Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Namaj/Salat => Topic started by: abbas on May 09, 2019, 01:55:58 PM
-
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
আমীর, মজলিসে দাওয়াতুল হক
মুহতামিম, জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী ঢাকা
রোজার ফজিলত হাসিল করার জন্য যেমন অনেক কিছু আমল করতে হয়, তেমনি অনেক কুঅভ্যাস পরিত্যাগ করতে হয়, নচেৎ ওই রোজার কোনো মূল্য থাকে না।
একটি হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অনেক রোজাদার এমনও আছে, যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতীত অন্য কোনো ফল লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন আছে, যাদের শুধু জাগরণ ব্যতীত আর কোনো ফল লাভ হয় না।’
এ জন্য এ ব্যাপারে অতি সতর্ক থাকা উচিত। রোজা অবস্থায় কী কী বিষয় বর্জনীয়, এ সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস নিচে উদ্ধৃত করা হলো :
১. ‘রোজা’ রোজাদারের জন্য ঢাল এবং সুদৃঢ়ভাবে প্রস্তুত প্রাচীরস্বরূপ, যতক্ষণ পর্যন্ত একে মিথ্যা ও গীবতের দ্বারা নষ্ট না করবে। অতএব, রোজা অবস্থায় মিথ্যা, গীবত-কটুবাক্য, ঝগড়া, কলহ গালাগালি ও অন্যান্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা চাই।
২. ‘রোজা’ রোজাদারের জন্য ঢালস্বরূপ। অতএব যে রোজা রাখবে, জাহেলদের মতো অশ্লীল কোনো কাজ করা বা কথা বলা তার জন্য উচিত নয়। যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলদের ন্যায় অসভ্য ব্যবহার করে, তবে প্রতিউত্তরে তার অনুরূপ ব্যবহার করা সমীচীন নয়। বরং বলা উচিত- আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখছি। (নাসায়ী)
৩. দৃষ্টি সংযত করা উচিত, যাতে অবৈধ স্থানে দৃষ্টি না পড়ে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, দৃষ্টিশক্তি শয়তানের তীরসমূহ থেকে একটি তীর বিশেষ। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে এই তীরে বিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে প্রচেষ্টা চালায়, আল্লাহ পাক তার হৃদয়ে এমন ইমানের দীপ্তি ভরে দেন যে, সেই ব্যক্তি তার মজা ও আস্বাদ অন্তরে অনুভব করতে পারে।
৪. গীবত বা কুৎসা থেকে বিরত থাকা চাই। কুরআনে কারিমে গীবতকে মৃত মানুষের পচা-দুর্গন্ধযুক্ত গোশতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কারও গীবত করল, সে যেন উক্ত পচা-দুর্গন্ধযুক্ত মৃত মানুষের গোশত ভক্ষণ করল।
সাহাবাকেরাম রা. একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গীবতের মর্মার্থ জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর করলেন, কোনো ব্যক্তির পশ্চাতে এমন কোনো কথা বলা, যাতে সেই ব্যক্তি নারাজ হয়।
সাহাবিরা আরজ করলেন যে, নিন্দিত ব্যক্তি যদি সেই দোষে প্রকৃত দোষী হয়ে থাকে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেন, তবেই তো গীবত বা কুৎসা রটনা করা হলো। আর যদি ঘটনা সত্য না হয়, তাহলে তা মিথ্যা অপবাদ হবে, যার অপরাধ হিসেবে আরও বেশি গুরুতর।
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা রয়েছে : দুজন স্ত্রীলোক রোজা রেখে বড় অবসন্ন ও কাতর হয়ে পড়ল। তাদের এ অবস্থা দেখে সাহাবায়ে কেরাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সুপারিশ করলে তিনি তাদের কাছে একটি পেয়ালা দিয়ে এরশাদ করলেন, স্ত্রীলোক দু’জন যেন এতে বমি করে। উভয় স্ত্রীলোক বমি করল। দেখা গেল তাতে কয়েক টুকরো গোশ্ত এবং কিছু তাজা রক্ত বের হয়েছে।
সাহাবায়ে কেরাম রা. এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, এরা দুজনই হালাল খাদ্য খেয়ে রোজা রাখছিল। কিন্তু রোজা অবস্থায় গীবত করে মরা গোশ্ত হারাম বস্তু ভক্ষণ করেছে।
৫. অশ্লীল কথাবার্তা, গানবাদ্য ইত্যাদি থেকে কানের হেফাজত করা চাই। হাদিসে রয়েছে কুৎসা করা যেমন পাপ, শোনাও তদ্রূপ (মহাপাপ)।
রোজা ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। অতএব, ওজর ব্যতীত রোজা পরিত্যাগ করা মহাপাপ এবং অত্যন্ত জঘন্য কাজ। এরকম অন্যায় কাজ একমাত্র তারাই করতে পারে, যাদের অন্তরে ইসলামের বিন্দুমাত্র স্থান নেই।