Daffodil International University

Faculties and Departments => Finance – Fund Management => Business Administration => Business & Entrepreneurship => Investment and Portfolio Management => Topic started by: Md. Alamgir Hossan on February 26, 2020, 01:17:03 PM

Title: সুদের হার: কেনিয়ার অভিজ্ঞতা কী বলে
Post by: Md. Alamgir Hossan on February 26, 2020, 01:17:03 PM
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান নীতিটা বেশ ভালো। রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের নেওয়া সব সিদ্ধান্তই দ্রুত মেনে নিয়ে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে ফেলে। এমনকি সরকার বললে মুদ্রা ব্যবস্থাপনার বড় বড় নীতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত মানতে হোটেলেও চলে যায়। সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কারণ, সরকার ও ব্যবসায়ীরা এমনটা চেয়েছেন। বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় এটি একটি বিরল ঘটনা। এখন আর কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সুদের হার নির্ধারণ করে দেয় না। সুদহার নির্ধারিত হয় বাজারব্যবস্থার ভিত্তিতে।


আশির দশকে ফিরে যাওয়া

এমন নয় যে সুদহার নির্ধারণ করে দিয়ে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেছে; বরং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই আশির দশকে ফিরে গেছে। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকই ঋণের সুদহার ঠিক করে দিত। তবে তা মোটেই উপযুক্ত কোনো পদ্ধতি ছিল না। এ কারণে সুদহার কীভাবে নির্ধারিত হবে, তার ফয়সালা হয়েছিল সেই নব্বই দশকেই। এ জন্য বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে প্রকল্প করা হয়েছিল। তারপরেই সুদহার বাজারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। সেই প্রকল্প ছিল আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচি (এফএসআরপি)।

যদিও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল সেই আশির দশকে, এরশাদের সময়েই। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এই কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সাল থেকে। ৫ বছর মেয়াদি সেই সংস্কার কর্মসূচির প্রথম পদক্ষেপটিই ছিল বাজারভিত্তিক সুদনীতি প্রবর্তন। অর্থাৎ ঋণ ও আমানতের সুদের হার নির্ধারণের ক্ষমতা নিজ নিজ ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ও সুদের ছায়া বাজার হার বা শ্যাডো মার্কেট রেট বিবেচনায় রেখে ঋণ ও অগ্রিমের বিভিন্ন খাত এবং আমানতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুদের একটা পরিসীমা (ব্যান্ড) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে এই সীমাও তুলে দেওয়া হয়।

নিম্ন সুদহারের সন্ধানে

আমরা জানি, টাকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। সেই ভাড়ার নাম সুদ। ব্যাংক নিজেও আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা ভাড়া নেয়। সেই টাকা ভাড়ায় খাটায় উদ্যোক্তাদের কাছে। এই সুদহার বাজারভিত্তিক করার অর্থ হলো, এর ওঠানামা ঠিক হবে বাজারের চাহিদা ও জোগানের ওপর। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটা হার নির্ধারণ করে দিলে বাজারে কোনো প্রতিযোগিতা তৈরি হতো না। এ থেকে বের হতেই বাজারের ওপর সুদহার ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার আশঙ্কার কথা এখনো জোরেশোরে বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ তো ছিলই, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রভাব। মন্দা মানেই চাহিদা কমে যাওয়া। আর চাহিদা বাড়াতে প্রয়োজন নতুন নতুন বিনিয়োগ। ফলে এ সময় দেশগুলো সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগকে উৎসাহ দিতে চেষ্টা করে। এমনিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সুদহার প্রায় শূন্যই বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নীতিনির্ধারণী সুদহার কমাবে কি না, এর ওপর সারা বিশ্বের অর্থনীতি তাকিয়ে থাকে। সুদহার কমাতে বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও নেয়। কারণ, সারা বিশ্বই জানে, অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হয় অর্থনীতি দিয়েই। কেবল বাংলাদেশই চলে হুকুমের ভিত্তিতে। ফলে এখানে সুদহারের নাম হয়ে যায় ‘হুকুমের সুদ’।

