Daffodil International University

Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Md. Sazzadur Ahamed on July 02, 2018, 01:55:56 PM

Title: কানাগলির ফেসবুক
Post by: Md. Sazzadur Ahamed on July 02, 2018, 01:55:56 PM
ফেসবুক দিনের শেষে প্রমাণ করেছে, এই বাজারি দুনিয়ায় মুফতে কিছু পাওয়া যায় না। অন্তত অভিমন্যু (ছদ্মনাম) আর পেত্যয় যাচ্ছে না জাকারবার্গের এই আশ্চর্য প্রদীপে। দুবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস পড়েছিল, নতুন মোটরসাইকেল কিনতে চায় অর্বাচীন, আরেকবার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছেটা বলেছিল। এরপর থেকেই নতুন নতুন মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে অভির ফেসবুক দেয়াল। কিছুদিন পরপর বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকার আর্টিকেল আসছে, কীভাবে চাকরি ছাড়তে হয়।

মুফতে ফেসবুকে থাকতে পারা গেলেও ওই বস্তুকে অনলাইনে থাকার জন্য নগদ নারায়ণ খরচ হয় বৈকি। সেই খরচ মেটাতেই ফেসবুককে ধরনা দিতে হয় বাজারে। এই মুহূর্তে আমাদের গোপনীয়তাই সবচেয়ে বড় পণ্য। গোপনীয়তা বলতে আমাদের একান্ত পছন্দ-নাপছন্দ। ওটা বাজারে গেলে আমার-আপনার মনের মতো পণ্য বিকোতে ম্যালা কষ্ট হবে না বেনিয়াদের।

শুধু কি বাজার? আমাদের পছন্দ-নাপছন্দ, নাখোশি—সব নিয়ে খোদ গণতন্ত্রের বাজারদর নিয়ে মন-কষাকষি, নাক-ঘষাঘষি চলছে এখন অনলাইনে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কেচ্ছা মনে আছে সবার নিশ্চয়ই। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাপের বরাত দিয়ে আমেরিকার জনগণের ভোটের দিশা-বিদিশার ঠিকুজি-কুলুজির সন্ধান করে ফেলেছিল অ্যানালিটিকা।

সেই কেচ্ছা-কাহিনিতে হিলারিকে হটিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহেব। কমপক্ষে চার বছরের জন্য তো বটেই; হাওয়া যেভাবে বইছে, আরও চার বছরের জন্য ওভাল অফিসে গ্যাঁট হয়ে বসলেও অবাক হব না। ভেবে দেখুন, এসবই হয়েছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ফেসবুক কারিকুরির লেজ ধরে।

আমাদের সব তথ্য, চিন্তা, ভয়—সবকিছুকে পুঁজি করে একেবারে গণতন্ত্র বাজারে বিকোচ্ছে। মানে আপনার ট্যাঁকের ম্যালা জোর থাকলে খোদ আমেরিকার নির্বাচনেও বাজিমাত করে দিতে পারবেন। ব্যক্তিগত তথ্যের এমনই মুরোদ। ওটা খসাতে পারলেই একেবারে কাম ফতে।

এসব খবরে একেবারেই নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকান সিনেট; লোকজনের মনেও কেমন যেন অবিশ্বাসের বীজ দানা গাড়ছে। ফেসবুকের কর্ণধারের কানে ধরে, স্যুট পরিয়ে স্পেশাল সিনেট হিয়ারিংয়ে টেনে বসিয়েছে আমেরিকান সরকার। তবে ফেসবুক এখন আর বিশ্বাসের জায়গায় নেই। নতুন কিছুর খোঁজে জেরবার দুনিয়ার লোকে।

ইসরায়েলি ডেটা মাইনার লিরাম সরানির চিন্তাভাবনা অন্যদিকেই চলছে। ফেসবুকের ঝাঁ-চকচকে মহাসড়ক বদলে একটু অন্ধকার গলিতে হাঁটার সলা দিচ্ছেন তিনি সবাইকে। যদিও আঁধারে হাঁটার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।

