Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 02, 2012, 08:33:28 PM

Title: শিশু প্রথম বছরে গরুর দুধ খাবে না
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 02, 2012, 08:33:28 PM
গরুর দুধ সব মানুষের জন্য পুষ্টি জোগানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। এটি তেমন এক খাদ্য, যাতে আছে প্রোটিন বা আমিষের উচ্চমান আর ক্যালসিয়াম ফসফরাসের মতো খনিজ পদার্থে পূর্ণ। তবু বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় ইনফ্যান্ট বা শিশুর প্রথম বছরে গাভির খাঁটি দুধ খাওয়ানো পরিহার করা শ্রেয়।
এক বছরের কম বয়সী শিশুর খাবার নির্দিষ্ট করতে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা কিছু ্লোগানে ভর করে জনগণের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, পর পর সাজানো হলে তা এ রকমই দাঁড়াবে-
১· বুকের দুধ শিশুর জীবনে শ্রেষ্ঠ সূচনা, ২· ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য শুধু মায়ের দুধ, ৩· ছয় মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার, যথা-খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু করা, ৪· গাভির দুধ বাছুরের জন্য, মানবশিশুর জন্য মায়ের দুধ। অর্থাৎ শিশুর প্রথম বছরে গরুর দুধ মানবশিশুর জন্য আর আদর্শ খাদ্য নয়। প্রথম বছর শিশু গরুর দুধ খাবে না, খাবে মায়ের দুধ; সঙ্গে ছয় মাস বয়স থেকে স্বাভাবিক খাবার।

গরুর দুধ বনাম মায়ের দুধ
খাদ্যশক্তি বিচারে গরুর দুধ ও মায়ের দুধে সমতা থাকলেও পুষ্টিগুণ বিচারে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য।
– গরুর দুধে শ্বেতসার বা ল্যাকটোজের মান প্রতি ডেসিলিটার ৪·৭ গ্রাম, মায়ের দুধে যা ৭·১ গ্রাম। মায়ের দুধের এ ল্যাকটোজ অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে নবজাত ও অল্পবয়সী শিশুর দেহ-অস্থি মজবুত করতে সহায়তা করে; সাহায্য করে গ্যালাকটোলিপিড তৈরির মাধ্যমে মস্তিষ্ককোষের বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনে। শিশু হয় বুদ্ধিমান ও স্বাস্থ্যবান।
– গরুর দুধে আমিষ বা প্রোটিনের পরিমাণ খুব বেশি, যা প্রতি ডেসিলিটারে ৩·১ গ্রাম। এতে আছে ক্যাসিনের আধিক্য। আছে বিটা ল্যাকটোগ্লোবিনের উপস্থিতি। ফলে গরুর দুধ পানরত শিশু অ্যাকজিমা, আন্ত্রিক প্রদাহ ও মলে রক্তক্ষরণের সমস্যায় ভোগে। মায়ের দুধে প্রোটিন প্রতি ডেসিলিটারে ১·০৬ গ্রাম, শিশুর প্রয়োজনমতোই স্বাভাবিক।
– গরুর দুধে চর্বি আছে প্রতি ডেসিলিটারে ৩·৮ গ্রাম, পরিমাণে তা মায়ের দুধের চেয়ে কম। আর নেই অতিজরুরি ফ্যাটি এসিড, যা শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বিকাশের জন্য একান্ত জরুরি।
– গরুর দুধে সোডিয়ামের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ০·৭৭ গ্রাম, যা মায়ের দুধের চার গুণেরও বেশি। ক্যালসিয়াম ০·৪ গুণ, পটাশিয়াম ৩ গুণ ও ফসফরাস প্রায় সাড়ে ৬ গুণেরও বেশি। শুধু প্রয়োজনীয় জিংক ছাড়া অন্যান্য খনিজ পদার্থ, যেমন ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি আছে বেশি মাত্রায়। এক বছরের কম বয়সী শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানো হলে এই অতিরিক্ত মাত্রার আমিষ ও খনিজ পদার্থ নিষ্কাশনে কিডনি বহু বিপত্তির সম্মুখীন হয়। গরুর দুধে অল্পবয়সী শিশুতে শোষিত হওয়ার মতো আয়রন কম পরিমাণে থাকে। ফলে এ বয়সে গরুর দুধ পানরত শিশু রক্তস্বল্পতার শিকার হয়।
– গরুর দুধে কমবয়সী শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ‘এ’ ও ‘সি’ ভিটামিন আছে কম মাত্রায়, আর কম মাত্রায় আছে ভিটামিন ‘ই’। শিশুকে মায়ের দুধ না দিলে গরুর দুধে নির্ভরশীল শিশুর ভিটামিনের স্বল্পতাজনিত অসুখ, যেমন রাতকানা, স্কার্ভি প্রভৃতি হতে পারে।
– মায়ের দুধে শিশুর জন্য রোগপ্রতিরোধক যে শক্তিকাঠামো মজুদ আছে, যেমন ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও লিউকোমাইট, ম্যাকোনেজ, নিউট্রোফিল, যা নেই গরুর দুধে। তাই গরুর দুধ পানে নির্ভরশীল শিশু সহজে রোগে আক্রান্ত হয়।

প্রণব কুমার চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, শিশুরোগ বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৯, ২০০৯