এমন নয় যে বাংলাদেশ ব্যাংক জানে না সুদহার কীভাবে নির্ধারিত হয় এবং কমাতে হলে কী করতে হবে। এ নিয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গবেষণাপত্র আছে। সেখানে দেখা হয়েছে, একক হারের (১০ শতাংশের নিচে) সুদহার বাস্তবায়ন সম্ভব কি না। গবেষণা অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণে সবচেয়ে বড় বিবেচনা হচ্ছে তার তহবিল ব্যয়। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়—অন্যান্য ব্যাংক কী হারে ঋণ দেয়, ঋণযোগ্য যে তহবিল থাকে তার চাহিদা ও জোগান, যেসব নিয়ন্ত্রণ প্রতিপালন করতে হয় তা, ব্যাংক পরিচালন খরচ, সম্পদ-দায়ের অসংগতি এবং খেলাপি ঋণ।

কেনিয়ার অভিজ্ঞতা

আফ্রিকার দেশ কেনিয়া অবশ্য আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছিল ২০১৬ সালে। দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার রীতিমতো সংসদে আইন পাস করে সুদহার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছিল। পার্থক্য হচ্ছে, কেনিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম থেকেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তারপরও আইন পাস করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ‘সুদের হার নিয়ন্ত্রণ কী কাজ করে: কেনিয়ার অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ১. সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) ঋণ এক বছরেই ১০ শতাংশ কমে যায়, এর বিপরীতে বড় বড় শিল্প খাত বেশি ঋণ পেতে থাকে। ২. সবচেয়ে বিপদে পড়ে ছোট ছোট ব্যাংক। তাদের ঋণ দেওয়া এক বছরে কমে যায় ১২ শতাংশ। ৩. বেসরকারি খাত থেকে সরে গিয়ে ঋণ বেশি দেওয়া হয় সরকারি খাতে। দেখা গেছে, এক বছরেই সরকারি খাতের ঋণ বেড়ে যায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। ৪. বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূলত, কৃষি, ট্রেডিং বা বাণিজ্য এবং আর্থিক সেবা খাত। ৫. ব্যাংকগুলো আয় বাড়াতে নানা ধরনের ফি এবং সরকারকে ঋণ দেওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ৬. মুদ্রানীতির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ৭. ব্যাংকগুলোর মুনাফা ব্যাপক হারে কমে যায়, লোক ছাঁটাইও বৃদ্ধি পায়। ৮. বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়ায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার পৌনে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যায়। সব মিলিয়ে চরম বিপদের মধ্যে পড়ে যায় কেনিয়া।

‘ডি গ্রেড’ স্বাধীনতা

কেনিয়ার অভিজ্ঞতা জানা হলো। বাংলাদেশ এখান থেকে কী শিক্ষা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংশয়ের কথাও বলা প্রয়োজন। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক প্রচারও পেতে শুরু করেছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত একটি অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন। এর প্রচারসংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের গ্রেড বা মান নির্ধারণ করে। সম্প্রতি ২০১৯ সালের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মান ‘বি গ্রেড’ থেকে কমিয়ে ‘ডি’ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীনতা হারিয়েছে। ২০১৮ সালে মুদ্রানীতির মূল সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে নেওয়া হয়নি; বরং অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সহায়তা ও চাপে নেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএবি ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তারল্যসংকট কমাতে হোটেলে বসে নগদ অংশ সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকয়ারমেন্ট) হার কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর সুদহার করে ৬ শতাংশ।

এ পরিস্থিতিতে ‘নয়-ছয়’ সুদহার অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই দেখার বিষয়। আশা করা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কেনিয়ার অভিজ্ঞতা পড়ে দেখবে, কিংবা কেনিয়ার অভিজ্ঞতা দেখতে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে যাবে।