Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:47:07 AM

Title: শিশুর ডায়রিয়া ভালো হচ্ছে না!
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:47:07 AM
শিশুবয়সের ডায়রিয়ার প্রকৃতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবু এ অসুখে বিশ্বে বছরে প্রায় ২ দশমিক ২ মিলিয়ন শিশু মৃত্যুবরণ করে, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মোট মৃত্যুর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। ইদানীং ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু কমে এলেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একই রকম রয়ে গেছে।
প্রতিটি শিশু বছরে তিন-চারবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। হঠাৎ ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার মধ্যে ডায়রিয়া শুরু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠে। অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে ডায়রিয়া শুরু হওয়ার পর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বলা হয় সেটাকেই, যেটা হঠাৎ তীব্রভাবে শুরু হয়ে কমপক্ষে ১৪ দিন স্থায়ী হয়। ডায়রিয়াজনিত কারণে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তাদের ৩৬ থেকে ৫৪ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার কারণে ঘটে থাকে।

কেন দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হয়
অন্ত্রের সংক্রমণ থেকে তীব্র ডায়রিয়াজনিত অসুখ পরে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ায় রূপ নেয় বেশির ভাগ সময়। শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ায় অনেক অসংক্রামক কারণও আছে। তবে সারা বিশ্বে ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ হয় আমাশয়ের কারণে। বাংলাদেশেও প্রায় ২৩ শতাংশ সংক্রমণ সিজেলা ডিসেন্ট্রিতে ঘটে থাকে, যার উল্লেখযোগ্য অংশ পরে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ায় পরিণত হয়। এ ছাড়া তীব্র ডায়রিয়ার যথাযথ চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হতে পারে।

প্রাথমিক যত্ন-আত্তি
যেসব শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত অথচ মারাত্মক পানিস্বল্পতার শিকারে পরিণত হয়নি, সে ক্ষেত্রে খাওয়ার স্যালাইনের সাহায্যে পানিস্বল্পতা রোধ করতে হবে। কিন্তু তীব্র ডায়রিয়ার সঙ্গেঙ্গবমি থাকলে রিনগারস ল্যাকটেইন্টসহ পানিস্বল্পতা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ইলেকট্রোলাইটের তীব্র অসামঞ্জস্য, বিশেষ করে রক্তে পটাশিয়ামের স্বল্পমাত্রা ও মারাত্মক পানিস্বল্পতা থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
অপুষ্ট ও দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার শিশুরোগীর প্রায় অর্ধেকেরই বিভিন্ন রকম প্রদাহ হয়ে থাকে। সে রকম কিছু হলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। প্রয়োজনে রক্তের কালচার রিপোর্ট পাওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শুরু করতে হবে। এ ছাড়া ওআরএস স্যালাইন বেশ মানানসই। প্রয়োজনে কম অসমোলালিটির মুখে খাওয়ার পানিস্বল্পতার স্যালাইন দিতে হবে।

খাবার খাওয়ানোঃ দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হওয়া বেশির ভাগ শিশুই ল্যাকটোজ গ্রহণ করতে পারে। ল্যাকটোজ গ্রহণের মাত্রা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি হলেই কেবল পায়খানার হার খুব বেশি বেড়ে যায় এবং চিকিৎসা সফল হয় না। এ ছাড়া ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুকে খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে প্রয়োজন অনুযায়ী। এ ছাড়া গরুর দুধের বদলে অন্য কোনো দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টর জোগাতে হবে শরীরে।
বারবার ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকিগুলো অপসারণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বুকের দুধ পান করানো, বুকের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাবারে অভ্যস্ত করানো। শিশুর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন সব সময়।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
* জন্মের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে প্রথম ও একমাত্র খাবার হিসেবে শুধু মায়ের দুধ পান করাতে হবে এবং শিশুর ছয় মাস সময় পর্যন্ত কেবল বুকের দুধই খাওয়াতে হবে।
* ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক স্বাভাবিক খাবার, যেমন-খিচুড়িতে শিশুকে অভ্যস্ত করাতে হবে। খাবার তৈরি ও পরিবেশনা যেন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* ডায়রিয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তার যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যেমন শরীরে পানিস্বল্পতা প্রতিরোধে ওআরএস স্যালাইন, জিংক ও বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। সঙ্গে বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক খাবারও চালিয়ে যেতে হবে।
* শিশুকে বোতলে বা ফিডারে করে প্যাকেটজাত বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।
* শিশুর খাওয়া ও ব্যবহারের জন্য নিরাপদ পানির সংস্থান নিশ্চিত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে খাবার তৈরি ও পরিবেশন, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, পয়োনিষ্কাশন প্রভৃতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও জরুরি।

ডা· প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০০৯