অধ্যাদেশ প্রারম্ভের তারিখ হইতে কার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে এবং ঐ তারিখ হইতে পাঁচ বত্সরের মেয়াদের জন্য বৈধ থাকিবে।
ধারা-১০। (বর্গাদারের মৃত্যুর পর বর্গাজমির চাষ) :
(১) যেইক্ষেত্রে কোনো বর্গাদার বর্গাচুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই মারা যান, সেইক্ষেত্রে অনুরূপ চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা এই অধ্যাদেশের অধীন বর্গাচুক্তির অবসান না হওয়া পর্যন্ত মৃত বর্গাদারের পরিবারের জীবিত সদস্যগণ বর্গাজমির চাষ অব্যাহত রাখিতে পারিবেন।
(২) যেইক্ষেত্রে বর্গাদার তাহার পরিবারে উক্ত জমি চাষ করার মতো অবস্থায় স্থিত কোনো ব্যক্তিকে না রাখিয়া মারা যান, সেইক্ষেত্রে জমির মনিব জমি ব্যক্তিগত চাষের অধীনে আনিতে পারিবেন অথবা অন্য কোনো বর্গাদার কর্তৃক উক্ত জমির চাষ অনুমোদন করিতে পারিবেন।
ধারা-১১। (বর্গাচুক্তির অবসান) :
(১) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিম্নোক্ত হেতু প্রদত্ত আদেশ কার্যে পরিণতকরণের ক্ষেত্র ব্যতীত কোনো মনিব বর্গাচুক্তি অবসান করিবার অধিকারী হইবে না-
ক) বর্গাদার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে বর্গাজমি চাষ করিতে ব্যর্থ হইয়াছে।
খ) বর্গাদার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থিত উক্ত বর্গাজমির অনুরূপ কোনো জমিতে গড়ে যে পরিমাণ শস্য উত্পন্ন হয়, সেই পরিমাণ শস্য উত্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন;
গ) বর্গাদার বর্গাজমি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কৃষি ব্যতিত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিয়াছেন;
ঘ) বর্গাদার এই অধ্যাদেশের কোনো বিধান অথবা তদাধীনে প্রণীত বিধি বা আদেশ লঙ্ঘন করিয়াছেন;
ঙ) বর্গাদার তার চাষের অধিকার সমর্পণ বা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করিয়াছেন;
চ) বর্গাজমি বর্গাদারের ব্যক্তিগত চাষের অধীন নহে; অথবা
ছ) মনিবের ব্যক্তিগত চাষের নিমিত্তে বর্গাজমির প্রকৃতই আবশ্যক হয়।
(২) যদি মনিব যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে (১) (ছ) উপধারার অধীন কোনো বর্গাচুক্তির অবসানান্তে কোনো জমি ব্যক্তিগত চাষাধীনে আনিতে ব্যর্থ হন কিংবা অনুরূপ অবসানের তারিখের চব্বিশ মাসের মধ্যে অপর কোনো বর্গাদার কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত বর্গাদারের নিকট ঐ জমির দখল পুনরুদ্ধার করিয়া দিতে পারিবেন, যিনি উহার ভিত্তিতে এই অধ্যাদেশের অধীন বর্গাচুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া অথবা বর্গাচুক্তির অবসান হওয়া পর্যন্ত ঐ জমির চাষ অব্যাহত রাখিবেন।
ধারা-১২। (বর্গাজমির উত্পন্ন ফসলের বিভাজন) :
(১) কোনো বর্গাজমির উত্পন্ন ফসল এইভাবে ভাগ করা হইবে, যথা -
ক) মনিব জমির জন্য এক-তৃতীয়াংশ গ্রহণ করিবেন;
খ) বর্গাদার শ্রমের জন্য এক-তৃতীয়াংশ গ্রহণ করিবেন; এবং
গ) মনিব বা বর্গদার বা উভয়ে তাহাদের বহনকৃত শ্রমের পরিব্যয় ব্যতীত চাষের পরিব্যয়ের সমানুপাতে এক-তৃতীয়াংশ গ্রহণ করিবেন।
