Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:57:57 AM

Title: শিশুরা বিষাক্ত কিছু খেলে কী করবেন
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 07:57:57 AM
ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান মামুন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র কনসালটেন্ট, নিবেদিতা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা

এক থেকে চার বছর বয়সের শিশুরা হঠাৎ বিষাক্ত কিছু খেতে পারে। এ ছাড়া কিশোরেরাও হঠাৎ করে বা ইচ্ছা করেও বিষাক্ত জিনিস, যেমন ওষুধ−ঘুমের বড়ি, জ্বরের বড়ি বা সিরাপ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, আয়রন ট্যাবলেট, লেড বা দস্তা, কীটনাশক ইত্যাদি, এমনকি কেরোসিনও খেতে পারে। ভুল করে হোক বা ইচ্ছা করে, বিষাক্ত কিছু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক বা নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে আসা উচিত।

শরীরের রক্তে ওষুধ বা বিষাক্ত জিনিস পৌঁছানোর আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

ব্যবহৃত ওষুধ বা বিষাক্ত কীটনাশক খাওয়ার দুই থেকে চার ঘন্টা পর প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে বোঝা যায়। যেমন−কিছুক্ষণ আগে সুস্থ সোনামণি যদি অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা ঘুম ঘুম ভাব আসে, অচেতনতা, খিঁচুনি, মুখে ফেনা আসা, নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি হঠাৎ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া প্রলাপ বকা, শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন শ্বাস নিতে দেখা যাবে।
রক্ত পরীক্ষায় বিভিন্ন পদার্থ কমবেশি পাওয়া যাবে। চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে রোগী আনার সময় ওই বিষাক্ত ওষুধ বা প্যাকেট সঙ্গে আনতে হবে।

কী কী দেখতে হবে
ভালো করে রোগীদের পরীক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে শরীরে ওষুধের কোনো প্রতিক্রিয়া যেন না থাকে। যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় রাখা যাবে। আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে−যেমন বমি বা বমি বমি ভাব, ঘন ঘন শ্বাস, গায়ের রং বদলে ফ্যাকাসে বা নীল হওয়া, জ্বর, শরীর ও মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ঝিমানো, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে। লক্ষ করতে হবে, শিশু বা কিশোরের মুখ থেকে কোনোরূপ গন্ধ আসছে কি না, চোখের মণি ছোট বা বড় হয়েছে কি না। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাকশন বা পাকস্থলী পরিষ্কার করলে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সাকশন দেখা যাবে না।

* যদি ওষুধ খাওয়ার চার ঘন্টা পর আসে। কিন্তু ব্যতিক্রম অ্যাসপ্রিন, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট লমোটিল ইত্যাদি পরে এলেও সাকশন বা পাকস্থলী পরিষ্কার করা যাবে।
* এসিডজাতীয় দ্রব্য, যা খাদ্যনালি পুড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে।
* কেরোসিন, পেট্রল, প্যারাফিন, তারপিনজাতীয় দ্রব্য, যা ফুসফুসে গিয়ে রাসায়নিক নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
* রোগী অজ্ঞান অবস্থায় থাকলে দক্ষ অ্যানেসথেটিস্ট দিয়ে শ্বাসনালিতে নল ঢুকিয়ে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করে পাকস্থলী পরিষ্কার করতে হবে।

প্রতিরোধ
* নিজেদের ব্যবহৃত ওষুধ এবং বিষাক্ত ওষুধ, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা।
* শিশুদের কাছে খাওয়ার ওষুধকে মিষ্টি বা চকোলেটের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। এতে তারা বিভ্রান্ত হবে এবং চকোলেট মনে করে ওষুধ খাবে।
* শিশুদের ঘরে ওষুধ রাখা যাবে না।
* ওষুধের কোটা বা বক্স ভালো করে বন্ধ রাখতে হবে, যেন খুলতে না পারে।
* জুস বা পানীয়র বোতল অথবা যা শিশুদের আকৃষ্ট করে, এমন স্থানে ওষুধ বা বিষাক্ত কিছু রাখা উচিত নয়। এমনকি জ্বরের সিরাপের বোতলে বিষাক্ত ওষুধ, ডেটল, স্যাভলন রাখা যাবে না।
* লেড বা দস্তার বিষাক্ত ক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখার জন্য লেড পাইপ, লেড মিশ্রিত রং, সুরমা, দূষিত বাষ্প ইত্যাদি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। শিশুরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বিষাক্ত কিছু খেলে দেরি না করে আপনার চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে আসবেন। আপনার অবহেলার কারণে আদরের সন্তানটি যেন হারাতে না হয়।

সূত্রঃ প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০০৮