Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: mehnaz on January 02, 2012, 09:52:34 PM

Title: ইসলাম : নারী উন্নয়নের প্রবর্তক
Post by: mehnaz on January 02, 2012, 09:52:34 PM
ইসলাম নারী উন্নয়নের বিরোধী নয়, প্রবর্তক। নারীদের যখন কোনো অধিকার ছিল না, ইসলাম সে সময়ে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিশ্চিত করেছে।

ইসলামি অনুশাসনে নারী আলাদা সত্তা, যেমন পুরুষ। তার জন্ম-মৃত্যু, অস্তিত্ব, আদালতে-আখিরাতের হিসাব-নিকাশ এবং ইসলামি অনুশাসনের সব নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য। এটি নারীর মত প্রকাশের এখতিয়ার থেকে স্বামী বেছে নেয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। নিজস্ব সম্পত্তি রাখা থেকে হস্তান্তর ও ভোগ পর্যন্ত প্রলম্বিত। শুধু আচরণ বিধিটি শরিয়তসম্মত হওয়া জরুরি। শরিয়ত নারী-পুরুষের জন্য পৃথক নয়। ক্ষেত্র এবং দায়গত ফারাক ছাড়া ইসলাম মানবিক সত্তায় নারী-পুরুষ, ধর্ম-গোত্র, জাত-পাত স্বীকার করে না।

পৌত্তলিক ধর্ম বিশ্বাসে নারী অবমূল্যায়িত হয়। কখনো নারী এক ধরনের প্রাণী, কখনো এরা দেবী, কখনো দেবদাসী, আবার কখনো ঈশ্বরসৃষ্ট নরকের কীট। নীচ হীন এবং ভোগ্যপণ্যের মতো ভোগের সামগ্রী। জাতপাতে নিষ্পেষিত নারীসত্তা এমন এক ধরনের সৃষ্টি তার অস্পৃশ্যতায় ও ছলনার কারণে ঈশ্বরও তার চরিত্র বুঝতে অক্ষম। ইসলাম এসব কূধারণার শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলার কথা বলেছে।
পৌত্তলিক ধর্ম বিশ্বাস নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার দেয়নি। তাই কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা বা অভিভাবক যৌতুক, পণ বা উপঢৌকনের নামে এককালীন মোটা অঙ্কের দায়সহ মেয়েকে স্বামী দেবতার কাছে সঁপে দেন। ইসলামে এসব কুসংস্কার, ভ্রান্ত বিশ্বাসজনিত লোকাচার ও বিশ্বাসের কাছেও ঘেঁষতে দেয় না।

ইসলামে স্বীকৃত নারীর অধিকারগুলো ব্যাখ্যা করতে চাইলে বলা যায়¬,

ক. জন্মগতভাবে নারী-পুরুষ অভিন্ন এবং একই মর্যাদাসম্পন্ন মানব সত্তা।

খ. নর-নারীর শাস্তিত্ম এবং পুরস্কার আল্লাহর কাছে একই পাল্লায় বিবেচ্য।

গ. উভয়ের জন্য শিক্ষা ফরজ, জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্যের সুযোগ নেই।

ঘ. নর-নারী উভয়ই মত প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীন।

ঙ. নারীর অভিমত নেয়ার ক্ষেত্রে নারী বলে কোনো ধরনের পূর্বধারণা লালন করা যায় না।

চ. নাগরিক ও সামাজিক কাজে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পূর্ণ এবং শর্তহীন জীবনধারার নিশ্চয়তা রয়েছে।

ছ. নারীর নিজস্ব ব্যবসায়-বাণিজ্য করার অধিকার রয়েছে।

জ. একই ধরনের শ্রম ও কাজের জন্য একই মানের বেতন-ভাতা পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।

ঝ. নিজস্ব সম্পত্তির মালিকানার পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে।

ঞ. স্বামী হিসেবে কাউকে মেনে নেয়ায় নারী স্বাধীন এবং অভিমত তার দিক থেকে চূড়ান্ত বিবেচিত হবে।

ট. স্বামীর কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার নিশ্চয়তার আগে বাবার কাছ থেকে, কিংবা বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তা পাবে। এ ধরনের পারিবারিক নিশ্চয়তা না থাকলে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব বহন করবে।

ঠ. বিয়ের পর স্বামীর নামের লেজুড়বৃত্তি কোনো ইসলামি বিধান নয় বরং নারী সব সময় স্বনামেই পরিচিত হওয়ার পূর্ণ এখতিয়ার রাখে।

ড. কার্যকারণ থাকলে নারী স্ব-উদ্যোগে তালাক চাওয়ার অধিকার ও তালাক পাওয়ারও মহিলার পূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি রয়েছে।

ঢ. সন্তানের দায় পিতা বহন করতে বাধ্য, এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের পরও।

ণ. উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার পূর্ণ নিশ্চয়তা রয়েছে। একজন পুরুষ উত্তরাধিকার আইনে বাবা-মায়ের দিক থেকে অর্থসম্পদ পেতে পারেন, কিন্তু একজন নারী বাবা মায়ের দিক থেকে এবং স্বামী উভয় দিক থেকে উত্তরাধিকার বিধিসম্মত অর্থসম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন। এটি করুণা কিংবা দয়া নয়, নারীর স্বীকৃত ও প্রাপ্য অধিকার।