(২) কোনো বর্গাজমির কাটা শস্য হয় বর্গাদারের মালিকানাধীন কোনো স্থানে অথবা মনিবের মালিকানাধীন কোনো স্থানে, যেইটাই বর্গাজমির নিকটতম হয়, অথবা পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সম্মত অন্য কোনোস্থান মাড়াই ও বিভাজনের জন্য গোলাজাত করা হইবে।
(৩) বর্গাদার শস্য কাটার অব্যবহিত পরে মনিবের প্রাপ্য উত্পন্ন ফসলের অংশ মনিবের নিকট গ্রহণ করিবার জন্য প্রদান করিবেন এবং যখন মনিব উক্ত প্রদত্ত অংশ গ্রহণ করিয়া থাকেন, তখন প্রত্যেক পক্ষ উত্পন্ন ফসল হইতে তাহার গৃহীত পরিমাণের জন্য যথানির্ধারিতব্য ফরমে একটি রশিদ অপর পক্ষকে প্রদান করিবেন।
(৪) যদি মনিব বর্গদার কর্তৃক তাহার নিকট গ্রহণের জন্য প্রদত্ত উত্পন্ন ফসলের অংশগ্রহণ করিতে অথবা উহার জন্য রসিদ প্রদান করিতে অস্বীকার করিয়া থাকেন, তাহা হইলে বর্গাদার উক্ত ঘটনা লিখিতভাবে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে অবগত করিবেন।
(৫) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত অবগতি লাভের পর মনিবের উপর যথানির্ধারিতব্য ফরমে ও ধরনে একটি নোটিশ জারি করিবেন, তাহাকে নোটিশ জারির তারিখ হইতে সাত দিনের মধ্যে উত্পন্ন ফসলের অর্পন গ্রহণ করার আহ্বান জানাইয়া।
(৬) যদি মনিব নোটিশ জারির তারিখ হইতে সাত দিনের মধ্যে উত্পন্ন ফসলের অর্পন গ্রহণ করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বর্গাদারকে উক্ত উত্পন্ন ফসল যেই কোনো সরকারী ক্রয় এজেন্সীর নিকট অথবা অনুরূপ এজেন্সীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করিতে অনুমতি দিবেন।
(৭) যদি বর্গাদার উত্পন্ন ফসল বিক্রয় করে, তাহা হইলে তিনি বিক্রয়ের তারিখ হইতে সাতদিনের মধ্যে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত বিক্রয়লব্ধ অর্থ জমা দিবেন।
(৮) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ তাহার নিকট জমা-দেওয়া অর্থের পরিমাণ এবং বর্গাদার কর্তৃক বিক্রিত উত্পন্ন ফসলের পরিমাণ বিবৃত করিয়া যথানির্ধারিতব্য ফরমে একটি রসিদ বর্গাদারকে দিবেন এবং উক্ত রসিদ মনিবের নিকট উত্পন্ন ফসলের অংশ অর্পনের বাধ্যতা হইতে বর্গাদারকে মুক্ত করিবে।
তবে শর্ত থাকে যে, যেইক্ষেত্রে উত্পন্ন ফসলের কোনো পরিমাণ মনিবের পাওনা থাকে, সেইক্ষেত্রে অগ্রদত্ত বা অবিক্রিত উক্ত ফসলের পরিমাণের অর্পণ সম্পর্কে বর্গদারের বাধ্যতা অব্যাহত থাকিবে।
(৯) যেইক্ষেত্রে (৭) উপধারার অধীনে কোনো জমা করা হয়, সেইক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত জমা সম্পর্কে মনিবকে যথানির্ধারিতব্য ফরমে ও ধরনে অবগত করিবেন।
(১০) যদি মনিব অনুরূপ জমা সম্পর্কে অবগতি লাভের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে উক্ত জমাকৃত অর্থ গ্রহণ না করিয়া থাকেন, তাহা হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত অর্থ (সরকারী) কোষাগারে রাজস্ব জমা খাতে মনিবের আকলনে (অনুকূলে) জমা করিতে পারিবেন এবং যথানির্ধারিতব্য ফরমে ও ধরনে উক্ত জমা সম্পর্কে মনিবকে অবগত করিতে পারিবেন।
ধারা-১৩। (বর্গাদারের ক্রয়াধিকার) :
