Daffodil International University
General Category => Common Forum => Topic started by: Md.Towhiduzzaman on August 01, 2019, 12:05:18 PM
-
ঢাকার রায়েরবাজার বস্তির ঘিঞ্জি পরিবেশে বেড়ে ওঠা। মালিকের পক্ষে একটি বস্তির দেখভাল করে যা কিছু আয়, তাই দিয়ে সিয়াম হোসেনের বাবা সংসার চালান। ওই পরিবেশ থেকে ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, তারও নিশ্চয়তা ছিল না। বড় স্বপ্নের পথ তো বহুদূর। তবে সিয়াম পেরেছে। সে আমেরিকার ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে (ইউডব্লিউসি) পড়ার জন্য নিউ মেক্সিকোতে যাচ্ছে।
বুধবার রাজধানীর বনানীতে জাগো ফাউন্ডেশনের অফিসে সিয়ামকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন গত বছর এ-গ্রেড পেয়ে এসএসসি পাস করে। ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজের শতভাগ বৃত্তি নিয়ে সিয়াম আমেরিকায় পড়তে যাবে। আগামী ৩০ আগস্ট থেকে তার ক্লাস শুরু।
ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ একটি বৈশ্বিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতিকে এক করতে সাহায্য করে। সারা বিশ্বের চারটি মহাদেশে ইউডব্লিউসির ১৮টি স্কুল ও কলেজ রয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বের ১৫৫টি দেশ থেকে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে পড়ার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ থেকে এ বছর সিয়ামসহ ৩০ জন শিক্ষার্থী ইউডব্লিউসির বিভিন্ন কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে এদের মধ্যে সিয়ামসহ চারজন শতভাগ বৃত্তিতে পড়তে যাবে। বাংলাদেশে ইউডব্লিউসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই শিক্ষার্থীদের মনোনীত করেছে।
ইউডব্লিউসির ‘ডেয়ার টু ড্রিম’ বৃত্তিটি পেয়েছে সিয়াম হোসেন। অর্থাৎ সিয়ামের আর্থিক দিক বিবেচনাতেই এই বৃত্তির জন্য সে মনোনীত হয়েছে। সিয়ামের অবস্থা থেকে বৈশ্বিক মানের একটি কলেজে পড়তে যাওয়া সাহসেরই বটে। সিয়াম হোসেন বলে, ‘এমন একটা পরিবার থেকে আসছি, যেখান থেকে আমেরিকায় যাওয়া আসলেই কখনোই সম্ভব ছিল না। হয়তো পড়াশোনা হতো, হয়তো থেমেও যেত। কিন্তু আমার স্কুল জাগো ও যাঁরা পড়াশোনার জন্য আমাকে সহায়তা করেছেন, তাঁদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমি এখন বড় বড় স্বপ্ন দেখতে পারি।’
ইউডব্লিউসির আমেরিকার কলেজটি নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত। সিয়াম দু বছর সেখানে পড়াশোনা করবে। সে জানায়, সেখানে থাকা অবস্থাতেই তার লক্ষ্য থাকবে নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির জন্য চেষ্টা করা।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সিয়াম জিপিএ-৫ পেলে বাবা মো. বেলাল হোসেন ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘এ প্লাস পাওয়ায় ভাবি, আমার ছেলের জন্য কিছু হবে।’ জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বেলাল হোসেন বলেন, ‘এখানে খুব ভালো পড়াশোনা হয়। যার প্রমাণ আমার ছেলে। এখন সে আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছে।’
সিয়ামের সঙ্গেতার বাবা-মা, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যরা ও কাতার এয়ারওয়েজের প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীতসিয়ামের সঙ্গে তার বাবা-মা, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যরা ও কাতার এয়ারওয়েজের প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীতনিজের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ায় নিজেকে খুবই গর্বিত মনে করছেন জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দ। তিনি বলেন, ‘অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা বলতে কোনোভাবে পাস করানো দরকার। কিন্তু জাগোর লক্ষ্য তা নয়। ওদের ইংলিশ ভার্সনে পড়াশোনা করানো হয়। যাতে ওরা শুধু বাংলাদেশে আটকে না থেকে বিশ্বমানের হয়ে গড়ে ওঠে।’ এ ছাড়া তিনি আশা প্রকাশ করেন, সিয়ামরা একদিন বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে এবং জাগোকে সহায়তা করবে।
ইশরাক শাবীব ও তাঁর স্ত্রী শরীফ সুরাইয়া দীর্ঘদিন সিয়ামকে পড়াশোনার জন্য সহায়তা করেছেন। তাঁদের পরে ফারহানা রশিদ সিয়ামের পড়াশোনায় সহায়তা করে আসছেন। ইশরাক ও ফারহানা বলেন, দেশ ও সমাজের দায়বদ্ধতা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য তাঁরা সিয়ামের সহযোগী হয়েছেন।
রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠের পাশে একটি বস্তিতে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাগো ফাউন্ডেশন। ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়। সিয়াম হোসেন সেই ১৭ জনের একজন। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দেয়। বর্তমানে সারা দেশে তাদের ১২টি স্কুল রয়েছে।
আমেরিকায় যাওয়ার জন্য সিয়ামকে বিমানের টিকিট দিয়ে সহায়তা করেছে কাতার এয়ারওয়েজ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউডব্লিউসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ থেকে খাদিজা আফজাল, আয়েশা দাদা, জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রিন্সিপাল নিজামুল করিম, সমন্বয়কারী শারমিন আহমেদ, সিয়ামের মা শিউলি বেগম প্রমুখ।