Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Faculty Forum => Topic started by: khadija kochi on July 20, 2018, 11:29:03 AM
-
বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানের জীবনে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
তাজিন আহমেদ, অধ্যক্ষ, সানিডেইল স্কুল, ঢাকা।
স্কুলে শিক্ষার্থীকে একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় সে কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কি না। আমাদের স্কুলে কাউন্সেলর আছেন, ফলে কোনো ছাত্রছাত্রীর মনঃকষ্টের মধ্য দিয়ে গেলে আলাদা করে ওদের সঙ্গে কথা বলা হয়। আমি নিজেও বলি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওরা কোনো কথা বলতে চায় না। কিন্তু আচরণ বা পরীক্ষার ফল হঠাৎ খারাপ হওয়া দেখলে বোঝা যায়, বাচ্চাটার কোনো সমস্যা হচ্ছে। মা-বাবার বনিবনা না হওয়া বা বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানের জীবনে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সন্তানের সামনে আপনারা যে ধরনের আচরণ করবেন, সন্তান আপনার অজান্তে তা শিখে ফেলবে। পরে আপনি যখন তাকে ভালো কিছু শেখাতে যাবেন, সে শিখবে না।
বিবাহবিচ্ছেদ হলে বাচ্চা রাখা নিয়ে অনেক সময় মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সন্তান যাঁর কাছেই থাকুক, আমরা মা-বাবা দুজনকে ডেকে কথা বলি। তাঁরা যেন সন্তানের সামনে এমন কোনো কথা না বলেন, যাতে সন্তান নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সন্তান জন্মদানের আগে মা-বাবার পূর্বাপর পরিস্থিতি বুঝে সন্তান নিতে হবে। সন্তানকে এত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলার আগে তাঁদের ভাবনাচিন্তার দরকার।
সন্তানের চাওয়া মা-বাবাকে গুরুত্ব দিতে হবে
মাহবুবা নাসরীন, সমাজবিজ্ঞানী
সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ যে হারে বাড়ছে, সেভাবে মানসিকতার পরিবর্তন আসেনি আমাদের। আমরা মানসিকভাবে সমাজের পরিবর্তন নিতে প্রস্তুত হইনি। যে কারণে মা-বাবার সম্পর্কে কোনো সমস্যা হলে সেই পরিবারের সন্তানকে কিংবা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানকে কেউ কেউ হেয় করে কথা বলে। এই দোষ সন্তানের নয়। অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবা একটু সহনশীল হলে বা সন্তানের প্রয়োজনে ছাড় দিতে হলে সন্তানের মনের কষ্ট কিছুটা কমানো যায়।
সন্তানের চাওয়া মা-বাবাকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেদের মতামত সন্তানের ওপর চাপানো যাবে না। পারিবারিক সমঝোতা, পরিবারের গুরুত্ব—এগুলো সন্তানকে শেখানোর আগে মা-বাবাকে বিষয়গুলোর গুরুত্ব বুঝতে হবে। মা-বাবা ছাড়াও চারপাশের অন্যান্য মানুষ, কাছের মানুষ ও আত্মীয়দের সহনশীল হতে হবে। তাঁরা বুঝে না বুঝে মনে আঘাত দিয়ে কথা বলেন। এমন কোনো আচরণ করেন, যা সন্তানের মন ছোট করে দেয়। মা-বাবা কারও নামেই কোনো সমালোচনা সন্তানের সামনে করা উচিত নয়।
এই সন্তানদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়
হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হলে বা একই সঙ্গে থেকেও বনিবনা না হলে তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। মা-বাবা যদি সন্তানের সামনে ঝগড়া করেন বা পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকেন, তাহলে সন্তানের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সব সময় অতি উৎকণ্ঠায় থাকে সেসব সন্তান। সন্তান যখন বড় হয়, তার ব্যক্তিজীবনেও এই প্রভাব পড়ে। তখন পরিবার গঠন করার সময় মা-বাবার আচরণের প্রতিফলন ঘটাতে পারে। যারা নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বড় হয়, দেখা যায়, তাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা কম থাকে।