(১) যেইক্ষেত্রে মনিব বর্গাজমি বিক্রয় করিবার অভিপ্রায় করেন, সেইক্ষেত্রে তিনি বর্গাদারকে লিখিতভাবে এইমর্মে আহ্বান করিবেন যে, তিনি উক্ত জমি ক্রয় করিতে ইচ্ছুক রহিয়াছেন কিনা।
তবে শর্ত থাকে যে, যেইক্ষেত্রে মনিব উক্ত জমি কোনো সহশরিকের নিকট বা তাহার পিতা-মাতা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা কিংবা পৌত্রের নিকট বা তাহার পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নিকট বিক্রয় করিবেন, সেইক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
(২) বর্গাদার প্রস্তাব গ্রহণের তারিখ হইতে পনেরো দিনের মধ্যে উক্ত জমি ক্রয় করা বা না করা সংক্রান্ত তাহার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে মনিবকে অবহিত করিবেন।
(৩) যদি বর্গাদার উক্ত জমি ক্রয় করিতে সম্মত হন, তাহা হইলে তিনি জমিটির দাম সম্পর্কে মনিবের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করিবেন এবং তাহাদের মধ্যে যথাসম্মতব্য শর্তাবলীতে ক্রয় করিবেন।
(৪) যদি মনিব উক্ত সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বর্গাদারের নিকট হইতে জমিটি ক্রয় করা বা না করা সংক্রান্ত তাহার সিদ্ধান্ত মনিবকে অবহিত করিয়া থাকেন অথবা যদি বর্গাদার মনিবের দাবীকৃত দাম প্রদান করিতে সম্মত না হন, তাহা হইলে মনিব যাহাকে উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ ব্যক্তির নিকট জমিটি বিক্রয় করিতে পারিবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, মনিব উক্ত জমি বর্গাদার কর্তৃক প্রস্তাবিত দাম অপেক্ষা নিম্নতর দামে উক্ত ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করিবেন না।
(৫) যেইক্ষেত্রে বর্গাদার ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বর্গাজমি ক্রয় করিয়া, সেইক্ষেত্রে উক্ত জমি সংক্রান্ত বর্গাচুক্তি ক্রেতার উপর বাধ্যতামূলক হইবে, যেন ক্রেতাই উক্ত চুক্তির একটি পক্ষ ছিলেন।
ধারা-১৪। (বর্গাজমির সর্বোর্ধ্বতা) :
(১) কোনো বর্গাদারই পনেরো মানানসই বিঘার অধিক জমি চাষ করিবার অধিকারী হইবে না।
ব্যাখ্যা : এই সর্বোর্ধ্বতা গণনায়, বর্গাদারের অধিকৃত যেই কোনো জমির এলাকা, এমনকি বর্গাদার হিসাবে তাহার চাষকৃত এবং সম্পূর্ণ ভোগ-বন্ধকের অধীনে তাহার দখলকৃত জমিও বিবেচনায় নেয়া হইবে।
(২) যদি কোনো বর্গাদার পনেরো মানানসই বিঘার অতিরিক্ত জমি চাষ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে উক্ত অতিরিক্ত জমির ক্ষেত্রে বর্গাদার হিসাবে তাহার প্রাপ্য উত্পন্ন ফসলের অংশ সরকার বাধ্যতামূলকভাবে সংগ্রহ করিতে পারিবেন নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এতদপক্ষে প্রদত্ত আদেশবলে।
ধারা-১৫। (চাষকার্যে বাধা-নিষেধ) :
(১) কোনো বর্গাচুক্তির বা সম্পূর্ণ ভোগ-বন্ধকের অধীনে অথবা চাকুরে বা শ্রমিক হিসাবে ব্যতীত কোনো ব্যক্তিই অপর কোনো ব্যক্তির জমি চাষ করিবেন না।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধানাবলী লঙ্ঘন করতঃ অপর কোনো ব্যক্তির জমি চাষ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে সরকার উক্ত জমির উত্পন্ন ফসল বাধ্যতামুলকভাবে সংগ্রহ করিতে পারিবেন নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এতদপক্ষে প্রদত্ত আদেশবলে।
