Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Islam & Science => Topic started by: rumman on February 04, 2019, 02:30:59 PM
-
আরবি ‘হিজাব’ শব্দের অনুবাদে ফার্সি পর্দা শব্দটিই বাংলায় প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। ইসলামের ‘পর্দা বিধান’ অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। তারা পর্দাকে অবরোধ বোঝেন। মনে করেন মুসলিম মহিলা নিজেকে ঘরে আটকে রাখবে, প্রয়োজনেও বাইরে বেরুতে পারবে না। পরিবার ও সমাজের কাজকর্মে অংশ নিতে পারবে না।
আবার অনেকে এটাকে ‘প্রথা’ হিসেবে ভেবে- ‘পর্দাপ্রথা’ একটি শব্দবন্ধ তৈরি করে নিয়েছেন। তারা মনে করেন যে, পর্দা নিজের কাছে বা নিজের মনে—পর্দার বিশেষ কোনো বিধান বা পোশাক নেই। আলেমদের পর্দাবিষয়ক নির্দেশনাকে তারা ধর্মান্ধতা ও বাড়াবাড়ি মনে করেন। যা নিতান্তই অজ্ঞতা ও জ্ঞানপাপ।
পর্দা ফরজ বিধান। মুসলিম নর-নারী সকলের জন্যই পর্দা আবশ্যক। নারী ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষায় মহিলার জন্য পুরো শরীর আবৃত করা ফরজ।
কেননা মহিলারা প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল এবং পুরুষের পাশবিক আচরণের মুখে অসহায়। সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রগতি কোনো কিছুর দোহাই তাদেরকে এসকল পাশবিকতা থেকে রক্ষা করতে পারে না। এ জন্যই আল্লাহ পর্দার বিধান দিয়েছেন, যাতে নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষা হয়। তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে নয়।
আমাদের সামাজিক ও নৈতিক ক্ষয়-লয় এবং পতন-পঁচনের সমাজেও আমরা দেখছি, যেসব নারী পর্দার মধ্যে বেড়ে ওঠে তারা বখাটেদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বেঁচে থাকেন। সাধারণত পর্দানশীন নারীদের উত্ত্যক্ত করতে দুষ্টরা দ্বিধাবোধ করে, তাদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্ভ্রমবোধ বজিয়ে রাখে।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (চাদরের) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৯)
এ সুরার-ই ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের গৃহে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বর্বর যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ হলো- মাথা, মুখ, ঘাড়, গলা, বুক, হাত, পা ইত্যাদিকে অনাবৃত রাখা। যেন মানুষ তা দেখতে পায়—তা করতে নিষেধ করেছেন।
একটি বিষয় বিশেষ লক্ষনীয় যে, মুখমণ্ডল আবৃত করা ফরজ কিনা তাতে মতভেদ থাকলেও, তা ঢেকে রাখা যে উত্তম ও সুন্নাহ সম্মত তাতে কোনো মতভেদ নেই।
ফেতনা ও সামাজিক অনাচারের ভয় থাকলে সবার মতেই মুখ ঢেকে রাখা ফরজ। একান্ত প্রয়োজন হলে, ভিন্ন কথা।
সামগ্রিকভাবে মুখ আবৃত করাই উচিত ও নিরাপদ। আর কোরআনের বিভিন্ন নির্দেশের আলোকে মুখ আবৃত রাখার মতটি জোরদার।
কোনো মুসলিম নারীর-ই উচিত নয়, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিজের জীবনের বরকত-কল্যাণের উৎস নষ্ট করে দেওয়া। বেপর্দা হয়ে—অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনাবৃত করে কোনো মহিলা কোথাও জাগতিক স্বার্থ লাভ করেন না। একান্তই শয়তানের প্ররোচনা অথবা অমুসলিম বা পরকালভোলা নারীদের অনুকরণের প্রবণতায় তারা এরূপ কঠিন হারামে লিপ্ত হন।
হিজাব পালনে কারো জাগতিক কোনো ক্ষতি হয় না, কোনো কর্ম বা প্রয়োজন ব্যাহত হয় না, পারিবারিক-সামাজিক সম্মান বা মর্যাদায় ঘাটতি আসে না। বরং তিনি অতিরিক্ত সম্মান-মর্যাদা লাভ করেন । আল্লাহর অফুরন্ত দয়া, কল্যাণ ও বরকত লাভেও ধন্য হন।
আল্লাহ বলেছেন, দৃষ্টিসংযম, পর্দাপালন ও লজ্জাস্থানের হেফাজত দুনিয়া ও আখেরাতের পবিত্রতা-সফলতা অর্জনের উপায়। এ থেকে দূরে সরে গেলে ধ্বংস ও শাস্তি অনিবার্য। আল্লাহ আমাদের সফলতার পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং ধ্বংসের পথ থেকে দূরে রাখুন। আমিন।
Source: বুরহান উদ্দিন আব্বাস, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম