Daffodil International University
Faculties and Departments => Business Administration => Business & Entrepreneurship => BBA Discussion Forum => Topic started by: bipasha on December 13, 2011, 11:34:21 AM
-
লেখক: মুনমুন শবনম বিপাশা | সোম, ১২ ডিসেম্বর ২০১১, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪১৮
প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন
শেয়ারবাজার শব্দটি কিছুদিন আগেও অনেকের কাছেই ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বর্তমানে অনেকের কাছেই এটি একটি আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শেয়ারবাজার ধসের কারণে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। পথে বসেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা সরকারকে দোষারোপ করছেন। প্রকৃতপক্ষে শেয়ারবাজার ধসের জন্য শুধু সরকারই কি দায়ী? এর জন্য কি কোনোভাবেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন? বড় কথা হলো আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শতকরা প্রায় আশি ভাগই ঠিকমতো শেয়ারবাজার বোঝেন না। হুজুগের বশে শুধু লাভের আশায় শেয়ারবাজারে তারা বিনিয়োগ করছেন। শেয়ারবাজারে লাভ-ক্ষতি দুইই আছে। অনেক বিনিয়োগকারীই এ বিষয়টি মানতে পারেন না। তারা ভাবেন যে শেয়ারের দাম শুধু বাড়তেই থাকবে। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগের কথা যদি বিবেচনা করি। তখন যে শেয়ারের দাম ছিল ৭০০ টাকা আজ তা তিন মাস পর হয়তো ১৫০০ টাকায় দাঁড়াল। আমাদের বিনিয়োগকারীরা ভাবেন না যে এ শেয়ারের দাম যেহেতু ১৫০০ টাকায় উঠেছে তাই আরও তিন মাস পর তা হবে ২০০০ টাকা। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে তারা উঁচু দামে শেয়ার ক্রয় করতে ভ্রূক্ষেপ করেন না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এটা ঠিক যে, দেশের শেয়ারবাজারে যে অব্যাহত ধস চলছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে মার্কেটে সূচক যতটা ওপরে উঠেছিল তাতে মার্কেটে একটা কারেকশন দরকার ছিল, তাই বলে এ ধরনের অব্যাহত ও বড় বড় ধস কখনোই কাম্য নয়। বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞতা, সরকারের উদাসীনতা, কিছু ব্যক্তির কারসাজি, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নীরবতা, আবার অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির বেফাঁস কথাবার্তা এবং খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব না দেওয়া আজকের শেয়ারবাজারে অব্যাহত ধসের বড় কারণ বলে আমি মনে করি।
আমাদের শেয়ারবাজারের উত্থান-পতনের পেছনে এসইসির কিছু সিদ্ধান্তও দায়ী। তাছাড়া এসইসির ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণেও শেয়ারবাজারে দর-দাম ওঠানামা করতে দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ এসইসি নির্দেশনা জারি করল যে, যারা চেকের মাধ্যমে টাকা জমা দেবে, তারা টাকা ক্যাশ না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কিনতে পারবেন না। এ নিয়মটি অবশ্য আগেই ছিল কিন্তু এর কার্যকারিতা ছিল না। তবে নতুন করে এ নির্দেশনার কার্যকরি ঘোষণা দেওয়ার কারণে হঠাত্ করেই বাজারে ক্রেতার সংখ্যা হ্রাস পায়। শুরু হয় দরপতন। আবার এসইসি যখন এ সিদ্ধান্ত তুলে নিয়েছিল, তখন দেখা গেল শেয়ারের দাম উঠতে শুরু করল। এসইসির এই রকম সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে বাজারে নানা সময় নানা উত্থান-পতন দেখা গেছে। যার ফলে অনেক বিনিয়োগকারী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাছাড়া অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে নানা ধরনের আতঙ্কেরও সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিল আবারও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ’৯৬-এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা থেকেও অনেকেই তাদের শেয়ার ছেড়ে মার্কেট থেকে টাকা তুলে নিতে চাইলেন ফলে ধস রূপ নিল অব্যাহত ধসে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সময়োপযোগী পদক্ষেপ শেয়ারবাজারের এ ধস হয়তো ঠেকাতে পারত। জানুয়ারি মাসেই দর বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে দফায় দফায়। শুধু জানুয়ারি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহেই ঢাকার শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক বেড়েছে আটশ’ পয়েন্ট বেড়েছে। ২১ জানুয়ারি সূচক ৮ হাজারের মাইলফলক পার করল ঢাকার শেয়ারবাজার এবং মাসজুড়ে প্রতি দিনই হাজার কোটি টাকা বা তারও বেশি লেনদেন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক ধর্ম হলো দামের উত্থান ও পতন। আমাদের শেয়ারবাজার যখন এ ধর্মবর্হিভূত আচরণ করছিল, অর্থাত্ একতরফা দাম শুধু বাড়ছিল তখনই বোঝা যাচ্ছিল যে, শেয়ারবাজার বড় কোনো কারেকশনের দিকে যাচ্ছে। তখনই এসইসির কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। এসইসির কার্যকর পদক্ষেপ হয়তো শেয়ারবাজারকে এত বড় ধসের হাত থেকে বাঁচাতে পারত।
আশ্বর্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থার সম্পর্ক থাকে না। আমাদের শেয়ারের দাম ওঠানামা নির্ভর করে অনেকটাই জুয়াড়িদের ওপর। তারা নানা কৌশলে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দিয়ে তা কেনান এবং নিজেরা হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন জুয়াড়িরা একটি সিন্ডিকেট করে সবাই একটি নির্দিষ্ট দিনে একটা নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ার কেনেন। ফলে ওই শেয়ারের দাম উঠে যায় অনেক উঁচুতে। একটি শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়তে দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ছুটতে শুরু করেন ওই শেয়ারের দিকে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ারটি কেনা শুরু করেন তখন বড় প্লেয়াররা ওই শেয়ারটি বিক্রি করা শুরু করেন। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ার উঁচু দামে কিনে ক্ষতির শিকার হন। জুয়াড়িরা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আবার অন্য আরেকটি শেয়ারের দিকে মনোনিবেশ করেন।
তাই আমাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই শেয়ারবাজার সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আমাদের অনেক বিনিয়োগকারীই অন্যের কথায় শেয়ার কেনাবেচা করেন এবং এসব বিনিয়োগকারীই জুয়াড়িদের নানা ফাঁদের শিকার হন। তাই জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের অনেক বিনিয়োগকারীই স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ পছন্দ করেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। স্বল্পমেয়াদে বেশি লাভের প্রবণতা বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিকল্পনা হয়তো বিনিয়োগকে আরও নিরাপদ করবে। শেয়ার কেনার আগে অবশ্যই ওই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্বন্ধে খোঁজ-খবর নিতে হবে।
বর্তমানে আমাদের বিনিয়োগকারীরা বাজার বিমুখী এবং তারা আতঙ্কিত। আমাদের বিনিয়োগকারীদের এ আতঙ্কের ছোবল থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এইসিসির ঘোষিত বর্তমান প্যাকেজ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদের এ স্কিমগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজারের ভবিষ্যত্ ভালো হবে। এ স্কিমগুলো মূলত শেয়ারবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ। প্যাকেজে উল্লেখিত স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপগুলো হয়তো শেয়ারবাজারের পুনরায় ধস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্যাকেজের আওতায় গৃহীত পদক্ষেপের অন্যতম হলো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সীমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যার সমাধান। এর মাধ্যমে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা হিসাবের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতি শিথিল করা হয়েছে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে দেওয়া মূলধন এবং অন্য কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হবে না। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে আরও বিনিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে নিয়মের মধ্যে বিনিয়োগ করে ব্যাংকের কোনো লোকসান হলে নিরাপত্তা জামানত (প্রভিশন) রাখার ক্ষেত্রে নেট অফ করার সুযোগ দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। এতে উপকৃত হবেন বিনিয়োগকারীরা।
নতুন প্যাকেজ অনুযায়ী বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্জিত মুনাফার ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা হয়েছে সম্পূর্ণরূপে এবং বিদেশি ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও কর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় এ ১০ শতাংশ কর আসলেই অনেক কম। তাই বর্তমান শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে এ করকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত না করে সাময়িকভাবে (২ বা ৩ বছরের জন্য) রহিত করা যেতে পারত।
ঘোষিত কর্মসূচিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সব সময়ের জন্য ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা। এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, কারণ যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে এর চেয়ে কম শেয়ার আছে, তাদের বাজার থেকে শেয়ার কিনতে হবে এবং এতে বাজার গতিশীল হবে। একই সঙ্গে প্রত্যেক পরিচালকের মালিকানায় ব্যক্তিগতভাবে কোম্পানির কমপক্ষে ২ শতাংশ শেয়ার থাকার নিয়ম করা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে বাজারে শেয়ারের অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হবে, যা বাজারকে স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এসইসির পদক্ষেপের মধ্যে বিনিয়োগ উপদেষ্টা কার্যক্রম (ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজরি সার্ভিস) উন্মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব আনতে বিনিয়োগকারী গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের জন্য তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ (এক্সেস টু ইনফরমেশন) নিশ্চিত করার জন্য গবেষণামূলক প্রকাশনা উন্মুক্ত করা হবে। যা বাজারে গবেষণালব্ধ বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
যেহেতু এ প্যাকেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা আছে তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা খুবই আশাবাদী। নিঃসন্দেহে এ প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আমি বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান আহরণের ব্যাপারে আবারও গুরুত্বারোপ করব। আপনারা যা করবেন বুঝে শুনে করুন। শেয়ারবাজারে ওঠানামা থাকবেই। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। যারা স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগে বিশ্বাসী তাদের জন্য বরং ঝুঁকিটা একটু বেশি।
লেখক : প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি
-
It is a very good article, madam. If any investor read this, he/she can learn many important information about the package, which is very helpful for share business.
Madam i think, if we do our share business for long time, we can gain something. Because the short time profit is not very easy now a days.
Madam, please help us by providing this kind of article.
-
golam kibriya---thaks a lot...i ll try to write more..