Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:55:29 AM

Title: ১ নভেম্বর জাতীয় কৃমিনিয়ন্ত্রণ দিবস – শিশু থ
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:55:29 AM
শিশুদের পুষ্টিহীনতার জন্য কৃমি অনেকাংশে দায়ী। পুষ্টিহীনতা আজ বিশ্বজুড়ে আলোচিত বিষয়। আমাদের দেশেও গ্রামাঞ্চল ও শহরের বস্তিতে অধিকাংশ শিশু পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত। শুধু আর্থিক দৈন্য ও পুষ্টিকর খাবারের অভাব নয়, বরং ক্রমাগত কৃমির সংক্রমণ তাদের স্বাস্থ্যহানির অন্যতম কারণ। তাই শিশুর স্বাস্থ্য সবল রাখতে হলে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি কৃমিতে যেন তাদের স্বাস্থ্যহানি না ঘটে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে ১ নভেম্বর সারা দেশে জাতীয় কৃমিনিয়ন্ত্রণ দিবস পালিত হবে। এদিন ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী সব শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা (কৃমিনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম) এ কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা।

কৃমির ক্ষতিকর প্রভাব
বিভিন্ন জাতের কৃমি শিশুদের শরীরে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শিশুদের খাওয়ায় অরুচি, আয়রনের ঘাটতি ও রক্তশূন্যতার জন্য প্রধানত কৃমি দায়ী। এর ফলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং তারা অপুষ্টিতে ভোগে। কৃমিতে সবচেয়ে বেশি হয় পেটের সমস্যা।
শিশুদের পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদির অন্যতম কারণ কৃমি। কৃমির কারণে অ্যালার্জি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, কফ-কাশি হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের কৃমি, বিশেষ করে গোল কৃমি পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয় ও অ্যাপেনডিক্সে অবস্থান নিয়ে সংক্রমণ ঘটায় এবং তীব্র ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করে। শরীরের নানা অঙ্গে কৃমি মরে গিয়ে পাথর জমার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। কিছু কৃমি যকৃৎ ও চোখের ক্ষতি করে।
কৃমির কারণে শরীরে ভিটামিন-এ কম শোষিত হয়, ফলে ভিটামিন-এর অভাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ত্বকের, অন্ত্রের ও চোখের ক্ষতি হয়। বিপুলসংখ্যক কৃমি একসঙ্গে জমাট বেঁধে অন্ত্রের নালি বন্ধও করে দিতে পারে।

কৃমি প্রতিরোধ ও প্রতিকার
কৃমির মাধ্যমে শিশুর অনেক ক্ষতি হলেও একটু সচেতন হলে কৃমি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি-
–খাওয়ার আগে ও পায়খানা থেকে আসার পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধুতে হবে।
–যেখানে-সেখানে মল ত্যাগ করা যাবে না।
–শিশুদের হাত ও পায়ের নখ ছোট রাখতে হবে।
–শিশুদের মলমূত্র যেখানে-সেখানে ফেলে না রেখে তা উঠিয়ে পায়খানায় ফেলতে হবে।
–শিশুদের মলমূত্র পরিষ্কারের পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
–স্বাস্থ্যসম্মত চারদিক ঘেরা এবং পানি বের হয় না এমন পায়খানা ব্যবহার করতে হবে।
–রান্নার আগে শাকসবজি ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী ভালোভাবে ধুতে হবে।
–রান্নার পাতিল ও থালা-বাসন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
–খাবারে যাতে মাছি বসতে না পারে সে জন্য সব সময় ঢেকে রাখতে হবে।
–মাংস, বিশেষ করে গরুর মাংস পুরোপুরি সেদ্ধ করতে হবে।
–পায়খানায় যাওয়ার সময় অবশ্যই শিশুদের স্যান্ডেল পরানোর অভ্যাস করতে হবে।
–গৃহপালিত কুকুর ও বিড়ালকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ দিতে হবে।
–দুই বছর বয়সের পর প্রত্যেক শিশুকে প্রতি ছয় মাস অন্তর নিয়মিত কৃমির ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।

এসব নিয়ম যেন সবাই মানে সে জন্য সমগ্র দেশে, বিশেষ করে গ্রামে ও শহরের বস্তি এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো জরুরি। স্কুলের ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মলমূত্র ত্যাগ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে শিক্ষা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর মানসিক বিকাশও ব্যাহত হয়।
আর আমাদের মতো দরিদ্র দেশে শিশুরা এমনিতেই পর্যাপ্ত খাবার পায় না, তাই গৃহীত খাদ্যের একটা অংশ কৃমির কারণে অপচয় হলে তা শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। সুতরাং শিশুরা যেন কৃমির কারণে অপুষ্টিতে না ভোগে, সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার পরিকল্পনা সেবিকাদের পাশাপাশি মা-বাবাকেও হতে হবে আরও সচেতন।

ডা· আবু সাঈদ শিমুল
চিকিৎসা কর্মকর্তা
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স, চট্টগ্রাম
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৯, ২০০৮