Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:52:37 AM

Title: শিশুর খাদ্যে ভিটামিন ‘এ’র গুরুত্ব
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:52:37 AM
শিশুর জীবনে এক থেকে পাঁচ বছর বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় থেকেই শিশুর খাবার গ্রহণ ও বর্জনের বিষয়টি রপ্ত হয়ে যায়। খাদ্যে ভিটামিন ‘এ’র অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। শিশুর প্রতিদিনের আহারে এই ভিটামিন থাকাটা অপরিহার্য। আমাদের দেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ভিটামিন ‘এ’র অভাবে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভিটামিন ‘এ’ সাধারণ প্রাণিজ চর্বিতে পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় ক্যারোটিন হিসেবে শাকসবজিতে। ক্ষুদ্রান্তে ভিটামিন ‘এ’ শোষিত হয় চর্বির সঙ্গেই। এ কারণে যেসব রোগে দেহে চর্বি শোষণে বিঘ্ন ঘটে, এর ফলে এই ভিটামিনটির শোষণও বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নবজাতকের যকৃতে কতখানি এই ভিটামিন সঞ্চিত থাকবে, তা নির্ভর করে মায়ের রক্তে কতখানি ভিটামিন ‘এ’ ছিল তার ওপর। তাই গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ চলাকালীন মায়ের খাদ্যের গুণাগুণ শিশুর বৃদ্ধির হারের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবার জন্য রঙিন ও সবুজ শাকসবজি এবং শিশুদের জন্য দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল সবই যাতে থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ দৈনিক প্রয়োজন ২৫০০ আইইউ। রান্নায় ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হয় না। তবে ফ্রিজে জমিয়ে রাখা ঘি-মাখনে কিছুটা খাদ্যগুণ নষ্ট হয়। সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে বলেই যেসব গরুকে সবুজ ও টাটকা ঘাস খাওয়ানো হয় না, তাদের দুধে ‘এ’ ভিটামিনের অভাব দেখা যায়। ভিটামিন ‘এ’র অভাবে তিন ধরনের চক্ষুরোগ দেখা দিতে পারে। ১· রাতকানা ২· চক্ষুশুষ্কতা ৩· ক্যারাটোম্যালেসিয়া।

রাতকানাঃ এই রোগে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা চোখে কিছুই দেখে না। ভালো হতে পারে নিয়মিত কলিজা খাওয়ালে। তবে সময়মতো নির্ণয় না হলে পর্যাপ্ত ভিটামিন দিয়েও কোনো কাজ হয় না।

চক্ষুশুষ্কতাঃ এতে চোখের মণিতে ঘা, চোখে পুঁজ, সজীবতাহীন এবং চোখের আবরক-কলা শুকিয়ে যায়। চোখের উজ্জ্বলভাব নষ্ট হয়ে যায় এবং চোখের মণি সাদা হয়ে যায়। প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়। গুরুত্ব অনুসারে ভিটামিন ‘এ’ ট্যাবলেটের সঙ্গে কডলিভার অয়েল, ঘি, মাখন, গাজর ইত্যাদি দিলে ভালো হয়।

ক্যারাটোম্যালেসিয়াঃ দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের এ রোগ দেখা যায়। এতে চোখের ভেজা ও সজীব ভাব চলে গিয়ে চোখ শুকনো ও বিবর্ণ হয়ে যায়। চোখ ধোঁয়াটে দেখায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে চোখের মণি অস্বচ্ছ পর্দায় ভরে ওঠে ও স্থানে স্থানে ক্ষত দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিহীনতা ঘটে। চোখের রোগ ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’র অভাবে নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন-দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে সর্দি, কাশি, ফ্লু লেগেই থাকে। দেহের ত্বক শুকনো ও খসখসে হয়ে যায়।

ভিটামিন ‘এ’র উৎসঃ গাজর, ভুট্টা, আপেল, পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কলা, রাঙা আলু, মিষ্টিকুমড়া, সবুজ শাকসবজি, যেমন-পালংশাক, লেটুস, বাঁধাকপি, টমেটো, শজিনাপাতা ইত্যাদি। প্রাণিজ উৎসের মধ্যে মলা ও ঢেলা মাছে ভিটামিন ‘এ’ পর্যাপ্ত রয়েছে। এ ছাড়া মাখন, ডিম, কডলিভার অয়েল, ইলিশ মাছ, গরু-খাসি ও মুরগির কলিজা, ঘি, দুধ প্রভৃতিতে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। ছোট মাছ ও কালো কচুর শাক, পালংশাক, আমলকী, পেয়ারা, লালশাক, মুলাশাক এসব খাবার থেকে স্বল্প খরচে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।

আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২০, ২০০৮