Daffodil International University
Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:56:02 AM
-
আট বছর বয়সী মেয়ে আছমা (কাল্পনিক নাম)। তাকে নিয়ে তার মায়ের সারাক্ষণ কান্নাকাটি। একটিই মাত্র সন্তান। রোগ সারে না। বারবার গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে যায়। বারবার বুকে কফ বসে যাওয়ার সিরাপ খায়। ঘন ঘন শ্বাস নিলে হাঁপানির ওষুধ খায়।
বুক ধড়ফড় করে। আছমার মা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ঢাকায় বড় ডাক্তার দেখেছেন। বলাবলি করতে শুনেছি, আমার মেয়ের হার্ট নাকি কানা। চিকিৎসক ঠিক বলেছেন। আসলে আছমার হৃৎপিণ্ডে জন্মগতভাবেই ছিদ্র রয়েছে। জন্মেই তার হৃদয় কানা।’ হৃৎপিণ্ডে ফুটো হওয়া মানেই জন্মগত হৃদরোগ।
একটি হৃৎপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ। দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়। জন্মগতভাবে দুটো অলিন্দের মধ্যে ছিদ্র হতে পারে, যাকে বলা হয় ‘আন্ত-অলিন্দ ছিদ্র’ (এএসডি); আবার দুটো নিলয়ের মধ্যেও ছিদ্র থাকতে পারে, যাকে বলা হয় ‘আন্তনিলয় ছিদ্র’ (ভিএসডি)।
সাধারণত এ দেয়ালগুলোয় কোনো ছিদ্র থাকে না। দেখা গেছে, সারা পৃথিবীতে এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ছয় থেকে আটজনেরই হৃৎপিণ্ডে জন্মগত ছিদ্র থাকে। এবং এ রোগ নিয়েই ভুগতে থাকে।
যেসব শিশু হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র নিয়ে জন্মায়, তাদের কোনো ধরনের অনিয়ম ছাড়াই কদিন পরপর বুকে কফ থাকে। ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে। দেখা যায়, প্রতি মিনিটে ৫০-৬০ বার শ্বাস নেয়। একটু পরিশ্রম করলেই শিশুর সারা শরীর নীলাভ হয়ে যায়। বুক ধড়ফড় করে। বুকের বাঁ দিকের খাঁচা বড় হয়। কখনো যকৃৎ বড় হয় এবং শক্ত থাকে। শিশু অতিরিক্ত ঘামে। দৈহিক বৃদ্ধি হয় না।
কখনো আবার পরীক্ষা করে দেখা যায়, জন্মগত ছিদ্র ছাড়াও অন্যান্য ত্রুটি রয়েছে। এ ছিদ্র হওয়ার কারণ একাধিক। কারও কারও মতে, সন্তানধারণের সময় মায়ের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়ে থাকলে এ সমস্যা হতে পারে। মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে কিংবা পাহাড়ি এলাকায় বাস করলে কিংবা ঋতুচক্রের শেষ দিকে গর্ভধারণ হলে এ ধরনের ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্ম নেয়।
গর্ভাবস্থায় কিছু ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন-হাম, রুবেলা, মাম্পস, জলবসন্ত প্রভৃতি রোগে যদি মায়েরা ভোগেন, তাহলে হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র নিয়ে শিশুর জন্ম হতে পারে। কখনো কখনো গর্ভাবস্থায় মায়েরা যদি স্টেরয়েড ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ বা থ্যালিডোমাইড-জাতীয় ওষুধ খান, তাহলেও শিশু হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
কখনো দেখা যায়, কোনো মা প্রথমবার হৃৎপিণ্ডে ত্রুটি নিয়ে শিশুর জন্ম দিলে দ্বিতীয়বার সে রকম ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি মাত্র চার-পাঁচ ভাগ।
কিন্তু দ্বিতীয়বারও শিশুর এ সমস্যা থাকলে তৃতীয়বার তা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২২ থেকে ২৫ ভাগ। অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা বুকে স্টেথিসকোপ লাগিয়েই বুঝতে পারেন, শিশুর হৃৎপিণ্ডে কী ধরনের জন্মগত ছিদ্র। এর পরও বুকের এক্স-রে, ইসিজি, ইকো, রক্ত পরীক্ষা করে সহজেই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
শিশু হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র নিয়ে চলাফেরা করতে পারে। যদি শিশুর কোনো ধরনের সমস্যা না দেখা দেয় বা শরীর নীল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা না হয় বা শ্বাসকষ্ট না থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শেই তা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। শিশু একটু বড় হলে বা এমনিতেই ছিদ্র বন্ধ না হলে তখন চিকিৎসা করাতে হবে। না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই অনেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে সর্দি-কাশিরও চিকিৎসা করাতে হবে।
কিন্তু ছিদ্র যদি বড় থাকে কিংবা বন্ধ না হয় বা নানা ধরনের বড় সমস্যা দেখা দেয় বা শিশুর বৃদ্ধি ক্রমশ ব্যাহত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে ছিদ্রে ‘বেলুন ভালভো প্লাস্টি’ বা অন্যান্য অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে তা বন্ধ করতে হবে। সাধারণত ৩০-৪০ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের এ ছিদ্র আপনাআপনি সেরে যায়। কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। তবু সতর্ক থাকাটা ভালো।
ডা· এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৯, ২০০৮