Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Md. Sazzadur Ahamed on December 01, 2019, 08:12:08 PM
-
প্রযুক্তি তো কত কিছুই বদলে দেয়। ব্যক্তি মানুষের দিনলিপি লেখার কৌশল থেকে শুরু করে এর অন্তর্বস্তু—সবই বদলে দিতে পারে প্রযুক্তি। আর ব্যক্তিকে নিয়েই যেহেতু সমাজ-রাষ্ট্র, তাই অতি অবশ্যই এটি রাজনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। প্রযুক্তির আলাপটি আসছে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে।
বিস্তর সমালোচনার পর সম্প্রতি টুইটার, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে টুইটার তাদের প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ফেসবুক এখনো এমন পদক্ষেপ না নিলেও নানামুখী সমালোচনায় একরকম জেরবার দশায় আছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, এই যে ইন্টারনেটের অবারিত দুনিয়া-এর নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা? যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের কাজটি কে করবে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা, নাকি রাজনীতিকেরা?
এ ধরনের বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। ইন্টারনেটকে যদি সর্বাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে তার বিস্মৃতপ্রায় পূর্বসূরি বলতে হয় টেলিগ্রাফকে। টেলিগ্রাফ আবিষ্কার ও এর ব্যবহার বৃদ্ধির পর তা নিয়েও কিন্তু নানা জল্পনা হয়েছিল। খোদ নিউইয়র্ক টাইমস রাজনীতিতে টেলিগ্রাফের প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটির ভাষ্য ছিল, রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করতে টেলিগ্রাফ অনেক কিছুই করছে। মূল বক্তব্য ছিল টেলিগ্রাফের মাধ্যমে মানুষের দাবিগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারছে। এর ফলে রাজনীতিকদের পক্ষে একেক জায়গায় একেক ভূমিকা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। ঠিক একই বাস্তবতা কি এখন ইন্টারনেট হাজির করেনি? ইন্টারনেট, আরও ভালো করে বললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে যেকোনো মানুষ রাষ্ট্র বা বিশ্বের যেকোনো ঘটনায় নিজের অভিমতটি প্রকাশ করতে পারছে। এটি রাজনীতিকদের কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে; এবং রাজনীতিকেও।
প্রশ্ন উঠেছে, এই যে ইন্টারনেটের অবারিত দুনিয়া-এর নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা? যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের কাজটি কে করবে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা, নাকি রাজনীতিকেরা?
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই নির্বাধ মত প্রকাশের সুযোগ অনেক অনর্থও ঘটাচ্ছে। কারও নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিতর্কিত মত প্রকাশের দরুন অনেক সময় কোনো একটি অঞ্চলের বা নির্দিষ্ট গোত্রের মানুষকে বিপদে পড়তে দেখা যায়। বাংলাদেশেই এ ধরনের বাস্তবতা দেখা গেছে অন্তত কয়েকবার। আবার নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক মতকে প্রভাবিত করার ঘটনাও ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে দারুণ খ্যাতি পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট গণভোট তো রীতিমতো কাঠগড়ায়। এ কাতারে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। প্রতিপক্ষকে এক হাত নিতে এখনকার রাজনীতিকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করছেন বলা যায়। কী রাজনীতি, কী ব্যবসা, বিজ্ঞাপনের ব্যাপ্তির বিচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এক দশক আগেও অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার ছিল অনেক ছোট। আর এখন বিশ্বের মোট বিজ্ঞাপনের অর্ধেকই অনলাইনভিত্তিক।
এই বিজ্ঞাপন যখন রাজনৈতিক হয়, বা রাজনীতিতে প্রভাব রাখার মতো হয়, তখনই ঘটে বিপত্তি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করা এলিজাবেথ ওয়ারেন যেমন ফেসবুককে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন এই বলে যে, ‘প্রতিষ্ঠানটি অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা ছড়ায়।’ এই বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি প্রমাণও হাজির করেছেন। তিনি বলেন, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফেসবুকে একটি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছিল, যেখানে বলা হয়, ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন। এই তথ্য ছিল পুরোপুরি মিথ্যা।
একই অবস্থা যুক্তরাজ্যেরও। মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দায় নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম বদলে রেখেছে ‘ফ্যাক্টচেকইউকে’। না বললেও চলে যে, ইন্টারনেটে চলা নৈরাজ্য ও নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতেই দলটি এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের একটি চেষ্টা বলা যায়। কারণ, ইন্টারনেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সহজ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যার আবাদ ও প্রচারেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আর এই সত্য-মিথ্যার সমন্বয় বিপদে ফেলছে মানুষকে এবং মানুষের জন্য রাজনীতিকে।
এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। সারা বিশ্বেই বিষয়টি এখন অন্যতম প্রধান আলোচনা বিষয়। বিশ্বের বহু দেশ ইন্টারনেটে মানুষের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণে আইন করছে, যার মধ্যে বেশ কিছু আইন নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থায় বিতর্কের কেন্দ্রে ইন্টারনেট, রাজনীতি ও গণতন্ত্র পরস্পরের মুখোমুখি বসে আছে। এ অবস্থায় টুইটার প্রায় সব ধরনের রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বন্ধের ঘোষণা দিলেও ফেসবুক এখনো রাজনৈতিক বক্তব্যে নিয়ন্ত্রণ আরোপে অনিচ্ছুক। যদিও বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছে বলে জানিয়েছে।
ইন্টারনেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সহজ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যার আবাদ ও প্রচারেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আর এই সত্য-মিথ্যার সমন্বয় বিপদে ফেলছে মানুষকে এবং মানুষের জন্য রাজনীতিকে
আপাতদৃষ্টে ফেসবুকের অবস্থান নিয়ে সংশয় তৈরি হলেও সূক্ষ্ম বিচারে জাকারবার্গের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানাতে হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো যদি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন, মত, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, তাহলে তা সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানগুলো কোন রাজনৈতিক বক্তব্যকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনবে, তা তো নির্ধারণ করবে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। ফলে গোটা বিশ্বেই এই নিয়ন্ত্রণের আওতায় এলে অ-মার্কিন রাজনৈতিক দৃষ্টি বা মত খড়্গের নিচে চলে আসতে পারে। অর্থাৎ ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে, গোটা বিশ্বে ছড়ি ঘোরানো অস্ত্রটিও তার হাতে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ নিয়ন্ত্রণ আরোপ আরও ভয়াবহ। কারণ, সেখানে জনগণের কোনো প্রতিনিধি বসে নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিকদের ভোটের বৈতরণি পার হয়ে আসতে হয় বলে জবাবদিহির শর্তটি তার সামনে থাকে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের বসের ওপর এ ধরনের কোনো শর্ত তো খাটে না। এই সমীকরণেই রয়েছে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বীজটি।
তাই রাজনীতিকদের ওপরই আদতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বটি বর্তায়। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে, সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণ করে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের পন্থাটি তাদেরই বের করতে হবে। তবে তা থাইল্যান্ডের ‘অ্যান্টি ফেক নিউজ সেন্টার’-এর মতো না হওয়াই উচিত, যা সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধের কাজটিই মূলত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বাজে উদাহরণ। তাই রাষ্ট্র নয়, রাজনীতিকদেরই কাজটি করতে হবে। কোনো টেকবস কাজটি করলে, গুটিকয় অতি ধনী ব্যক্তির খেয়ালের শিকার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়, যারা আবার যেকোনো বিচারেই সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আশার কথা এই যে, রেডিও টেলিভিশনের মতো নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে এর আগে রাজনীতিকেরা এ ধরনের গুরুতর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিহাস বলে, রাজনীতিকেরা এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ।
মনে রাখা জরুরি যে নতুন প্রযুক্তি অমিত সম্ভাবনার পাশাপাশি নিয়ে আসে অসংখ্য বিপদকেও। তাই এ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়াটা জরুরি। কোনো রাষ্ট্র বিপদকে দূরে রাখতে গিয়ে যদি এমন কোনো নিয়ন্ত্রণ আইন করে বসে, যা সাধারণ মানুষের কণ্ঠই চেপে ধরে, তাহলে তা আর যা-ই হোক রাজনীতির জন্য ইতিবাচক হবে না। ইতিহাসে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকতে করা আইনের কারণেই ওই দলটি বিপদে পড়েছে। তাই অন্য পক্ষের মতকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়াটা ভীষণভাবে জরুরি। আর জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার কথা তো না বললেও চলে। গণতন্ত্রের জন্য এ তিনের কোনো বিকল্প নেই—তা কে না জানে। তবে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা গণতন্ত্রহীনতার ক্ষেত্রে তো বলার কিছু থাকে না, যা এই সময়ের বিশ্বে এক বড় রোগ হয়ে দেখা দিয়েছে।
-
Thanks for sharing :)
-
Nice :)
-
Thanks for sharing..
-
Informative. Thanks