ধারা-১৬। (বিরোধ) :
(১) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বর্গাদার ও মনিবের মধ্যকার নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ সম্পর্কিত প্রত্যেক বিরোধের মীমাংসা করিবেন:
ক) উত্পন্ন ফসলের বিভাজন বা অর্পণ,
খ) বর্গাচুক্তির অবসান,
গ) উত্পন্ন ফসলের গোলাজাতের ও মাড়াইয়ের স্থান।
(২) যদি (১) উপধারায় উল্লিখিত কোনো বিরোধ মীমাংসা এইরূপ কোনো প্রশ্ন উদ্ভুত হয় যে, কোনো ব্যক্তি বর্গাদার কিনা অথবা উত্পন্ন ফসলের অংশ কাহার নিকট অর্পণীয়, তাহা হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রশ্নের নিষ্পত্তি করিবেন।
(৩) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কোনো বিরোধই গ্রাহ্য করিবেন না, যদি না এর নিকট উক্ত বিরোধ উদ্ভুত হওয়ার তারিখ হইতে তিন মাসের মধ্যে উহার মীমাংসার প্রার্থণা সম্বলিত কোনো দরখাস্তের মাধ্যমে বিরোধটি উত্থাপন করা হয়।
(৪) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ পক্ষগণকে শুনানীর সুযোগ দান ও সাক্ষ্য উপস্থাপন এবং ইহা যেইরূপ প্রয়োজনীয় মনে করিয়া থাকেন, সেইরূপ তদন্ত অনুষ্ঠান করার পর দরখান্ত গ্রহণের তারিখ হইতে তিনমাসের মধ্যে এর সিদ্ধান্ত প্রদান করিবেন।
ধারা-১৭। (আপীল) :
(১) এই অধ্যাদেশের কোনো বিধানের অধীনে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত বা গৃহীত যেই কোনো আদেশ, সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষ সমীপে আপিল চলিবে।
(২) (১) উপধারা অনুযায়ী আপিল আপিলকৃত আদেশ, সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা লাভের বা অবগত হওয়ার তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে দায়ের করিতে হইবে।
(৩) নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত (বলিয়া গণ্য) হইবে।
ধারা-১৮। (কার্যবিধি) :
(১) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বা নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাপার, বিরোধ বা আপিল নিষ্পত্তিতে যথানির্ধারিতব্য কার্যবিধি অনুসরণ করিবেন।
(২) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো দরখাস্ত অথবা নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো আপিল দাখিলকারী কোনো ব্যক্তি যথানির্ধারিতব্য ফি প্রদান করিবেন।
ধারা-১৯। (কার্যে পরিণতকরণ) :
নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের বা নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ যথানির্ধারিতব্য ধরনে কার্যে পরিণত বা বলবত করিতে হইবে।
-
ষষ্ঠ অধ্যায়
বিবিধ
ধারা-২০। (এখতিয়ারে প্রতিবন্ধকতা) :
