Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: Md.Towhiduzzaman on November 25, 2018, 03:07:52 PM
-
একটা সময় ছিল যখন মৌলিক গবেষণায় নেতৃত্ব দিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গবেষণায় অবদানের জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। সেই ঐতিহ্য ভুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন কার্যত ডিগ্রি উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে গবেষণাকে এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বোঝা ভাবতে শুরু করেছে। অথচ উন্নত বিশ্বে গবেষণা আনন্দের বিষয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা গবেষণার সুযোগ পেলে উৎসাহিত বোধ করেন।
বাংলাদেশে একাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রে এই হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো, তা–ও একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, এর জন্য গবেষণায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার অভাব দায়ী। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে ‘লার্ন রিসার্চ উইথ ফান’ (আনন্দের সঙ্গে গবেষণা শেখা) শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবারও তার প্রতিধ্বনি শোনা গেল। সেখানে আলোচকেরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, সরকার বই কেনার জন্যই পর্যাপ্ত টাকা দেয় না, গবেষণায় পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। এখনো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লোকে শ্রদ্ধার আতিশয্যে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলে থাকে, সেই বিদ্যাপীঠের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারের এমন দৃষ্টিভঙ্গি হতাশাব্যঞ্জক।
ঐতিহাসিকভাবে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের প্রতিষ্ঠানের ওপর গবেষণা করা ও গবেষণা শেখানোর দায়িত্ব বর্তায়। গবেষণা না করলে অতিসাম্প্রতিক কালে জ্ঞানের জগতে কী পরিবর্তন হলো, তা জানা সম্ভব নয়। সন্দেহ নেই, ভালো গবেষণার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। গবেষণাকে শিক্ষার্থীরা ‘বোঝা’ মনে করলে বুঝতে হবে গবেষণার উদ্দেশ্যের মধ্যেই গলদ আছে। নিতান্ত দায়সারা কায়দায় সনদ লাভের লক্ষ্যে গবেষণা হলে তা দিয়ে ভালো কিছু আশা করার সুযোগ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৩তম বার্ষিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিক্ষা খাতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা করুণতর।
অস্বীকার করার উপায় নেই, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সরকারের ব্যয় করার মানসিকতা ভালো নয়। এই খাতে মোট জাতীয় আয়ের দশমিক ১ শতাংশও বরাদ্দ থাকে না। বিশ্বের মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণাকে প্রাধান্য দিলেও আমাদের দেশে গবেষণা খাত সবচেয়ে অবহেলিত। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিনে দিনে অজ্ঞানতার ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনা গুরুত্ব না পাওয়ার কারণে শিক্ষকেরা গবেষণায় উৎসাহিত হচ্ছেন না। একজন শিক্ষক যদি মানসম্মত গবেষণা ও প্রকাশনা ছাড়াই নামমাত্র প্রকাশনা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধ্যাপক হয়ে যান, তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই গবেষণা কার্যক্রমে মনোযোগী হবেন না। তাই একদিকে গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি যেমন জরুরি, তেমনি এমন এক গবেষণাবান্ধব উচ্চশিক্ষা কাঠামো ও পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষকেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গবেষণায় মনোযোগী হতে পারেন।
-
ধন্যবাদ, উপকারি বিষয়-বস্তু