Daffodil International University

Help & Support => Common Forum/Request/Suggestions => Topic started by: thowhidul.hridoy on July 06, 2019, 06:03:04 PM

Title: সারা বছর প্রয়োজন ভেজালবিরোধী অভিযান
Post by: thowhidul.hridoy on July 06, 2019, 06:03:04 PM
পবিত্র রমজান মাস শেষ হয়েছে এক মাস হলো। প্রতিবারের মতো এবারের রমজান মাসেও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলেছে। বলা যায় অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভেজালবিরোধী অভিযান ছিল তুলনামূলক বেশি।
বিভিন্ন অভিযানে এসময় ভেজালকারীদের জরিমানা ও শাস্তি দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাই এসময় ভেজালকারীরা ভয়ে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার ক্ষেত্রে ছিল অনেকটা সর্তক। এখন রমজান মাস শেষ হয়েছে প্রায় এক মাস। কিন্তু এখন আর রমজান মাসের মতো সেভাবে ভেজাল বিরোধী অভিযান আমরা দেখতে পাচ্ছি না। অথচ, ভেজালকারীরা শুধু রমজান মাস নয় সারা বছরই খাদ্যে ভেজাল মেশাতে ব্যস্ত থাকেন। আর অভিযান কমে যাওয়ার সুযোগে ভেজালকারীরা নিশ্চিতে খাদ্যে ভেজাল মেশাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। অথচ, রমজান মাসের মতো যদি সারা বছর ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হতো তবে অনেকাংশে কমে যেতো খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রয়াস। 

অথচ, আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল দিলে কি অপরাধ হবে, কেমন শাস্তি হবে, এর রয়েছে সুস্পষ্ট আইন। আমাদের দেশে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (গ)-এর ১ (ঙ) ধারায় খাদ্যে এবং ওষুধে ভেজাল মেশালে বা বিক্রি করলে অপরাধী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনের খাতায় এমন শাস্তির বিধান থাকলেও আমরা কখনো দেখিনি বা শুনিনি খাদ্যে ভেজাল দেয়ার অপরাধে কারো মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন তো দূরের কথা ভেজালকারীদের দণ্ডের পরিমাণ এতোটাই কম যে, যা অনেক সময় মেনে নিতে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে শুধু দেখি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজালকারীকে সামান্য কিছু আর্থিক দণ্ড দেয়া হয়। জরিমানার অঙ্কাটা এতটাই কম হয় যে, অপরাধী তাৎক্ষণিক সেই টাকা পরিশোধ করে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারও মহাআনন্দে ভেজাল খাদ্য বিক্রির মহোৎসবে মেতে ওঠেন।

অবাক করা তথ্য হলো- ১৯৭৪ সালে আইন হলেও বর্তমান সময়ে বিশেষ করে গত দুই যুগ ধরে এদেশে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মাত্রা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। দিনদিন তা হয়ে উঠছে সবার কাছে অসহনীয়। রমজান মাসে যা বেড়ে যায় অনেকটা। আর এর প্রেক্ষিতে ভেজাল বিরোধী অভিযানও চলে প্রায় নিয়মিত। কিন্তু রমজাম মাস শেষ হলেই প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এসব অভিযান। দেখে মনে হয় রমজান মাস ছাড়া যেন খাদ্যে ভেজাল দেয়া হয় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো- যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তারা সারা বছরই তা করতে সযেষ্ট থাকেন। আর এমন কর্মকাণ্ড করার পেছনে মূল কারণ সেভাবে আর অভিযান পরিচালিত হয় না বলে।   

এবার একটু দৃষ্টি দেয়া যাক আমরা প্রতিদিন যেসব ভেজাল খাদ্য খাচ্ছি তার তালিকাটা কেমন?  দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো না কোনো ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করছি। বিশেষ করে শাকসবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মশলা থেকে ফলমূল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্যে যেন ভেজালই এখন অনিবার্য। তাই ভেজাল ছাড়া এসব খাদ্য অনেকটা দুর্লভ। কারণ বাজারে গিয়ে বিক্রেতার কথা বিশ্বাস করে আমরা এসব খাদ্য কিনছি। আর প্রিয়জনদের নিয়ে নিরাপদ মনে করে খাচ্ছিও। কিন্তু আমরা জানি না এসব খাদ্য খাওয়ার ফলে কি ভয়ানক বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ভেজালকারীরা ফলমূল, শাকসবজি ও মাছে মেশাচ্ছেন জীবন ধ্বংসকারী বিষ ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথোফেন, প্রোফাইল প্যারা টিটিনিয়াম পাউডার, ডিডিটিসহ নানা মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান। এছাড়া বিস্কুটসহ বেকারিদ্রব্যে রয়েছে বিষ সমতুল্য রং আর মুড়িতে দিচ্ছেন কৃষিকাজে ব্যবহৃত ইউরিয়া সার; যা খেয়ে আমরা ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছি নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। বিশেষ করে শিশুরা এসব খাদ্য গ্রহণ করে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর হার দিনদিন বাড়ছে। বিশেষ করে খাদ্যে ভেজালজনিত বেশ কয়েকটি রোগ আমাশয়, অ্যাপেনডিক্স, রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনি রোগ আর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
আমরা নিরব দর্শক হয়ে এসব শুধুই দেখছি। আর ভাবছি এর থেকে কী মুক্তির কোনো উপায় নেই? অবশ্যই মুক্তির পথ রয়েছে। এর জন্য নিতে হবে বিভিন্ন পদক্ষেপ। বিশেষ করে শুধু রমজান মাস নয়, সারা বছরজুড়েই ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। অভিযান চালাতে হবে খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে যারা ভেজাল পণ্য উৎপাদন করছেন তাদের বিরুদ্ধেও। বন্ধ করতে হবে ভেজাল পণ্য উৎপাদন।

পাশাপাশি যারা ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির সাথে জড়িত থাকবেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ভেজালকারীরা খাদ্যে ভেজাল মেশাতে সাহস পাবেন না। মূলত লঘু শাস্তির কারণে ভেজালকারীরা মহাআনন্দে খাদ্যে ভেজাল মেশান। কয়েকটি বড় শাস্তির উদাহরণ সবার সামনে আসলে অনেকটা কমে আসবে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা।   

তাই এখন শুধু রমজান মাসকে টার্গেট করে নয়, সারা বছরই দেশে ভেজাল বিরোধী জোড়ালো অভিযান চালাতে হবে। এটা এখন নাগরিকদের সময়ের দাবি। এতে সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা। এক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, সচতেন সব নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। কোথাও খাদ্যে ভেজাল দেয়া হচ্ছে এমন খবর পেলে সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হতে হবে সবাইকে। তবেই হয়তো সম্ভব নিরাপদ খাদ্য।