এই অধ্যাদেশের অধীনে কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত বা গৃহীত কোনো আদেশ, সিদ্ধান্ত, ব্যবস্থা বা কার্যব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো আদালতেই প্রশ্ন তোলা যাইবে না এবং কোনো আদালতই অনুরূপ কোনো আদেশ, সিদ্ধান্ত, ব্যবস্থা বা কার্যব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো মোকদ্দমা বা কার্যব্যবস্থা আমলে আনিবেন না।
ধারা-২১। (দণ্ড) :
যেই ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের বা বিধিমালার কোনো বিধান অথবা এই অধ্যাদেশের বা বিধিমালার অধীনে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত কোনো আদেশ লঙ্ঘন করিয়া থাকেন, তিনি জরিমানা দ্বারা শাস্তিযোগ্য হইবেন, যাহা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধিত হইতে পারে।
ধারা-২২। (বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা) :
সরকার এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যাবলী পুরণকল্পে সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিধিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবেন।
-
ভূমি সংস্কার বিধিমালা, ১৯৮৪
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
বিধি-১।
() এই বিধিমালা 'ভূমি সংস্কার বিধিমালা, ১৯৮৪' নামে অভিহিত হইবে।
(২) এই বিধিমালায় বিষয় বা প্রসঙ্গে পরিপন্থী কোনোকিছু না থাকিলে-
(ক) 'ফরম' বলিতে এই বিধিমালার সহিত সংযুক্ত কোনো ফরম বুঝায়;
(খ) 'অধ্যাদেশ' বলিতেতে 'ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ ' (১৯৮৪ সালের ১০নং অধ্যাদেশ) বুঝায়;
(গ) 'ধারা' বলিতে উক্ত অধ্যাদেশের কোনো ধারা বুঝায়।
দ্বিতীয় অধ্যায়
নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ও নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা
বিধি-২।
(১) কোনো নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বা কোনো নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষ উক্ত অধ্যাদেশের অধীনে এর কর্তব্যকর্ম পালনের উদ্দেশ্যে-
(ক) প্রয়োজন হইলে, বাংলা ভাষায় সাক্ষ্য গ্রহণ করিবেন এবং যতদূর সম্ভব দেওয়ানী আদালতে কোনো মোকদ্দমার নিষ্পত্তির জন্য ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি সংহিতায় নির্ধারিত কার্যবিধি অনুসরণ করিবেন;
(খ) পরিদর্শন ও তদন্তের পূর্ববিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর এখতিয়ারভূক্ত কোনো জমি বা ঘর-বাড়ীতে যেইরূপ প্রয়োজনীয় মনে করিবেন, সেইরূপ অফিসারসহ প্রবেশ করিতে পারিবেন;
(গ) লিখিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে তাহার দখলে বা তাহার নিয়ন্ত্রাণাধীনে রহিয়াছে বা রহিয়াছে বলি বিশ্বাস হয়, এমন কোনো জমি বা জোত সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি প্রদান ও অর্পণ করিবার জন্য অথবা কোনো রেকর্ড বা দস্তাবেজ পেশ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবেন।
(২) উক্ত অধ্যাবেশের অধীনে কোনো তদন্তের উদ্দেশ্যে কোনো নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের বা কোনো নির্ধারিত আপিল কর্তৃপক্ষের ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি সংহিতার অধীন মোকদ্দমার বিচারের ক্ষেত্রে যেইভাবে বিধান করা হইয়াছে, সেই একইভাবে সাক্ষী হিসাবে কোনো ব্যক্তিকে তলব করিবার ও তাহার হাজিরা বলবত্ করিবার ক্ষমতা থাকিবে।
