Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: syful_islam on August 29, 2018, 12:19:01 PM
-
রবিউল হক রুদ্র (১৬), সিরাজগঞ্জ
Published: 2018-08-28 13:42:43.0 BdST Updated: 2018-08-28 14:36:52.0 BdST
জীবনযাপন, পরিচ্ছন্নতাবোধ, কর্মস্পৃহা, আত্মসম্মানবোধ শব্দগুলি কঠিন। মান্য করা আরও কঠিন হয়ত। কিন্তু এবার জাপানে বিশ্বকাপ খেলার প্রতিটা ম্যাচ শেষ হবার পর তাদের গ্যালারির সমস্ত ময়লা নিজ হাতে পরিষ্কার করে তারপর মাঠ ত্যাগ করা দেখে আর কাজগুলি খুব কঠিন মনে হচ্ছে না।
হারুক কিংবা জিতুক, খেলা শেষে সমস্ত ময়লা নিজ হাতে পরিষ্কার করে তারপরেই গ্যালারি থেকে বেরিয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে ব্যাপারটা দেখে আমি প্রথমে রীতিমত বিস্মিত হয়েছিলাম। কেনই বা হব না? আমাদের দেশে তো আর এমন সুন্দর চর্চা নেই। কিন্তু সে চর্চা আমরা শুরু করতেই পারি। এতে সম্মান বাড়বে বই কমবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমানবিক বোমা ফেলা হয়েছিলো জাপানে। এতে দেশটি প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এমনকি সেই পারমানবিক বোমার প্রভাব এখন পর্যন্ত জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিদ্যমান রয়েছে। সেখান থেকে এখনও তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকরিত হয়। যার প্রভাবে সেখানে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। এমনকি জাপানের মাটিও উর্বর নয়। ভূমির ৭০ শতাংশই পাহাড়ি। আর প্রচুর পরিমানে আগ্নেয়গিরি তো আছেই।
জাপানে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ বার ভূমিকম্প হয়। সাথে আছে সুনামির ভয়ও। খনিজ সম্পদ বলতেও তেমন কিছুই নেই। কিন্তু এতো কিছুর পরও দেশটি অর্থনীতিতে পৃথিবীর প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে একটি। ব্যাপারটি কি বিস্মকর নয়?
অন্যদিকে আমাদের নদীমাতৃক দেশের প্রায় বেশিরভাগ ভূমিই উর্বর। সোনা ফলে আমাদের দেশে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদও রয়েছে যথেষ্ট। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লার মতো খনিজ সম্পদও রয়েছে। অথচ এতো কিছু থাকার পরও আমাদের দেশ এখনও উন্নত দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াতে পারেনি।
অনেকেই জাপানের উন্নতির পেছনে তাদের আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে বলবেন। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তিই একটি দেশের অগ্রগতির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে না। আমি এটা বলব না যে উন্নত প্রযুক্তির কোনো ভূমিকা নেই একটি দেশের অগ্রগতির পেছনে, কিন্তু একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অগ্রগতিতে মূল ভূমিকা পালন করে সে দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশ গড়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার প্রবণতা। যা সে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবন ধারায় প্রতিফলিত হয়।
প্রথমেই কথা বলা যাক শিক্ষা নিয়ে। আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ি একজন চার থেকে ছয় বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর তাকে বেশকটি পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উঠতে হয়। এমনকি দশ বছর বয়সে তাকে পিএসসি পরীক্ষার মতো বড় একটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
অথচ জাপানের শিক্ষার্থীদের দশ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাই হয় না। এর কারণ হলো জাপানিরা মনে করে লেখা পড়ার মূল উদ্দেশ্য নৈতিক চরিত্র গঠন, পরীক্ষা নেওয়া নয়। তারা শিশুদের দশ বছর বয়স পর্যন্ত শুধু নৈতিক চরিত্র গঠনের শিক্ষাই দেয়।
পেশা নির্বাচনের বিষয়ে বলতে গেলে আমরা জানি, আমাদের দেশে অনেক যুবক বেকার বসে আছেন। এর মূল কারণ আমরা সবাই সরকারি চাকরি কিংবা বেশি বেতনের চাকরির পেছনে ছুটি। প্রায় কেউই নিজের উদ্যোগ্যে কিছু করার কথা ভাবি না। অনেক কাজকেই আমরা নিচু নজরে দেখি। কিন্তু জাপানিরা এটা করে না। ওরা সব কাজকেই সম্মানের চোখে দেখে। জাপানে যারা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে তাদেরকেও সম্মানের চোখে দেখা হয়। তাদেরকে হেলথ ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়। আর তাদের প্রতি মাসের বেতন সাত থেকে আট হাজার ডলার।