সন্তান জন্মদানের পর দায়িত্ববান হতে হবে। মা-বাবার আচরণ সংবেদনশীল না হলে সন্তানও অসংবেদনশীল আচরণ করবে। সেটা মাথায় রেখে দাম্পত্য জীবনে আচরণ-কথাবার্তায় সচেতন হতে হবে।
সন্তানের সামনে পরস্পরকে ছোট করা উচিত নয়
তানজীব উল আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সন্তানই মূলত ভিকটিম হয়ে থাকে। বিবাহবিচ্ছেদে দেখি মা-বাবা পরস্পর পরস্পরকে অনেক ছোট করে অসম্মানজনক কথা বলেন। সেটি সন্তানের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখি সন্তানের হেফাজত পাওয়ার জন্য মা-বাবা মিথ্যা কথার আশ্রয় নেন। সন্তানকেও সেগুলো শেখাতে থাকেন। যা খুবই অনুচিত। সন্তান যাঁর কাছে থাকলে ভালো থাকবে, আদালত সেই সিদ্ধান্তই নেন। যাঁর হেফাজতেই সন্তান থাকুক না কেন, সন্তানকে এটা বোঝাতে হবে মা-বাবা দুজনেই তার সঙ্গে আছে। মা-বাবা সব সন্তানের কাছে আদর্শ। পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যাতে সন্তান মা বা বাবা কাউকে ভুল বোঝে।
একসঙ্গে থাকতে না পারলে সন্তানকে বলতে হবে, ‘স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমাদের আদর্শগত মিল হয়নি। তাই থাকিনি। কিন্তু তোমার পাশে থাকব।’ সন্তান যার কাছেই থাকুক, তাকে মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়াটা জরুরি। এটাও ঠিক, একজনের কাছ থেকে সঠিক শিক্ষা পেয়েও সন্তান মানুষ হতে পারে। সন্তানের সঙ্গে দেখা করা নিয়েও কোনো সমস্যা করা ঠিক নয়। সন্তান যখন যাঁর সঙ্গে থাকতে চাইবে, দেখা করতে চাইবে, সেটি তাঁকে করতে দিতে হবে। মা বা বাবা যদি সন্তানকে দেখতে চান, সেটিও প্রাধান্য দিতে হবে।
মা-বাবাকে একসঙ্গে দেখতে চাই
মহিউদ্দিন ফারুক
ঢাকার কাছাকাছি একটি শহরে থাকে ছেলেটি। সবে কলেজে উঠেছে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি—কমবেশি সবই করে ছেলেটি। কিন্তু সব সময় তার মুখে বিষাদের একটা ছায়া দেখা যায়। ছেলেটি বাবার সঙ্গে থাকে ছোট এক বাড়িতে। বাবা আর ছেলে মিলেই খাওয়াদাওয়া আর ঘর-গেরস্থালির কাজ সামলায়।
ছেলেটির মা যেমন আছেন, তেমনি আছে ভাইও। বছর কয়েক আগে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে। দুই ছেলের একজন মায়ের সঙ্গে, একজন বাবার সঙ্গে। পিঠাপিঠি দুই ভাই ছিল বন্ধুর মতো। এখন দুই ভাইয়ের দেখা হয় কালেভদ্রে। মায়ের সঙ্গে এক ছেলে, বাবার সঙ্গে এক ছেলে—দুই জায়গায় দুইভাবে হয়তো জীবন চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ওই যে বিষাদ, তা এই চারজনের মধ্যেই দেখা যায়।
কারণ যা-ই হোক ভেঙে যাওয়া পরিবার বা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা ভালো থাকে না। মা-বাবার বিচ্ছেদের সবচেয়ে ভুক্তভোগী তারাই।
ছেলেমেয়েরা চায় মা-বাবার সঙ্গে একসঙ্গে একটা স্বাভাবিক, সুখী পরিবার হয়ে থাকতে। বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা নতুন নয়, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অযৌক্তিকও হয়তো নয়। কিন্তু সন্তান থাকলে তার বা তাদের ওপর এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাও অস্বীকার করার মতো না। আবার সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকেও তো বিচ্ছেদর বিষয়টি দেখা দরকার।
সম্প্রতি আদালতের একটা ঘটনা উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। মা ও বাবার সঙ্গে একত্রে থাকার জন্য দুই ছেলের যে আকুতি, তা স্পর্শ করেছে অনেককে। ২৫ জুনের ঘটনা এটা।