বিধি-৩।
(১) যদি কোনো বর্গাদারের কোনো কার্য ১১ ধারার (১) উপধারার (ক) হইতে (চ) পর্যন্ত দফাসমূহের বিধানাবলীর যেই কোনোটির আচরণের মধ্যে পড়ে অথবা যদি মনিবের ব্যক্তিগত চাষের জন্য উক্ত উপধারার (ছ) দফার অধীনে বর্গাজমির আবশ্যক হয়, তাহা হইলে মনিব বর্গাচুক্তির অবসানের জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে পূর্ণ ঘটনাবলীল বর্ণনা করিয়া আবেদন করিবেন।
(২) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ (১) উপধারার অধীনে কোনো দরখাস্ত প্রাপ্তির পর কার্যব্যবস্থা প্রস্তুত করিবেন এবং কেন উক্ত বর্গাচুক্তির অবসান করা হইবেনা- এই সম্পর্কে 'ক' ফরমে নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে পনেরো দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বর্গাদারকে নির্দেশ দিবেন।
(৩) বর্গাদারের নিকট হইতে উত্তর পাওয়ার পর অথবা বর্গাদার নোটিশে উল্লিখিত তারিখের মধ্যে কারণ দর্শাইতে ব্যর্থ হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ যেইরূপ প্রয়োজনীয় মনে করিবেন, সেইরূপ তদন্তানুষ্ঠান করানোর এবং পক্ষগণকে শুনানির সুযোগদানের পর মামলার গুণাগুণের উপর লিখিতভাবে আদেশ প্রদান করিবেন।
বিধি-৪।
() মনিব উত্পন্ন ফসলের তাহার প্রাপ্য অংশ গ্রহণ করিতে বা গ্রহণের রশিদ প্রদান করিতে অস্বীকার করিয়াছেন, এইমর্মে ১২ ধারার (৪) উপধারার অধীনে কোনো অবগতি লাভের পর নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ 'খ' ফরমে একটি নোটিশ জারির মাধ্যমে নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে পনেরো দিনের মধ্যে মনিবকে বর্গাদারের নিকট হইতে উত্পন্ন ফসলের অর্পণ গ্রহণ করিতে এবং উহার জন্য রশিদ প্রদান করতে নির্দেশ দিবেন, যাহা করিতে ব্যর্থ হইলে ১২ ধারার (৬) উপধারার যেইরূপ বিধান করা হইয়াছে, সেইরূপ বর্গাদারকে উক্ত উত্পন্ন ফসল যে কোনো সরকারী ক্রয় এজেন্সীর নিকট অথবা অনুরূপ এজেন্সীর অভাবে বিক্রয় করিতে অনুমতি প্রদান করা হইবে।
(২) যখন বর্গাদার ১২ ধারার (৭) উপধারার অধীনে অংশের বিক্রয় লব্ধ অর্থ নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেন, তখন নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ তাহাকে 'গ' ফরমে একটি রশিদ প্রদান করিবেন।
(৩) (২) উপবিধির অধীনে উক্ত অর্থ প্রাপ্তির পর নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ অনুরূপ জমাকৃত অর্থ সম্পর্কে মনিবকে 'গ' ফরমে অবগত করিবেন এবং অবগতি লাভের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে উক্ত অর্থ গ্রহণ করিবার জন্য তাহাকে নির্দেশ দিবেন। যদি মনিব অবগতিপত্রে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে উক্ত অর্থ গ্রহণ করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সরকারী কোষাগারে রাজস্ব জমা খাতে উক্ত অর্থ জমা করিবেন এবং 'ঙ' ফরমে উক্ত জমা সম্পর্কে মনিবকে অবগত করিবেন।
