Daffodil International University

Faculty of Allied Health Sciences => Public Health => Topic started by: saima rhemu on March 04, 2019, 04:40:49 PM

Title: গর্ভাবস্থায় কিভাবে শোওয়া বা ঘুমানো নিরাপদ ?
Post by: saima rhemu on March 04, 2019, 04:40:49 PM
গর্ভবতী মহিলাদের অন্যতম বড় সমস্যা হল ঘুমাতে এসে বিছানায় আরাম না পাওয়া। এর কারণ হিসেবে আপনার শরীরের পরিবর্তন, স্তনের পরিবর্তন, মানসিকভাবে অস্থির থাকা ইত্যাদিকে দায়ী করা যায়। বিশেষ করে আপনার যদি উপুড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে তাহলে এ সময় এভাবে ঘুমানো আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে ।

আপনি স্বাভাবিক অবস্থায় কিভাবে ঘুমাতেন তার উপর নির্ভর করে গর্ভাবস্থায় আমার ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন করতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাম পাশ ফিরে শোওয়া গর্ভাবস্থায় সবচাইতে ভালো কারণ এতে মায়ের শরীর থেকে গর্ভের বাচ্চার শরীরে রক্ত প্রবাহ বাঁধা গ্রস্থ হয়না। এভাবে শোওয়া যদি আপনার অভ্যাস না থাকে তবে এখনই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী শুতে পারেন। এতে বাচ্চার তেমন কোন সমস্যা হয়না।

কিছু কিছু মায়েদের স্তন গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে সংবেদনশীল হয়ে ওঠে বলে গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে উপুড় হয়ে শুতে সমস্যা হয়। কিন্ত এতে বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়না। তবে গর্ভধারণের সময় যত বাড়তে থাকবে ততই উপুড় হয়ে বা চিৎ হয়ে শোওয়াটা মায়েদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এবং এসব পজিশনে শোওয়াটা নিরাপদ ও নয়।

নিচে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ভঙ্গিতে শোওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

চিৎ হয়ে বা পিঠে ভর দিয়ে শোওয়া

গর্ভাবস্থার ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের জরায়ু অনেক বড় হয়ে যায়। এর ফলে মা যদি চিৎ হয়ে শোয় তবে তা রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে। এভাবে শোয়ার ফলে জরায়ুর চাপে ইনফেরিয়র ভেনা কাভা সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। এই শিরাটি শরীরের মধ্যভাগ ও নিম্নভাগ থেকে রক্ত হৃদপিণ্ডে প্রবাহিত করে।

চিৎ হয়ে শোয়ার ফলে অ্যাওরটাতেও চাপ পড়তে পারে যার ফলে মায়ের শরীরে এবং প্লাসেন্টাতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। এর কারণে মায়ের হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে, দম বন্ধ অনুভুতি হয়ে মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে এবং হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহ পার হয়ে যাবার পর অনেকক্ষণ চিত হয়ে শুয়ে থাকলে আপনার জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হতে পারে, কারণ গর্ভস্থ শিশুটির সকল চাপ তখন রক্তনালীগুলোর ওপর পড়ে। এ সময় আপনার নাসারন্দ্রহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যার কারণে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।

উপুড় হয়ে বা পেটের উপর ভর দিয়ে শোওয়া

পেটের উপর ভর দিয়ে শোয়া গর্ভাবস্থার শুরু দিকে তেমন কোন সমস্যা করেনা। মায়ের পেটে বড় না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শুতে কোন বাঁধা নেই। তবে ১৬-১৮ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের পেট বেড়ে যাওয়ার কারণে এভাবে শোওয়াটা কঠিন এবং কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেকের এর আগেও পেট বড় হয়ে যেতে পারে। তবে এ সময় থেকে এভাবে শোওয়াটা, চিৎ হয়ে শোওয়ার মতই ক্ষতির কারণ হতে পারে কারণ এর ফলে জরায়ুতে চাপ পড়ে এবং তা পেছনের দিকে অ্যাওরটা ও ভেনা কাভাতে চাপ সৃষ্টি করে।

উপুড় হয়ে যদি শুতেই হয় তবে ডোনাট আকৃতির বালিশ বানিয়ে নিতে পারেন যাতে মাঝামাঝি গোলাকৃতির গর্ত থাকবে। এই গর্তে পেট রেখে এমনভাবে শুতে পারেন যাতে পেটের উপর চাপ না পড়ে।

পাশ ফিরে শোওয়া

গর্ভাবস্থায় পাশ ফিরে শোওয়া বিশেষ করে বাম পাশ ফিরে শোওয়াটা সবচাইতে নিরাপদ।বাম কাত হয়ে শোয়াটা আপনার বাচ্চার জন্যও ভালো কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্ল্যাসেন্টা দিয়ে সহজেই বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে। আপনার কিডনিও বর্জ্য ও অতিরিক্ত ফ্লুইড আপনার শরীর থেকে বের করে দেয়ার জন্য কাজ করতে পারে। এর ফলে আপনার হাত-পা-গোড়ালি ফুলে যাবার (oedema) সম্ভাবনাও কম থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে যেসব নারীরা গর্ভাবস্থায় বাম কাতে শোয়, তাদের মৃত সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা কম থাকে; অন্তত যারা অন্য পজিশনে শোয় তাদের চাইতে। তবে প্রকৃতপক্ষে মৃত সন্তান প্রসবের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো আমরা বুঝে উঠতে পারিনি এবং এর সাথে অনেক বিষয় জড়িত। এই গবেষণায় কেবল ঘুম-সংক্রান্ত প্রভাবগুলো, যেমন নাক ডাকা, বার বার বাথরুমে যাওয়া, এবং ঘুমানোর পজিশন ইত্যাদি বিষয়ই দেখা হয়েছে। তবে স্লিপিং প্যাটার্নই দায়ী কি না সেটা বোঝার জন্যও আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে।