রাজশাহীর কামরুন্নাহার মল্লিকা ও মাগুরার মেহেদী হাসানের বিয়ে হয়েছিল ২০০২ সালের ডিসেম্বরে। দুজনই উচ্চশিক্ষিত ও পেশাজীবী। দাম্পত্যজীবনে মনোমালিন্যের কারণে গত বছরের ১২ মে স্বামী ডিভোর্স লেটার পাঠান স্ত্রীকে। এর এক সপ্তাহ আগে দুই সন্তানকে মাগুরায় নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন বাবা। এরপর আর দুই ছেলের দেখা পাননি মা।
দুই ছেলের হেফাজত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মা। শুনানি নিয়ে গত ২৯ মে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শিশুদের কেন মায়ের হেফাজতে দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি দুই শিশুকে ২৫ জুন আদালতে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও শিশুদের বাবাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেদিনের আদালতকক্ষের ঘটনা ছুঁয়ে যায় কমবেশি সবাইকে। দুই ভাইয়ের বড় জনের বয়স ১২ আর ছোট জনের ৯ বছর। ১৩ মাস পর আদালতকক্ষে দুই ভাইয়ের দেখা হয় তাদের মায়ের সঙ্গে। মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে দুই ভাইয়ের সে কী কান্না। বড় ভাই বলে, ‘আমরা আর কিছু চাই না, শুধু মা-বাবাকে একত্র দেখতে চাই।’
এ দৃশ্য বিচারক, আইনজীবীসহ আদালতকক্ষে থাকা সবার চোখই ভিজিয়ে দেয়। এই শুনানি হচ্ছিল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে। একপর্যায়ে বড় ছেলে মাকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে ডাকে। সে বলে, ‘বাবা, তুমি মাকে সরি বলো।’ মাকে বলে, ‘তুমিও বাবাকে সরি বলো। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই।’
আদালত দুই শিশুর কথাও শোনেন। তারা মা-বাবাকে একত্র দেখতে চায়। আদালত বলেন, ‘তোমরা জোরে বলো, তোমরা একসঙ্গে থাকতে চাও।’ বাবা ও মাকে আদালত বলেন, ‘এ দৃশ্য দেখেও কি আপনাদের মন গলে না? আপনারা কি সন্তানের জন্য নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবেন না? সামনে তাকিয়ে দেখেন, আপনাদের এ দৃশ্য দেখে সবার চোখে পানি চলে এসেছে।’
দুই পক্ষের আইনজীবীসহ উপস্থিত আইনজীবীরা দাঁড়িয়ে সমস্বরে সন্তানদের সর্বোচ্চ কল্যাণ বিবেচনা করে বিভেদ ভুলে মা-বাবাকে একত্র হয়ে থাকার চিন্তা করতে অনুরোধ জানান। আদালত খাসকামরায় দুই শিশু, তাদের মা-বাবা, নানি ও ফুফুর বক্তব্যও শোনেন। পরে তিনি আদেশ দেন, শিশু দুজন ৪ জুলাই পর্যন্ত তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। তবে তাদের বাবা যেকোনো সময় শিশু দুজনের দেখাশোনা করার সুযোগ পাবেন। ৪ জুলাই আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়। দুই শিশুকেও আনতে বলা হয়।
৪ জুলাই। সকালে মায়ের হাত ধরেই আদালতে আসে দুই ছেলে। সেদিনও আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে। পারিবারিক এ বিষয়ের প্রসঙ্গ টেনে একপর্যায়ে আদালত বলেন, এই ঘটনা গণমাধ্যমে কীভাবে এসেছে দেখেছেন? জনমত এটি কীভাবে দেখেছে? এটি একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালত আগামী ১ আগস্ট আদেশের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
আইন-আদালতে যা-ই হোক না কেন, মা-বাবার পক্ষে-বিপক্ষে যত যুক্তিই থাকুক না কেন, ‘মা-বাবাকে একত্রে দেখতে চাই’—দুই শিশুর এই আকুতি ছুঁয়ে গেছে আমাদের সবাইকে, এই সমাজকে।
-
Its True...
-
very true..
-
:)
-
:)
-
:)
-
:)
-
:)
-
:)
-
:)
-
:D
-
:D
-
:)
-
:) :) :)
-
:)
-
Thanks....
-
:)
-
thanks
-
:) :)
-
Thanks