(৪) ১৬ ধারার (১) উপধারার (ক) দফার অধীনে বিভাজন বা অর্পণের উদ্দেশ্যে কোনো জমির যথার্থ ফসল (ফসলের পরিমাণ) নিরূপণ করিবার জন্য মনিব ও বর্গাদারকে পূর্ববিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের উক্ত জমির একটি অংশে শস্য কাটার নিরীক্ষা অনুষ্ঠানের ক্ষমতা থাকিবে।
তৃতীয় অধ্যায়
ক্ষতিপূরণের হার
বিধি ৫।
৪ ধারার (৪) উপধারার অধীনে অতিরিক্ত জমির জন্য ক্ষতিপূরণের হার নিম্নরূপভাবে নিরূপিত হইবে :
(ক) যেইক্ষেত্রে সরকারের নিহিত জমির মোট পরিমাণ ৫০ মানানসই বিঘার অধিক নহে, সেইক্ষেত্রে উক্ত জমির বাজার মূল্যের শতকরা বিশ ভাগ হারে;
(খ) যেইক্ষেত্রে সরকারের নিহিত জমির মোট পরিমাণ ৫০ মানানসই বিঘার অধিক, সেইক্ষেত্রে প্রথম ৫০ মানানসই বিঘার জন্য উক্ত জমির বাজার মূল্যের শতকরা বিশ ভাগ হারে এবং অবশিষ্টাংশের জন্য উক্ত জমির বাজার মূল্যের শতকরা দশ ভাগ হারে।
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার নিহিত হইয়ার যোগ্য জমি বাছাই করিবার ইচ্ছাধিকার পরিবারের থাকিবে।
চতুর্থ অধ্যায়
বর্গাচুক্তি
বিধি ৬।
() ৮ ধারায় যেইরূপ বিধান করা হইয়াছে, মনিব ও বর্গাদারের মধ্যেকার সেইরূপ বর্গাচুক্তি 'চ' ফরমে সম্পাদিত হইবে।
(২) প্রত্যেক বর্গাচুক্তি তিন টাকা মূল্যের অ-বিচারিক স্ট্যাম্পের উপর মনিব ও বর্গাদার কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের জন্য একটি করিয়া তিন প্রস্থে সম্পাদিত হইবে। অ-বিচারিক স্ট্যাম্পের মূল্য সময় সময়ান্তরে সরকার কর্তৃক সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হইতে পারে।
(৩) বর্গাচুক্তি সম্পাদন করানোর জন্য ৯ ধারার (৩) উপধারার অধীনে কোনো দরখাস্তের সহিত দুইটাকা মূল্যের কোর্ট ফি স্ট্যাম্প এবং উক্ত ধারার (৫) উপধারা মোতাবেক যথাপ্রয়োজনমতে বর্গাচুক্তির সম্পাদনের জন্য রেজিষ্ট্রীকৃত ডাকে অপর পক্ষকে 'ছ' ফরমে নির্দেশ প্রেরণের জন্য ডাক মাসুলের ব্যবস্থাকল্পে উক্ত পক্ষের বর্তমান ঠিকানা সম্বলিত স্ট্যাম্পযুক্ত খাম দিতে হইবে।
(৪) বর্গাচুক্তি সম্পাদিত হইবার পর নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ইহাকে 'জ' ফরমে একটি রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করিবেন এবং একটি রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্রদান করিবেন।
পঞ্চম অধ্যায়
বর্গাদারের মৃত্যুর পরিণাম
বিধি ৭।
বর্গাদারের মৃত্যু ঘটিলে, তাহার পরিবারের যেই কোনো জীবিত সদস্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট এইমর্মে আবেদন করিতে পারিবেন যে, উক্ত পরিবার বর্গাচুক্তিটি অব্যাহত রাখিতে চান এবং যাহার নামে বর্গাচুক্তিটি অব্যাহত থাকিবে, সেই ব্যক্তির বিবরণ উহার নিকট প্রেরণ করিবেন। এই বিজ্ঞপ্তি 'ঝ' ফরমে তিন প্রস্থে হইবে।
(২) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ (১) উপবিধির অধীনে উক্ত দরখাস্ত পাওয়ার পর ব্যাপারটির তদন্ত করিবেন এবং যদি এইমর্মে সন্তুষ্ট হন যে, উক্ত পরিবার জমিটি চাষ করিবার মতো অবস্থায় স্থিত রহিয়াছেন, তাহা হইলে ১০ ধারার (১) উপধারার বিধানাবলী অনুসারে উক্ত চুক্তি অব্যাহত থাকিবার অনুমতি দিবেন।
