Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 08:03:28 AM

Title: অলস চোখ থেকে শিশুর অন্ধত্ব
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 08:03:28 AM
আমাদের চোখ কোনো জিনিসের ছবি তুলে স্মায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক তখন বলে দেয় এটা কিসের বা কার ছবি বা এটির রং, আকৃতি কেমন। যদি এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে বুঝতে হবে, চোখে সমস্যা আছে। অলস চোখ বা এমব্লায়োওপিয়া চোখের একটি মারাত্মক রোগ, যা প্রধানত শিশুর চোখের ছবি গ্রহণের ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। ফলে শিশুটি ওই চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পায় না। যদি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে শিশুটির দৃষ্টিশক্তি আর কখনোই ফিরে আসে না।

অলস চোখ কী
চোখের সবচেয়ে ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ আবরণটির নাম হচ্ছে রেটিনা। এটি আলোক সংবেদনশীল কিছু কোষ দিয়ে গঠিত। আমরা যা কিছুই দেখি না কেন, তার একটি ছবি রেটিনায় তৈরি হয়। রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো শিশুর জ্নের পর চোখে আলো ঢুকে সেই আলোর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। জ্নের পর যদি চোখে ঠিকমতো আলো না ঢোকে, তাহলে রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি পরিপূর্ণভাবে হয় না। ফলে ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং কাজ না করার কারণে সেটি অলস চোখে পরিণত হয়।

কারণ
এ রোগের প্রধান ও একমাত্র কারণ হচ্ছে শিশুর চোখে ঠিকমতো আলো প্রবেশ করতে না পারা। আলো প্রবেশ না করার কারণ হলো-

– জ্ন থেকে বা জ্নের পর শিশুর চোখে ছানি হলে। ছানির কারণে চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে যায়, ফলে চোখে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে না। ফলে রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি হয় না। যে চোখে ছানি আসে, শিশু তাকে কাজে লাগায় না, ফলে চোখটি অলস হয়ে যায়। দুই চোখে ছানি হলে দুটিই অলস হয়ে যায়।

– জ্ন থেকে অথবা জ্নের পর চোখের আকৃতিগত পরিবর্তনের কারণে দৃষ্টিশক্তি কম থাকে। ফলে আলো ঢুকতে বাধা পায়। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে ধীরে ধীরে চোখ অলস হতে থাকে।

– টেরা চোখা মানুষ সব সময় দুটি চোখ দিয়ে একটি জিনিস দেখে, কিন্তু চোখ টেরা থাকলে শিশু ভালো চোখটি দিয়ে সব সময় দেখার চেষ্টা করে, টেরা চোখটি কাজে লাগায় না। ফলে টেরা চোখটি অলস হয়ে যায়।

–জ্নগতভাবে চোখের পাতা নিচের দিকে পড়ে গেলে চোখের যে স্বচ্ছ অংশ (কর্নিয়া) দিয়ে আলো প্রবেশ করে, তা যদি ঢেকে যায়, তাহলে পর্যাপ্ত আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি হয় না এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। যে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, শিশুরা সেটিকে ব্যবহার না করে সব সময় ভালো চোখটি ব্যবহার করে; ফলে অন্যটি অলস চোখে পরিণত হয়।

যেসব সমস্যা হয়
– অলস লোকের যেমন কোনো কাজ থাকে না, তেমনি অলস চোখেরও কাজ থাকে না। অলস চোখের কারণে সৃষ্ট প্রধান সমস্যা হচ্ছে টেরা চোখ।

টেরা চোখঃ চোখ টেরা হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অলস চোখ। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ফলে যে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে, শিশু সেটি ব্যবহার করে না। ফলে সে চোখটি যেকোনো এক দিকে বেঁকে যায়। নির্দিষ্ট একটি বয়সসীমার মধ্যে চিকিৎসার মাধ্যমে অলস চোখটি সচল করে তুললে টেরা চোখ ভালো হয়ে যায়।

চিকিৎসা
– যে কারণগুলোর জন্য চোখ অলস হয়, সেগুলোর চিকিৎসা করালে অলস চোখ ভালো করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাত বছরের কম বয়সী শিশুকে চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ সুস্থ হয় ওঠে।

– জ্নগতভাবে যদি শিশুর চোখে ছানি থাকে, তাহলে দ্রুত ছানির অপারেশন করাতে হবে। বয়স সাত বছর পেরিয়ে গেলে অপারেশন করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। ধরা যাক, পাঁচ বছর বয়সের একটি শিশুর জ্নগত ছানি অপারেশন করে চোখে নতুন লেন্স লাগিয়ে দেওয়া হলো, তার পরও সে ভালো দেখছে না। এর কারণ হলো-তার চোখটি অলস হয়ে গেছে। তখন তার ভালো চোখটি কাপড় দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়। অলস চোখটিকে দিয়ে বেশি করে কাজ করানো হয়। বেশি কাজ করানোর জন্য চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

– জ্নগতভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে খুব দ্রুত চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা ব্যবহার করতে হবে। যদি চশমা দিয়েও কাজ না হয়, তাহলে বিশেষ ধরনের চোখের ব্যায়াম (অ্যাকুলেশন থেরাপি) করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। অর্থাৎ যে চোখটি ভালো আছে, তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে অলস চোখটিকে দিয়ে কাজ করানো হয়। ফলে অলস চোখটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

প্রতিরোধ
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে, শিশু কিছু বুঝে ওঠার আগেই অলস চোখ তার দৃষ্টিশক্তিকে চিরতরে নষ্ট করে দেয়। কারণ, অলস চোখের চিকিৎসা সাত বছরের নিচে থাকলেই করা সম্ভব। এ বয়সসীমার মধ্যে রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর বৃদ্ধি ঘটে। এ জন্য অভিভাবকের উচিত, শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে একবারের জন্য হলেও চোখের ডাক্তার দেখানো; বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে শিশুদের চোখ দেখার আলাদা ব্যবস্থা আছে।

—————-
ডা· শীতেস চন্দ্র ব্যানার্জী
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু চক্ষুরোগ বিভাগ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, খুলনা
প্রথম আলো, ৪ জুন ২০০৮