গুগল বা যথারীতি অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে ইন্টারনেট ব্যবহার না করে টর বা ভিপিএন ব্রাউজারের কথা বলছেন লিরাম সরানি। ইন্টারনেট মহাসড়ক যদি একটি শহরের সঙ্গে তুলনা করি, ডার্ক ওয়েব শহরের কানাগলির মতোই; সব চোর-ছ্যাঁচড়ের আখড়া ওখানে। গোপনীয়তা পাওয়া হয়তো যায়, সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার জগতের উপকরণগুলোও পেছন পেছন চলে আসে।

ডার্ক ওয়েবে হ্যাকার, পর্নোগ্রাফার, বিপ্লবী—সবার আনাগোনা, নাম ভাঁড়িয়ে ওখানে থাকা যায় বলেই বেসামাল বেখাপ্পা লোকের হট্টগোল হওয়ারই কথা। নাম ভাঁড়াতে পারায় নিজের তথ্য গোপন রাখার চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আর কদলী প্রজাতন্ত্রের দেশে কদলীরাজের সমালোচনাও গোপনে করে তির্যক বাক্য নিক্ষেপের সুখ পাওয়া যায়। এই কানাগলির ফেসবুকের বুকে থেকে তথ্য খুঁড়ে টাকায় বিকিয়ে দেবেন না কেউ। আমাদের গোপন পছন্দ-অপছন্দ বিকিয়ে নতুন কোনো প্রেসিডেন্ট ঘাড়ে চেপে বসবে না। কদলীরাজের ক্রোধের ভারও তুলতে হবে না।

লিরাম সরানি ভাবছেন অন্য কথা। তাঁর মতে, ফেসবুকের ব্যবহারকারী সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। কানাগলিতে হাঁটার ঝুঁকি নিতে যে চিন্তাভাবনার দরকার, সেটা ভাবার মতো যথেষ্ট বয়স আমাদের হয়েছে। কানাগলিতে হেঁটে বিপদে পড়লে তার দায়ভারও যেমন আমাদের, একইভাবে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকলেও সেটার ফল আমরাই পাব।

ডার্ক ওয়েব, ব্লকচেইন—এই দুইয়ের মিলে হতে পারে এক নতুন গোপন ফেসবুকের সূচনা। কে বানিয়েছে এই ব্লকচেইন? আদতে এর ছদ্মনামী স্রষ্টাকেই সবাই চেনে, সাতোশি নাকামোতো। এই প্রযুক্তিতে ডিজিটাল তথ্য আদান-প্রদান হবে বটে, তবে কপি হওয়ার সুযোগ নেই। এই প্রযুক্তির কাঁধেই ভর করে তৈরি হয়েছে বিটকয়েনের মতো ঘটনা।

ডার্ক ওয়েব, ব্লকচেইন মিলে যে নতুন দুনিয়ার স্বপ্ন দেখছেন লিরাম সরানি, সেই অন্তর্জালকের পৃথিবী হবে গণমানুষের। অন্তর্জালকের নিয়ন্ত্রণ আবার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে চান লিরাম সরানি। তাঁর মতে, এই ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া একটি রাষ্ট্রের মতো, যেখানে নিয়মগুলো তৈরি হয় রাষ্ট্রের নাগরিকের মিথস্ক্রিয়ায়।

লিরাম সরানির স্বপ্নে দেখা কানাগলির ফেসবুক একটা বিপ্লব হতে পারে। আর সব বিপ্লবের জন্মই হয় ঘিঞ্জি, ময়লা, সস্তা কোনো রাস্তায়। ফরাসি বিপ্লবের শুরু হয়েছিল পারির কোনো এক নোংরা প্রমোদালয়ে। ডার্ক ওয়েবের এই ফেসবুকের ব্যাপারখানাও তেমন। শুরুর দিকে আছে বিষয়টা, রাস্তাটা ময়লা, আশপাশে বেখাপ্পা চরিত্রের হট্টগোল। তবে এই হট্টগোল থেকেই হয়তো আবার নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে পাওয়ার আনন্দ শুরু হবে। সরানি তেমনটাই ভাবছেন।
Title: Re: কানাগলির ফেসবুক
Post by: Nusrat Jahan Bristy on July 03, 2018, 09:47:08 AM
 :)
Title: Re: কানাগলির ফেসবুক
Post by: tokiyeasir on July 03, 2018, 09:48:55 AM
 ;)
Title: Re: কানাগলির ফেসবুক
Post by: sheikhabujar on July 03, 2018, 07:22:53 PM
Good Sharing