(৩) যেইক্ষেত্রে কোনো জমির মনিব তাহার ব্যক্তিগত চাষের অধীনে উক্ত জমি আনয়ন করিতে অথবা ১০ ধারার অধীনে উক্ত জমি অপর বর্গাদার কর্তৃক চাষকরণ অনুমোদন করিতে চান, সেইক্ষেত্রে তিনি মাত্র দুই টাকা মূল্যের কোর্ট ফি স্ট্যাম্প এঁটে দিয়ে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট প্রার্থনা দাখিল করিবেন। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ অনুরূপ প্রার্থনা পাইবার ৩০ দিনের মধ্যে উহা যেইরূপ উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ ধরনে ব্যাপারটি স্থানীয়ভাবে তদন্ত করাইয়া নিবেন এবং যদি উহা এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, মৃত বর্গাদারের পরিবারে কোনো সদস্যই উক্ত জমি চাষ করিবার মতো অবস্থায় স্থিত নাই, তাহা হইলে উহা বর্গাচুক্তিটি বাতিল করিবেন। যদি উহা এইমর্মে সন্তুষ্ট হন যে, উক্ত পরিবার উক্ত জমি চাষ করিবার মতো অবস্থায় স্থিত রহিয়াছে, তাহা হইলে উহা মৃত বর্গাদারের উত্তরবর্তীরর নাম শেষোক্তের নিকট হইতে মাত্র পাঁচ টাকার ফি আদায় করিয়া জারি করিবেন।
ষষ্ঠ অধ্যায়
উত্পন্ন ফসল ভাগের প্রণালী
বিধি ৮।
যখন বর্গাদার উত্পন্ন ফসল কাটার পর উহার অংশ প্রদান করিয়া থাকেন এবং মনিব উহা গ্রহণ করিয়া থাকেন, তখন উভয়পক্ষ ১২ ধারার (৩) উপধারা অনুযায়ী যথাপ্রয়োজনমতে 'ট' ফরমে একটি রশিদ স্বাক্ষর করিবেন।
(২) নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ১২ ধারার (৪) উপধারার অধীনে কোনো অবগতি লাভের পর জমির উত্পন্ন ফসলের এবং বর্গাচুক্তির পক্ষগণের প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশের চূড়ান্ত নিরূপণ সাপেক্ষে বর্গাদার কর্তৃক প্রদত্ত উত্পন্ন ফসলের মনিবের অংশের অর্পণ গ্রহণের জন্য 'খ' ফরমে মনিবকে একটি নোটিশ প্রদান করিবেন।
(৩) যদি বর্গাদার ১২ ধারার (৭) উপধারা মোতাবেক যথানির্দেশমতে মনিবের উত্পন্ন ফসলের অংশের বিক্রয়ের তারিখ হইতে সাতদিনের মধ্যে বিক্রয়লব্ধ অর্থ নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট জমা করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ মনিবকে দেয় উত্পন্ন ফসলাংশের বাজার মূল্য নিরূপণ করিবেন এবং বর্গাদার অনুরূপভাবে নিরূপিত অংকের অর্থ জমাদানের জন্য দায়ী হইবেন।
(৪) যখন কোনো বর্গাদার ১২ ধারা (৭) উপধারার অধীনে বিক্রয়লব্ধ অর্থ জমা দেন, তখন নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত ধারার (৯) উপধারার অধীনে 'ঘ' ফরমে মনিবের নিকট অবগতিপত্র প্রেরণ করিবেন এবং অবগতিপত্র লাভের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে অনুরূপভাবে জমাকৃত অর্থ গ্রহণ করিবার জন্য তাহাকে নির্দেশ দিবেন। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ ডাক ও অন্যান্য মাসুলের ব্যবস্থাকল্পে মনিবকে দেয় মোট পরিমাণ হইতে মাত্র দশটাকা পরিমাণ কাটিয়া রাখিয়া এবং উক্ত পরিমাণ কাটিয়া রাখিয়া এবং উক্ত পরিমাণ চালান মারফত বিবিধ প্রাপ্তি হিসাবে সরকারী কোষাগারে জমা দিবেন।