Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: syful_islam on September 06, 2018, 09:44:54 AM
-
মিন্টু হোসেন ও এম জসীম উদ্দীন, বরিশাল
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২৩
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২৬
সুস্বাদু বঁইচি ফল।সুস্বাদু বঁইচি ফল।বাজারে এখন রক্ত-বেগুনি রঙের আঙুরের মতো একধরনের ফল দেখতে পাবেন। শহুরে জীবনে অপরিচিত হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটাবহরী বা বঁইচি।
জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত-বেগুনি রং ধারণ করে। গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। গ্রামেগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত। বঁইচিগাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
দক্ষিণাঞ্চলের বন-বাদাড়ে একসময় বঁইচিগাছ সহজলভ্য থাকলেও কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক বন উজাড়, প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে এই গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। বঁইচি একসময় এ অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের কাছে প্রিয় ফল থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে এর বাজারজাত শুরু হয়নি। প্রচুর পুষ্টি ও ঔষধিগুণসমৃদ্ধ এই ফলগাছ রক্ষায়ও তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর এই গাছ রক্ষা ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি। উদ্ভিদটি স্থানীয়ভাবে বৈকি নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা গভর্নর প্লাম নামে (governor's plum) বৃক্ষটির নামকরণ করেন।
বঁইচি নিয়ে দেশে ব্যাপক-বিস্তৃত কোনো গবেষণা না হলেও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব রব্বানী পাঁচ বছর ধরে এই বৃক্ষ ও ফল নিয়ে নানাভাবে গবেষণা চালাচ্ছেন।
ড. রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, বঁইচি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। এতে উচ্চ মানের ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া রোগবালাই দ্বারা এ ফল খুব কম আক্রান্ত হয়।
উদ্ভিদটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে বঁইচি নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর গবেষণা করা এ অধ্যাপক বলেন, স্ত্রী বঁইচিগাছ সায়ন হিসেবে ব্যবহার করে বংশবৃদ্ধি করা যায়। এ ছাড়া বীজ থেকেও নতুন গাছ জন্ম নেয়। বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য গবেষণাগারে প্রায় ২০০ চারা গাছা উৎপাদন করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। উদ্ভিদটির ডিএনএ পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য শনাক্তের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই গবেষক।
বঁইচির আরও কিছু গুণাগুণ রয়েছে। জেনে নিন বঁইচির গুণগুলো:
আর্থরাইটিস প্রতিরোধ করে
এতে প্রচুর ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, খনিজ ও জিংক আছে, যা আর্থরাইটিস প্রতিরোধে কাজ করে।
রক্তাল্পতা দূর করে
বঁইচির মতো ফল নিয়মিত খেলে এতে থাকা আয়রন রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। নারীদের জন্য এ ফল খাওয়া ভালো।
সর্দি-কাশির উপকার
সর্দি-কাশি সারাতে দারুণ উপকার করে বঁইচি ফল। এতে প্রচুর ভিটামিন এ, সি ও রিবোফ্লোবিন রয়েছে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে
ডায়রিয়া প্রতিরোধ দারুণ কাজ করে এটি। ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর খনিজ বের হয়ে যায়, যা শরীরকে দুর্বল করে। শরীরে খনিজের ঘাটতি কাটাতে সাহায্য করে এটি।
হাড়ের সমস্যা দূর করে
হাড় ভালো ও মজবুত রাখতে বঁইচি ফল খেতে পারেন। এতে থাকা খনিজ উপাদান হাড় মজবুত করে এ হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
এতে প্রচুর থায়ামিন ও ভিটামিন এ আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে শাঁস শরীরের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
Published in the online version of The Prothom Alo on 6th September