ডান পাশ ফিরে শোওয়াটা বাম পাশ ফিরে শোওয়ার মত ততটা নিরাপদ নয় কারণ এতে করেও ভেনা কাভাতে চাপ পড়তে পারে। তবে ডান পাশ ফিরে শুতে চাইলে পেটের নিচ বালিশ দিতে পারেন যাতে জরায়ুর চাপ সরাসরি নিচের দিকে না পড়ে।

গর্ভাবস্থায় শোওয়া আরামদায়ক করার কিছু পরামর্শ

ঘুমানোর ক্ষেত্রে মায়ের আরাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। তাই, আপনার যত খুশি বালিশ ব্যবহার করুন। পায়ের নিচে, পিঠে বালিশ আপনার গর্ভকালীন ব্যথা থেকে দিতে পারে কিছুটা স্বস্তি ও আরামের ঘুম। বালিশের অবস্থান এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা শুধু মাথা নয়, মায়ের পেট ও পা কেও সমানভাবে আরাম দিতে পারে। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত বালিশ কিনতে পাওয়া যায় বা বানিয়ে নেওয়া যায়। তা সম্ভব না হলে পর্যাপ্ত বালিশের সাপোর্ট থাকা জরুরী।

হাঁটু ভাজ করে বাম কাতে শুয়ে পড়ুন এবং দুই হাঁটুর মাঝখানে নরম বালিশ রাখুন। এতে করে আপনার হিপ ও পেলভিস-এর পেশীর ওপর চাপ কম পড়বে।  পেটের নিচে লম্বা বালিশ দিতে পারলে পিঠের দিকে টান কমায়। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি খেয়াল করেন যে আপনি চিত হয়ে ঘুমাচ্ছেন, তাহলে সাথে সাথেই বাম কাতে ফিরে যেতে পারেন।

ঘুমানোর সময় পাশে আরেকটা বালিশ দিয়ে নিতে পারেন যার কারণে আপনি ঘুমের মধ্যে খুব বেশি নড়তে পারবেন না।যদি বাম কাতে লম্বা সময় শুয়ে থাকার কারণে আপনার হিপে চাপ পড়ে, তাহলে আপনার ম্যাট্রেসের ওপর দেয়ার জন্য একটা নরম ফোম কিনে নিতে পারেন। এতে আপনি আরাম পাবেন আর বাতাস সঞ্চালনও সহায়ক হবে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা অনলাইনেও আপনি মাপ মত ফোম ম্যাট্রেস পাবেন।

শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই পেতে আপনার বুকের পাশেও একটি বালিশ আলতো করে ধরে রাখতে পারেন।বই জাতীয় কিছু দিয়ে অথবা আপনার সুবিধামতো উপায়ে বিছানার মাথার দিকের অংশ কয়েক ইঞ্চি উঁচু করে দিন, এতে আপনার পাকস্থলী এসিডিটি থেকে মুক্ত থাকবে আর আপনার হার্ট এ জ্বালাপোড়াও কম অনুভব হবে।

ঘুমানোর জন্য কেবল বিছানায় শেষ আশ্রয় এমন ধরা বাধা নিয়মে নিজেকে বেধে না ফেলে আপনার যেখানে শুয়ে আরাম অনুভূত আপনি সেখানেই শোবেন। সোফায় আরাম পেলে সোফাতেই আবার যদি মেঝেতে ম্যাট্রেস ফেলে ঘুম ভালো হয় তাই করুন।গর্ভাবস্থার শেষ দিকে যদি বিছানায় শুয়ে আরাম নাই পান, তাহলে আরামদায়ক আর্মচেয়ারে কিংবা সোফায় এক কাতে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। সমাধান হিসেবে এটা যে সবসময় কার্যকরী হয় তা নয়, তবে ডাক্তার আপনাকে চেষ্টা করে দেখতে বলতে পারেন।

পরিশিষ্ট

ঘুমের মধ্যে পাশ ফেরা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হবেন না। ঘুমন্ত অবস্থায় আপনার শরীর আপনাআপনিই  আরামদায়ক পজিশনে থাকবে নতুবা আপনাকে জাগিয়ে দেবে। ঘুম থেকে জেগে যদি দেখেন আপনি ঠিক ভাবে শুয়ে নেই তাতে ঘাবড়ে যাবেন না। এতে কোন ক্ষতি হয়ে যায়নি। আপনার ঘুম ভেঙ্গেছে আপনাকে ঠিকভাবে শোওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতেই। মনে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমোনোটা  আপনার জন্য এখন খুব জরুরি, বিশেষ করে মাঝরাতে(রাট ১টা থেকে ২টা) অর্থাৎ আপনার গর্ভের বাচ্চা যখন পেটের ভেতরে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

সবার জন্য শুভকামনা।
Title: Re: গর্ভাবস্থায় কিভাবে শোওয়া বা ঘুমানো নিরাপদ ?
Post by: Md. Al-Amin on March 05, 2019, 10:31:39 AM
Helpful post..
Title: Re: গর্ভাবস্থায় কিভাবে শোওয়া বা ঘুমানো নিরাপদ ?
Post by: saima rhemu on March 05, 2019, 10:41:33 AM
Yes very helpful post.