জাপানের মানুষেরা অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল হয়েও ঘরে কোনো কাজের লোক রাখেন না। তারা নিজের কাজ নিজেই করেন। এদের অগ্রগতির মূলে যে বিষয়টি কাজ করেছে সেটি হলো তাদের কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা। তাদের গড় আয়ুও পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৮৩ বছর।
এমনকি জাপানে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা বলে কোনো শব্দ প্রচলিত নেই। সেখানে কর্মরত চাকরিজীবীরা প্রতিদিন এমনিতেই গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা অতিরিক্ত কাজ করেন।
জাপানে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় অতিরিক্ত কাজের চাপ নেওয়ার জন্য। ডায়াগনোসিসে এসমস্ত মানুষদের মৃত্যুর কারন লেখা হয় ‘কারোশি’। অর্থাৎ, ‘অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু’।
তাই শুধু মাত্র জাপানেই কর্মক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়লে সেটা দোষ হিসেবে দেখা হয় না। এবং কর্মক্ষেত্রে ঘুমিয়ে বিশ্রাম নেবার সম্পূর্ণ অনুমতি রয়েছে। এ নিয়ম চালু করার পেছনে কারণ একটাই, যাতে কাজের চাপে মৃত্যুহার কমানো যায়।
জাপানিদের সময়ের মূল্য দেয়ার ব্যাপারে বিশেষ সুখ্যাতি আছে। তাদের পাবলিক ট্রেইনগুলো বছরে গড়ে দুই সেকেন্ড বিলম্বে আসে। এবং ১৮ সেকেন্ডের বেশি বিলম্ব করে ট্রেইন আসার কোনো নজির আজ পর্যন্ত নেই।
জাপানিরা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জাতি। তাদের রাস্তাঘাটে যেমন কোনো ময়লা নেই, তেমনি ময়লা ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিনও নেই। তারা ময়লাগুলোকে রিসাইকেল করে। আর যেসব ময়লা রিসাইকেলের অনুপযুক্ত সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।
ওখানে শিশুদের স্কুল জীবন থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেওয়া হয়। এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ক্লাসের আগে পনেরো মিনিট ধরে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করার কাজ করেন। তারা রাস্তায় সিগারেটের ছাই পর্যন্ত ফেলেন না। যারা ধূমপান করে্ন তারা সাথে সব সময় ছাইদানি নিয়ে চলাফেরা করেন। এবং সিগারেটের ছাই তাতেই ফেলেন।
জাপানে দুই লক্ষ মানুষের মধ্যে একজন মাত্র মানুষ খুন হয়। আর আমাদের দেশের যে কোনো পত্রিকার অর্ধেকটা অংশ ভরে থাকে খুন, মৃত্যু, দুর্ঘটনার খবরে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলন হলো। জাপানে সড়ক দুর্ঘটনায় কারো প্রাণ হারালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সেই দেশের আদালত। অথচ আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় কারো প্রাণ গেলে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাবাস।
জাপানের প্রায় সব মানুষের আত্নসম্মানবোধ খুব বেশি। জাপানে কোনো মন্ত্রী নির্বাচিত হবার পর প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হলে তিনি নিজে থেকে পদত্যাগ করেন।
তবে তাদের ভালোর মধ্যে মন্দেরও মিশেল আছে, যেমন থাকে। সেখানে এখন একা থাকার প্রবণতা বাড়ছে। তরুণরা বিয়ে বিমুখ হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম মাফিয়া গ্যাং জাপানেই। তারা আত্মহত্যাপ্রবণ। তবে আমরা মন্দটা না নিয়ে ভালোগুলি অনুসরণ করতেই পারি।
সত্যি কথা বলতে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে জাপানের কাছ থেকে। জাপান যদি এতো দুর্যোগ মোকাবেলা করেও সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে। অর্থনীতিতে প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে একটি হতে পারে, তাহলে আমরাও পারব নিশ্চয়।
শুধু প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির একটু পরিবর্তন।
Inspiring and motivational
-
Right...........
-
Exactly...
-
:)
-
Thanks for sharing