ত. ‘আদিপাপ’ বলে যে ধারণা কোনো কোনো সম্প্রদায় লালন করে এবং এর দায় নারীর ওপর আরোপ করে সে ক্ষেত্রে ইসলাম এমন কোনো ধারণাও স্থান দেয় না।

থ. দেনমোহর পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলেও নারী স্বামীর কাছ থেকে প্রতিশ্রুত দেনমোহরের পূর্ণ হকদার। রাসূল সাঃ-এর যুগে আরবে ‘দেনমোহর’ তথা স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রদেয় বাধ্যতামূলক অর্থসম্পদ দেয়ার প্রথা চালু ছিল। কিন্তু বিয়েতে নারীর সম্মতিকে প্রয়োজন বিবেচনা করা হতো না এবং দেনমোহর স্ত্রী অধিকার স্বীকৃত ছিল না। বরের প্রদত্ত অর্থসম্পদ মেয়ের অভিভাবকরা তথা পিতা, ভাই, চাচা, মামারা ভোগ করত।
রাসূলুল্লাহ সাঃ দেনমোহরকে বিয়ের শর্ত এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে প্রদত্ত অর্থসম্পদে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করে দিলেন। এর অর্থ ইসলামে পণ ও যৌতুক নামের কোনো জুলুম বা বাধ্যতামূলক দায়বদ্ধ রেওয়াজ বা প্রথার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, ইসলাম সাধারণভাবে পাঁচটি মৌলিক খাত থেকে সম্পদ অর্জন এবং মালিকানার শর্ত স্বীকার করে।

ক. শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থসম্পদ।
খ. শ্রমিক খাটিয়ে বা বিনিয়োগ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত অর্থসম্পদ।
গ. উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধনসম্পত্তি।
ঘ. রাষ্ট্র বা খেলাফতের প্রদত্ত মৌল চাহিদা তথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান প্রভৃতি পূরণের জন্য দেয় বা পাপ্য অর্থসম্পদ।
ঙ. দান, সাদাকা, উপহার, জাকাত বা অন্য কোনোভাবে পাওয়া পুরস্কৃত সহায়-সম্পদ ও অর্থ।

এই পাঁচটি মৌলিক খাতের সাথে শর্ত হচ্ছে দুটো,

১। শ্রম-মেধা অর্থসম্পদ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত নেয়ামত। বান্দা শুধু আমানতদার।
২। উপায়, উৎস ও প্রক্রিয়া বৈধ বা হালাল হতে হবে। ভালো কাজটি খারাপ পদ্ধতিতে, কিংবা খারাপ কাজ ভালো পদ্ধতিতে ও অবৈধ সম্পত্তির মালিক হওয়ার অবকাশ নেই। অন্যের সম্পদ জোর করে কিংবা বাধ্যগত শর্ত আরোপ করে আত্মসাৎ করার কোনো নিয়ম ইসলাম রাখেনি।

এই পাঁচটি খাতের মধ্যে সব ধরনের বৈধ পেশা এবং উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে। এর বাইরে একজন নারী আরেকটি বাড়তি খাত থেকে অর্থাৎ ষষ্ঠ খাত থেকে সহায়-সম্পদের ও অর্থবিত্তের মালিকানা অর্জন করতে পারে। সেটি ‘দেনমোহর’। এ ছাড়া স্বামীর পক্ষ থেকে নারীর সম্মান ও মর্যাদার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদত্ত অলঙ্কার, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও অর্থ।

নারীর পণ্যমান, পশ্চিমা বস্তুবাদী সংস্কৃতির কুপ্রভাব, আকাশ সংস্কৃতির কারণে যৌনাচার এখন সহজলভ্য। ভোগবাদ ও পুঁজিবাদের ধনিক ও বণিকতন্ত্র নারীকে উপভোগ্য করে বাজারজাত করছে। ফলে আমাদের বিশ্বাসের ফাটল দিয়ে, বেকারত্বের সুযোগে নারীসত্তার অবমূল্যায়ন অনেকগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এর ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করেছে ভোগবাদী-বস্তুবাদী মানসিকতা। এর প্রতিক্রিয়ায় আমাদের পরিবার প্রথার বন্ধন টুটে যাচ্ছে। নারী নির্যাতন, নিপীড়ন অজস্র গুণ বেড়ে গেছে। কোনো কোনো সুবিধাবাদী মুসলিম নামধারী কালো টাকার মালিক, অসৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থগৃধ্নুরা টাকার বিনিময়ে বর কিনছে। নিজস্ব কৌলীন্য প্রকাশের ধারায় স্বীয় কন্যার জন্য দু’হাতে অর্থবিত্ত খরচ করছে। উপঢৌকনের কথা বলে গাড়ি, বাড়ি, গয়না, চাকরি, সুযোগ-সুবিধা ধরিয়ে দিচ্ছে। উপরতলায় পরিবার প্রথার ভাঙন এবং নৈতিক স্খলন এখন উচ্চবিত্তের মাঝে এসব এক ধরনের বিকৃতি-বিকার। এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান অনেক বেশি মানবিক ও যুক্তিগ্রাহ্য।
Title: Re: ইসলাম : নারী উন্নয়নের প্রবর্তক
Post by: arefin on February 28, 2012, 10:17:44 PM
Jazakallahu khairan. Nice sharing